ড. প্রদীপ মাহবুব: যারা অপু বিশ্বাস ও শবনম বুবলীর অবস্থা দিয়ে বাংলাদেশের অন্যান্য নারীদের সামাজিক অবস্থান নির্ধারণ করতে চান বা চাচ্ছেন তারা মানসিক পরাধীনতার শেকলে আবদ্ধ। অপু ও বুবলী দুজনেই স্বাবলম্বী ও স্বাধীনচেতা মানুষ। তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নিতে পারেন। নারীর ক্ষমতায়ন বলতে শুধুমাত্র স্বামীর সংসার কিংবা আর্থিক সহায়তা নিয়ে বেঁচে থাকা নয়। বরং কোনো নারী নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারেন কি-না সেটাই ক্ষমতায়ন। এক্ষেত্রে দুজনেই সফল। দুজনেই পুরুষতান্ত্রিকতার বেড়াজাল ছিন্ন করে নিজেদের সন্তানদের স্বীকৃতি আদায় করেছেন। তারা যেখানে শাকিব খানকে চরিত্রহীন বলছে না সেখানে আগ বাড়িয়ে আমি আপনি বলে কী লাভ? কিংবা তারা কেউ তো শাকিব খানের পরিচয় বহন করে আত্মনির্ভরশীল হতে চাচ্ছেন না। তো আপনারা কেন জোর করে শাকিব খানের সংসার করাতে চাচ্ছেন?
ডিভোর্স একটা স্বীকৃত প্রথা। দেশে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ডিভোর্স হচ্ছে। এই ডিভোর্স নিয়ে এতো চিন্তা বা মাতামাতির কিছু আছে বলে মনে করি না। অনেকেই আমাকে ভাববেন আমি পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব পোষণ করছি। ব্যাপারটা মোটেও এমন নয়। শবনম বুবলী জেনেশুনেই শাকিব খানের সাথে ঘর বেঁধেছেন। সন্তান নিয়েছেন। এমনতো নয় যে শাকিব খান তাদের সংসার করতে ও সন্তান নিতে বাধ্য করেছেন। বরং উলটো ব্যাপার ঘটেছে অপু বিশ্বাসের ক্ষেত্রে। কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর অপু বিশ্বাস নিজ সিদ্ধান্তে অটল থেকে আব্রাহাম খান জয়ের জন্ম দিয়েছেন। শাকিব খানকে পাত্তা না দিয়ে মিডিয়ার সামনে নিজের অধিকারের কথা মানে সন্তানের স্বীকৃতি আদায় করে ছেড়েছেন। আমিতো এটাকে দেখছি নারী মুক্তির চিহ্ন হিসেবে। অথচ আপনারা দেখছেন নারীর প্রতি অবমাননা হিসেবে।
আপনার বরং সেসব নারীদের কথা বলুন যারা বছরের পর বছর অত্যাচারিত হওয়ার পরও মুখে তালা দিয়ে একমুঠো ভাতের আশায় সংসার করছেন। যারা নিজেদের ইচ্ছা ও অনিচ্ছার কথা সংসারে বলতে পারেন না। নিজেদের ইচ্ছামতো চলতে পারেন না। আপনাদের নারীবাদী আন্দোলন তো তাদের নিয়ে হওয়ার কথা। অপু ও বুবলীকে নিয়ে নয়।
মিথিলা নিজের সিদ্ধান্তে তাহসানের সাথে ঘর ভেঙে দিলে সাহসিনী। কিংবা শবনম ফারিয়া ও মাহিয়া মাহিও নিজেদের সিদ্ধান্তে সংসার ভেঙে দিলে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলে চালিয়ে দেন। যদি ভুল না হয় তাহলে মাহিয়া মাহি তার স্বামীকে ডিভোর্স দেয়ার আগে স্বামীর কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা মূল্যের গাড়ি উপহার নিয়েছিলেন। এগুলো যদি মনে হয় নারী স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়নের প্রতীক তবে শাকিব খান ডিভোর্স দিলে অন্যায় কোথায়?
অন্য কথায়, অপু ও বুবলী নিজেদের সন্তানের স্বীকৃতি নিয়ে একা একা চলতে চাইলে আপনাদের সমস্যা কোথায়? যেকোনো ব্যাপারে একে অন্যের সাথে মিল না-ই থাকতে পারে। একসাথে থেকে তিক্ততা বাড়ানোর চেয়ে আলাদাভাবে বসবাস করাই উত্তম। বিয়ে ও তালাক একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার হওয়া উচিত। যার বা যাদের সমস্যা তার বা তাদেরকেই সমাধান করতে দেয়া উচিত। তাদের চিন্তা করে আমাদের ঘুম নষ্ট করার কী দরকার ভাই?
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, লোক প্রশাসন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।