আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন: আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশের কিছু সন্তান বাংলাদেশের অর্জনে খুশী হতে পারেন না। সবসময়ই দেশের নেতিবাচক দিক খোঁজেন, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন। দেশের অমঙ্গল কামনা করেন। দেশের দুর্নাম করে নিজেকে ‘জাতের মানুষ’ হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করেন। নিজে যততত্র ময়লা ফেলে সিঙ্গাপুরের মত ক্লিন কান্ট্রি চান। প্রতিনিয়ত আইন ও শিষ্ঠাচার ভঙ্গ করে আইনের শাসন, সামাজিক মূল্যবোধ চান।
অদ্ভুত জাতি আমরা। এই আমরা ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছি। ভাত, কাপড়, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম করেছি। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী পরিমাণ রক্ত ও নারী সম্ভ্রম বিসর্জন দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমাদের দেশপ্রেম অনেক বেশী শাণিত ও অর্থবহ হওয়ার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না।
মানি, আমাদের প্রতিটি সংগ্রাম কালেই ধর্ম ও নানাবিধ অজুহাত তুলে কতিপয় বাঙালি মূল স্রোতের বিরোধিতা করেছেন। আরবী হরফে বাংলা লিখা অথবা মুসলিম উম্মাহর জন্য অখণ্ড পাকিস্তানের জন্য মরিয়া ছিলেন। কিন্তু তারা সংখ্যায় কম ছিলেন এবং তারা স্বাধীন দেশে আগের চেয়ে অনেক অনেক ভাল আছেন। তাদের অধিকাংশই মৃত্যুবরণ করেছেন। এরপরও স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আমরা সবাই দেশটাকে আপন মা’র মত করে ভালোবাসতে পারছি না।
গণতান্ত্রিক সমাজে সরকার আসবে, সরকার যাবে। সরকার কোন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয়।কোন সরকারের আমলে কোন সফলতা আসলে সেটি দেশের প্রাপ্তি। ব্যর্থতা আসলে সেটিও দেশের জন্য অমঙ্গলের। দেশের সফলতায় অনেকে কেন আনন্দিত হতে পারেন না এটি বোধগম্য নয়। ব্যর্থতায় কষ্ট না পেয়ে অনেকেই পৈশাচিক সুখানুভূতি পান। এটা কেন ?
তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। জনগণের কষ্ট হচ্ছে এবং হবে এটা সরকারও জানে। আপনারা কষ্ট পাচ্ছেন। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া একটি সরকার বা রাজনৈতিক দলের জন্য মঙ্লজনক ও সুখকর নয়। ভোটের রাজনীতিতে এই সিদ্ধান্তের মাশুল কত বেশী দিতে হবে তা আওয়ামী লীগ জানে। এই অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমা প্রার্থী। কিন্তু ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়- এই মহৎ শিক্ষা আমাদের মহান শিক্ষক জাতির পিতা আমাদের দিয়ে গেছেন।
বর্তমান টালমাটাল বিশ্ব বাস্তবতায় এই কঠোর ও অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমরা বাধ্য হয়েছি। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি যেন বিপদে না পড়ে, যেন দেশের আপামর জনগণ অধিক কষ্টের মধ্যে নিপতীত না হন। এজন্য এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে সরকার বাধ্য হয়েছে।
এখন ইন্টারনেটের যুগ। বিশ্ব আপনার হাতের মুঠোয়। দয়া করে বিশ্বের দিকে চোখ প্রসারিত করুন। অন্যান্য দেশের দিকে তাকান। আমাদের চেয়ে ক্রয় ক্ষমতা বেশি এবং কম উভয় রকমের দেশের দিকে তাকান। তাদের তেলের মূল্য বিবেচনা করুন। আপনার হৃদয়ের উত্তাপ ও রক্তক্ষরণ কিছুটা প্রশমন হবে। বাস্তবতা আমাদের মানতেই হয়।
ব্যবস্থাটি সাময়িক। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমছে। কিন্তু হলফ করে বলা সম্ভব নয় যে, এর ধারাবাহিকতা থাকবে। আজকের বিশ্ব বাজারের তেলের মূল্যের চেয়ে এখোনো আমাদের দাম কম। আল্লাহর রহমতে বিশ্ব বাজারে কমে আসলে আমাদের দেশেও কমানো হবে। গরীব ও মধ্যবিত্তের যেন কষ্ট না হয় সেজন্য বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
এক চরম দুঃসময় বিশ্ব মানবতা অতিক্রম করছে। বাঙালির আপন প্রধানমন্ত্রী, উন্নয়ন, মানবসেবা, দারিদ্র্য বিমোচনে বিশ্বের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আমাদের দেশটাকে বিশ্ব আগুনের আঁচ থেকে রক্ষার জন্য বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। অনুগ্রহ করে ধৈর্য্য ও সহনশীলতার সঙ্গে সবাই মিলে নিজের কাজের পাশাপাশি দেশের জন্য কাজ করি।
আমরা শ্রীলঙ্কা হব না, বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে আপন গতিতে এগিয়েই চলবে। জয় বাংলা।
(লেখক জাতীয় সংসদের হুইপ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।