বিনোদন ডেস্ক : তিনি যা বানিয়েছেন, সবটাই হিট। গত ক’বছর ধরে প্রেক্ষাগৃহ আর ওটিটি, গল্প দিয়ে দু’হাতে কব্জা করেছেন তরুণ নির্মাতা রায়হান রাফী। সেই নির্মাতাই প্রথমবার আটকা পড়লেন সেন্সর বোর্ডের জালে। আটকে গেলো তার ওয়েব সিনেমা ‘অমীমাংসিত’।
২৪ এপ্রিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড থেকে চূড়ান্ত রায় জানানো হলো, ছবিটি দর্শকদের সামনে প্রদর্শনযোগ্য নয়। তবে ৩০ দিনের মধ্যে আপিলের সুযোগ রয়েছে।
প্রায় দুই মাস সেন্সর বোর্ডে আটকে থাকার পর এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্ত পেয়ে ফুঁসে উঠেছে চলচ্চিত্রাঙ্গন। বেশিরভাগই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এখন থেকে ফুল, পাখি আর লতা-পাতা নিয়ে সিনেমা বানাতে হবে। না হলে আটকে যাবে সেন্সরের জালে।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ‘অমীমাংসিত’ নির্মাতা রায়হান রাফী। সেন্সর বোর্ডের এমন সিদ্ধান্তের বিপরীতে তার ভাষ্য, ‘বিষয়টি এমন হলো, আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে! এখানে কোনও খুন হয় না, কোনও গুম হয় না, কোনও ধর্ষণ হয় না।’
রাফীর ভাষায়, ‘সিনেমা বাস্তবের সাথে মিলে গেছে, তাই এটা মুক্তি দেওয়া যাবে না! সিনেমা হতে হবে অবাস্তব! বিষয়টা তাহলে এমন, কোনও সিনেমায় কোনও সাংবাদিক দম্পতি খুন হতে পারবে না? কাল্পনিক কাহিনি উল্লেখ করার পরেও যদি কোনও ঘটনার সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে ব্যাপারটা এমন, ঠাকুর ঘরে কে রে? আমি কলা খাই না টাইপ।’
এই নির্মাতার প্রশ্ন, ‘তাহলে কি সিনেমায় কোনও মেয়ে গুম হয়ে খুন হলে তা কুমিল্লার তনুর সাথে মেলানো হবে? সিনেমায় কোনও কিশোরের লাশ নদীতে পাওয়া গেলে তার সাথে নারায়ণগঞ্জের ত্বকী হত্যাকাণ্ডকে মেলানো হবে?’
নির্মাতার দাবি, ‘অমীমাংসিত’ সিনেমায় কোনও বাস্তব ঘটনার কিছুই প্রমাণ করা হয়নি।
রাফী বলেন, ‘সিনেমায় কোনও খুন দেখানো যাবে না, কোনও ধর্ষণ দেখানো যাবে না, কোনও অপহরণ দেখানো যাবে না, কোনও গুম দেখানো যাবে না। আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে। এখানে কোনও খুন হয় না, কোনও গুম হয় না, কোনও ধর্ষণ হয় না। এভাবেই হাত পা বেঁধে সাঁতার কাটতে হবে আমাদের দেশের সিনেমাকে।’
২৪ এপ্রিল সেন্সর বোর্ডের উপপরিচালক মো. মঈনউদ্দীন স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয় ‘অমীমাংসিত’ ছাড়পত্র না দেওয়ার পেছনের চারটি উল্লেখযোগ্য কারণ। সেগুলো হলো—
১. চলচ্চিত্রটিতে নৃশংস খুনের দৃশ্য রয়েছে।
২. কাল্পনিক কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপের বিষয়বস্তু বাস্তবতার সঙ্গে মিল রয়েছে।
৩. এ ধরনের কাহিনি বাস্তবে ঘটেছে এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন।
৪. চলচ্চিত্রটির কাহিনি/বিষয়বস্তু বিচারাধীন মামলার সঙ্গে মিল থাকায় ভুল বার্তা দিতে পারে এবং তদন্তে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
এছাড়া সেন্সর বোর্ডের সদস্যগণ আরও মতামত দেন যে ‘দ্য কোড ফর সেন্সরশিপ অব ফিল্মস ইন বাংলাদেশ, ১৯৮৫-এর ১-এর I, V, VII দফায় বর্ণিত উপাদানসমূহ চলচ্চিত্রটিতে বিদ্যমান থাকায় এটি জনসাধারণের মধ্যে প্রদর্শন উপযোগী নয়। তাই বাংলাদেশ সেন্সরশিপ আইনের বিধি ১৬(৫) মোতাবেক উক্ত চলচ্চিত্রের সেন্সর আবেদনপত্র নির্দেশক্রমে অগ্রাহ্য করা হলো।
তবে, এই সিদ্ধান্ত-পত্র প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে ছবিটি প্রদর্শনের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য সরকার বরাবর আপিল আবেদন করার সুযোগ রয়েছে প্রযোজক-পরিচালকদের।
ফজলুল হক ইনস্টিটিউট অব মিডিয়া স্টাডিজের পক্ষে ছবিটির প্রযোজক শহিদুল আলম সাচ্চু। এটি ইমপ্রেস টেলিফিল্মের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিন-এর জন্য নির্মিত।
ওটিটি কনটেন্টের ক্ষেত্রে এখনও সেন্সর কার্যকর হয়নি। তবু চিঠি দিয়ে নিজেদের আগ্রহে রায়হান রাফী নির্মিত ‘অমীমাংসিত’ দেখতে চায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড! গেলো মার্চের প্রথম সপ্তাহে ছবিটি জমা দেওয়া হয়। তখন নির্মাতা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেছিলেন, তার ছবি ছাড়পত্র পেয়ে যাবে। কারণ তিনি এমন কোনও কনটেন্ট নির্মাণ করেননি, যেটা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে।
না, রাফীর আত্মবিশ্বাস বাস্তবে ফলেনি। সেন্সর জটিলতায় আটকেই গেলো ছবিটি। এর মধ্যে টিজার-ট্রেলার প্রকাশ করে কয়েক দফা ছবিটি মুক্তির তারিখ পেছানো হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে আইস্ক্রিন-এর প্রকল্প পরিচালক ও নায়ক রিয়াজ আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘গত ঈদে ঘোষণা দিয়েও বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমাটি মুক্তি দিতে পারিনি। এর জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সেন্সর সার্টিফিকেট পাওয়া সাপেক্ষে, অতি দ্রুত সিনেমাটি মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা রাখছি। কারণ বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধানের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল।’’
ছবিটির মুখ্য চরিত্রে আছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ ও তানজিকা আমিন। এছাড়া আরও কয়েকজন অভিনয়শিল্পী আছেন, তবে পোস্টার ও টিজারে তাদের মুখ কালো কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে যেন গল্পের রহস্য আরও ঘনীভূত করতে চেয়েছেন নির্মাতা। কিন্তু এখন ছবির মুক্তি নিয়েই পোহাতে হচ্ছে নতুন রহস্য-জটিলতা-অনিশ্চয়তা। তাহলে এভাবেই কি সবকিছু অমীমাংসিত থাকবে—প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।