আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রবল চাপের মুখে ১৬ দেশের প্রস্তাবিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (আরসিইপি) থেকে সরে এলো নরেন্দ্র মোদি সরকার। কৃষক ও বিরোধীদের পাশাপাশি বিজেপির ভেতরেও নাকি এই নিয়ে আপত্তি উঠেছিল।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে আলাপ-আলোচনা, এমনকি থাইল্যান্ডের সফরে বিস্তর দর-কষাকষির পরেও একেবারে শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে আসেন মোদি।
বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে তিনি মহাত্মা গান্ধীকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘‘তোমার দেখা সব থেকে দরিদ্র, দুর্বল মানুষটির মুখ মনে করো। নিজেকে জিজ্ঞাসা করো, যে পদক্ষেপ করতে চলেছ, তা আদৌ তার কোনো কাজে লাগবে কি না।’’
চাষি, ছোট ব্যবসায়ী, দেশীয় শিল্প, ক্রেতা, কর্মীদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই আপাতত এই মুক্ত বাণিজ্যের মঞ্চে শামিল হলো না দিল্লি- এমনটাই বললেন মোদি।
যদিও দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের সচিব বিজয় ঠাকুর সিং জানাচ্ছেন, এই মঞ্চে যোগ দেওয়ার শর্ত হিসেবে ভারত যে সব বিষয় তুলে ধরেছিল, তার সমাধান এখনো অধরা।
চাপে পড়ে চুক্তি থেকে সরলেও মোদীকে কৃতিত্ব দিতে ইতিমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন মন্ত্রীরা। টুইটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দাবি, ভারতের স্বার্থ রক্ষিত না হলে চুক্তিতে শামিল না হওয়ার অবস্থানে অনড় থাকলেন প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু অনেকে বলছেন, মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার বিধানসভা ভোটে গ্রামের ক্ষোভের আঁচ টের পেয়েছে বিজেপি। তাই নতুন করে চাষিদের চটাতে চায়নি তারা। তার ওপরে অর্থনীতির যা দশা তাতে নানান পক্ষের প্রতিবাদ উপেক্ষা করাও সম্ভব হয়নি।
বিরোধীদের দাবি, তাদের চাপেই পিছু হটতে হয়েছে কেন্দ্রকে। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালার টুইট, ‘‘কংগ্রেস ও রাহুল গান্ধীর তীব্র বিরোধিতাই চাষি, গোয়ালা… ছোট ব্যবসায়ীদের স্বার্থবিরোধী এই চুক্তি থেকে সরতে বাধ্য করেছে।’’
এদিকে প্রথম থেকেই চড়া সুরে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিরোধিতা করে এসেছে বিজেপি ঘনিষ্ঠ সংঘের শাখা স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ। তার যুগ্ম আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজন বলেছেন, একেই সস্তার চীনা পণ্যে ছেয়ে রয়েছে ভারতের বাজার। তার ওপরে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে শামিল হলে, তাদের সঙ্গে দামের লড়াইয়ে পারবে না দেশীয় শিল্প। একই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো দেশের সঙ্গে দুগ্ধজাত পণ্যের প্রতিযোগিতায় ভারত টিকবে না। তবে ‘সাহসী সিদ্ধান্ত’ নেওয়ার জন্য মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছে জাগরণ মঞ্চ।
অবাধ বাণিজ্যের দরজা খোলার প্রতিবাদে সোমবার সারা ভারতে বিক্ষোভ করে সর্বভারতীয় কৃষি সংঘ সমন্বয় কমিটি। তাদের নেতা হান্নান মোল্লার অভিযোগ, বর্তমান অবকাঠামো আর সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দেশের চাষিদের বিদেশি পণ্যের সঙ্গে লড়াইয়ে পেরে ওঠা শক্ত। বিরোধী নেতারাও বলছেন, চুক্তি হলে সস্তার বিদেশি পণ্যে ছেয়ে যাবে ভারত। খাবি খাবেন চাষি এবং ছোট ব্যবসায়ীরা। আরও তলিয়ে যাবে শিল্প তথা অর্থনীতি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।