আর্যভট্ট এর আবিষ্কৃত বিভিন্ন গাণিতিক বিধি ও সূত্র সুপ্রাচীনকাল থেকে আজকের যুগেও ব্যবহৃত হচ্ছে। তৎকালে প্রচলিত প্রাচীন ব্রাহ্মণ্য মতবাদকে অস্বীকার করার সাহস দেখিয়ে নিজের বৈপ্লবিক সিদ্ধান্তকে সর্বসাধারণের কাছে ঘোষণা করেন তিনি। তিনিই দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন, চাঁদের নিজস্ব আলো নেই, সূর্যের আলো চাঁদে প্রতিফলিত হয় বলেই পৃথিবী থেকে চাঁদকে আলোকিত দেখায়।
জ্যোতির্বিজ্ঞানে তিনি যুক্ত করেন সম্পূর্ণ নতুন এক ধারণার। নালন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্যভট্ট প্রাচীন ভারতের শিক্ষাব্যবস্থার বিপ্লবাত্মক রূপান্তরের সূত্রপাত ঘটান। আর্যভট্ট গাণিতিক ফল ও সিদ্ধান্তগুলো অতি সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ করতেন। আর্যভট্ট সবসময় প্রাচীনত্বের খোলস ভেঙে নতুন শুদ্ধ ধারণা দিতে চেয়েছেন ভারতীয়দের। সেজন্য, তিনি প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গণনাকারদের অভিমতের সাথে তাল মিলিয়েও নিজস্ব চিন্তার কথা জানিয়ে গেছেন নির্দ্বিধায়।
আরবের জ্ঞান-তপস্বীরা আর্যভট্টকে খুবই শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। তার রচনাসমূহ নতুন জোয়ার এনেছিল আরবীয় গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানে। ইতিহাস প্রসিদ্ধ পণ্ডিত আল-বেরুনী ভারতের এসেছিলেন একাদশ শতকের দিকে। ভ্রমণবৃত্তান্তে তিনি আর্যভট্টের কথাও উল্লেখ করেছেন।
প্রাচীন ভারতীয়দের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় গণিত ছিল এক প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। তখন কাগজ-কলম আবিষ্কার না হওয়ায় গণিতের চর্চা মানুষের মুখে মুখেই প্রচলিত ছিল। মৌখিক সেই গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানকে সুসংগঠিতভাবে লিখিত আকারে রূপ দেওয়ার প্রথম উদ্যোক্তা হলেন আর্যভট্ট।
দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির পরিপূর্ণ ব্যবহারের প্রথম প্রমাণ মেলে আর্যভট্টের কাজে। তবে দশমিক পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়েই তিনিই সর্বপ্রথম সংখ্যার বর্গমূল ও ঘনমূল নির্ণয়ের গাণিতিক প্রক্রিয়া বর্ণনা করেন। শূন্যের কার্যকর ব্যবহার এবং এর আলোকে দশ-ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি আবিষ্কার ও লিপিবদ্ধ ব্যবহারের কৃতিত্ব প্রদান করা হয় আর্যভট্টকে।
তিনিই সর্বপ্রথম বীজগণিতকে প্রাচীন ভারতীয়দের নিকট পরিচয় করিয়ে দেন। তার জ্ঞানের ছোঁয়া পেয়েছে ত্রিকোণমিতি, পরিমিতি, বর্গমূল, ঘনমূলের মতোও গাণিতিক শাখাগুলো। আধুনিক ত্রিকোণমিতির সূচনা আর্যভট্টের হাত ধরেই। আমাদের পৃথিবী যে গোলক, এই জিনিস সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেছিলেন আর্যভট্ট।
গ্রহের আকার ও অবস্থান গণনার জন্য তিনি জ্যামিতি ও গণিতের বহু নতুন তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন। তিনি হিসেব কষে পৃথিবীর আক্ষিক গতি বের করেছিলেন। ৪৫৫ খ্রিষ্টাব্দে চিরবিদায় নেন প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানের এই শ্রেষ্ঠপুরুষ। পৃথিবী হারায় একজন মেধাবী মানুষের পদচারণা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।