আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলো এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্ট গত বুধবার আশ্রয়প্রার্থী এবং অভিবাসীদের পরিচালনার বিষয়ে জোটের আইনগুলোতে একটি বড় সংশোধন আনতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো নতুন এই চুক্তিকে আখ্যা দিয়েছে একটি ‘নিষ্ঠুর আইনি ব্যবস্থা’ হিসেবে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, অক্সফাম, কারিতাস এবং সেভ দ্য চিলড্রেনের মতো অভিবাসীদের বিষয়ে কাজ করা বেশ কয়েকটি সংস্থাও এই সংস্কারের নিন্দা জানিয়েছে। সংস্থাগুলো বলছে, এটি একটি “অকার্যকর” এবং “নিষ্ঠুর ব্যবস্থা” তৈরি করবে। সি-ওয়াচ রেসকিউ এক বিবৃতিতে বলেছে, “আজকের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে একটি জীবনও রক্ষা পাবে না। এই চুক্তিটি একটি ঐতিহাসিক ব্যর্থতা এবং ইউরোপের ডানপন্থি দলগুলোর কাছে নতজানু হওয়ার প্রমাণ।” এই বিবৃতির বক্তব্যকে অন্য বেশ কিছু দাতব্য প্রতিষ্ঠান সমর্থন দিয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। বেশ কিছু রক্ষণশীল আইনপ্রণেতা চুক্তিটিকে “ঐতিহাসিক” হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তবে বামপন্থি রাজনীতিবিদরা এই সংস্কারে ইতিবাচক কিছু দেখছেন না।
ফরাসি পার্লামেন্টে বিতর্কিত অভিবাসন বিল অনুমোদন পাওয়ার কাছাকাছি সময়েই ইইউ অভিবাসন সংস্কার চুক্তিটিও অনুমোদন পায়। ফরাসি বিলটিতেও নির্দিষ্ট কিছু অভিবাসীকে দ্রুত প্রত্যাবাসনে কঠোর নিয়ম রাখা রয়েছে। বামপন্থি আইন প্রণেতা এবং অভিবাসী অধিকার সংস্থাগুলো এই তীব্র সমালোচনা করেছে।
ইউরোপীয় গ্রিনস-এর সদস্য জার্মান ইইউ আইনপ্রণেতা ডামিয়ান ব্যোসেলাগার বলেন, “আলোচনাকারীরা আশ্রয় চাওয়ার অধিকারকে খর্ব করতে সম্মত হয়েছেন।” তিনি বলেন, “এই নতুন ব্যবস্থাটি আমাদের সীমান্তে কারাগার স্থাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করবে এবং এটি কখনই মেনে নেয়া উচিত নয়।” ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্গারিটিস শিনাস এই চুক্তিকে একটি ‘ব্রেকথ্রু’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
এ দিকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট রবার্টা মেটসোলা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এই চুক্তিকে একটি ‘ঐতিহাসিক চুক্তি’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডিও এই চুক্তির প্রশংসা করেছেন। এক্স-এ নিজের শেয়ার করা মন্তব্যে চুক্তিটিকে ‘খুব ইতিবাচক পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি। জার্মানিও এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎস বলেছেন, এই চুক্তি “জার্মানিসহ বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অন্য দেশগুলোকে বোঝা থেকে মুক্তি দেবে।”
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক চুক্তিটিকে “জরুরি এবং দীর্ঘদিনের প্রয়োজন” বলে উল্লেখ করেছেন।
তবে তিনি স্বীকার করেছেন, চুক্তিতে জার্মানির সকল উদ্বেগের সমাধান করা হয়নি। তিনি জানান, বার্লিন চেয়েছিল, “সীমান্তে প্রক্রিয়াকরণ থেকে সকল শিশু এবং পরিবারগুলোকে ছাড় দেয়া হোক।” ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি এই চুক্তিতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, “চুক্তিটির অনুমোদন ইউরোপ এবং ইতালির জন্য একটি বড় সাফল্য। একটি সুষম সমাধান নিশ্চিত করার জন্য ইতালি সর্বদা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, যাতে অভিবাসী চাপের সম্মুখীন হওয়া ইইউ সীমান্তের দেশগুলো যাতে একা বোধ না করে।”
গ্রিক প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোতাকিস চুক্তিতে তার “সন্তুষ্টি” জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অভিবাসন নীতি পরিবর্তনে এথেন্সের আহ্বানের “একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়া” ছিল এই চুক্তি।
এদিকে কয়েক বছর ধরেই ডেনমার্কের সোশ্যাল-ডেমোক্র্যাট সরকার অভিবাসনের ক্ষেত্রে কঠোর নীতি অনুসরণ করছে। ৬০ লাখ মানুষের ডেনমার্কে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে মাত্র ১৮০ জন অভিবাসী আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন। অন্যদিকে, ফেডারেল অফিস ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজিস এর তথ্য অনুসারে সাড়ে আট কোটি মানুষের জার্মানিতে আশ্রয় আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ১৬৫ জন। ডেনমার্কের নীতিতে অভিবাসীদের সামাজিক সুবিধা অনেক কম।
এদিকে হাঙ্গেরি চুক্তি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যানের কথা জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিতার সিয়ার্তো বলেছেন, “আমরা এই অভিবাসন চুক্তিকে সবচেয়ে জোরালো ভাষায় প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে প্রবেশ করতে দেব না। ব্রাসেলস বা অন্য কোথাও থেকে কেউ আমাদের বলতে পারবে না যে আমরা কাকে প্রবেশ করতে দিতে পারি। এই অবস্থানের জন্য আমাদের শাস্তি দেয়ার ব্যাপারটিকেও আমরা কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করি।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডিও এই চুক্তির প্রশংসা করেছেন। এক্স-এ নিজের শেয়ার করা মন্তব্যে চুক্তিটিকে ‘খুব ইতিবাচক পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি। চুক্তিটির লক্ষ্য হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অনিয়মিত অভিবাসনের পরিমাণ কমানো।
এই সংস্কারের মধ্যে রয়েছে অনিয়মিত অভিবাসীদের দ্রুত যাচাই করা, সীমান্তে আটককেন্দ্র তৈরি করা এবং আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়া আশ্রয়প্রার্থীদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা। ইউরোপের দক্ষিণের দেশগুলোর ওপর চাপ কমানোর জন্য একটি প্রক্রিয়াও নতুন চুক্তিতে রয়েছে। এই প্রক্রিয়ার অধীনে কিছু আশ্রয়প্রার্থীকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশে স্থানান্তর করা হবে। যেসব দেশ আশ্রয়প্রার্থীদের নিতে অস্বীকৃতি জানাবে, তাদের আর্থিক বা কাঠামোগত অবদান রাখতে হবে।
নতুন ব্যবস্থায় ইউরোপের সীমান্তে অবস্থিত নয়, এমন দেশকে ৩০ হাজার আশ্রয় আবেদন নিতে হবে। তাতে রাজি না হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি তহবিলে অন্তত মাথাপিছু ২০ হাজার ইউরো জমা দিতে হবে, এই বছর নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত ইইউ সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্স তিন লাখ ৫৫ হাজারেরও বেশি অনিয়মিত সীমান্ত পারাপারের ঘটনা নিবন্ধন করেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই সংখ্যা ১৭ শতাংশ বেশি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।