নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: বাবা-মা এবং তিন ভাই-বোনকে নিয়ে সুখেই চলছিল দরিদ্র আহসান উল্লাহ’র পরিবার । । কিন্তু বিধিবাম এই সুখ বেশি দিন তাদের ঘরে স্থায়ী হয়ে রইলো না। সুখ যেনো বিমাতা সুলভ আচরণ করলো। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াকালিন সময়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পাগল হয়ে যায় আহসান উল্লাহর বাবা। শুরু হলো জীবনের জীবন যুদ্ধ।পরের বাড়ি কাজ করে জীবিকা নির্বাহের কঠিন সময়। বাবা-মা সহ পাঁচজনের সংসার তাদের। বাবা পাগল কাজেই এই পরিবারকে খেয়ে পরে বাঁচতে হলে শিশু আহসান উল্লাহকেই কাজ করতে হবে। যেহেতু উপার্জন করার মতো আর কেউ নেই ।
একদিন কাজ না করলে না খেয়ে থাকতে হবে। দিন শেষে চাল নিয়ে বাড়ি ফিরলেই কেবল রাতে চুলায় আগুন জলবে, পেটে ভাত যাবে।এভাবেই শিশুকালে পরের বাড়ি কাজ করে সংসার চালান আহসান উল্লাহ। তবে লেখা-পড়ার প্রতিও তীব্র আগ্রহ তার। কাজ এবং পড়া-লেখা চলে সমান তালে। দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় হঠাৎ মা তাদের রেখে চলে যান। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় বাবার সাথে সংসার করবেন না। তাই তিন সন্তান এবং পাগল স্বামীসহ সবাইকে ফেলে রেখে চলে যায় গর্ভধারিনী মা। এবার যেনো আকাশ ভেঙে পরে আহসান উল্লাহ’র মাথায়। পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। চোখে মুখে অন্ধকার দেখে। একদিকে পাগল বাবা অন্যদিকে ছোট ছোট দুটি বোন। তবুও হারতে রাজি নয় সে।
জীবনযুদ্ধে সফল হতে হবে এই যেনো পণ। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে সারাদিনের রান্না শেষ করে পরের বাড়ি কাজে যান আহসান উল্লাহ। বাস্তবতার কষাঘাতে জীবন সংগ্রামে হার না মেনে পড়া-লেখা এবং কাজ উভয়ে সফলতার সাথে চালিয়ে যায় সে। বলছিলাম গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার তেলিহাটি ইউনিয়নের ডোমবাড়ী চালা গ্রামের শহীদুল ইসলামের ছেলে আহসান উল্লাহ’র সংগ্রামী জীবনের গল্প।
সরেজমিনে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা হয় আহসান উল্লাহ’র সাথে। সে জানায়, বর্তমানে সে শ্রীপুর মুক্তিযুদ্ধা রহমত আলী কলেজে ভূগোল বিষয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। পরের জমি বর্গা নিয়ে কৃষি কাজ করেই এ পর্যন্ত এসেছে সে। এক বোন বিয়ে দিয়েছেন এবং সবার ছোট বোনটি এবার এসএসসি পাশ করেছে। সরকারের কাছে তাঁর চাওয়া হলো তাকে যদি স্বল্পসুদে ঋণ দেয়া হয় তবে বেশি পরিমানে অন্যের জমি লিজ নিয়ে মৌসুমী সবজি চাষ করে আরো ভালো কিছু করতে পারবে।
বাড়ি ভিটা ছাড়া কৃষি কাজের জন্য নিজের এক টুকরো জমি না থাকলেও শিশু শ্রেণি থেকে এ পর্যন্ত লেখা পড়া করে আসা এবং বোনদের মানুষ করায় এলাকার মানুষদের কাছে প্রশংসার পাত্র আহসান উল্লাহ। চারিদিকে তার সুনাম ছড়িয়ে পরেছে।
প্রতিবেশি লাভলি আক্তার জানান, আহসান উল্লাহ ছোট থেকে খুব কষ্ট করে বড় হয়েছে। এলাকার সবাই তাকে খুব ভালোবাসে।
আহসান উল্লাহ’র ছোট বোন শাহিনুর জানান, আমার ভাই মানুষের জমি বর্গা চাষ করে নিজে লেখা পড়া করছে এবং আমাকেও লেখাপড়া করাচ্ছে। সংসারের পুরো দায়িত্ব কাঁধে তুলে খুব কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছে সে। এমন ভাই পাওয়া সত্যিই সৌভাগ্যের।
তেলিহাটি ইনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড মেম্বার তারেক হাসান বাচ্চু বলেন, বর্তমানে এমন ছেলে পাওয়া যায় না। আহসান উল্লাহ যুব সমাজের অহংকার।
শ্রীপুর যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, সে যদি চায় তাহলে তাকে যুব উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এবং স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হবে। আহসান উল্লাহ’র মতো যুবকরা এগিয়ে গেলেই দেশ এগিয়ে যাবে।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, আহসান উল্লাহকে ২০২৩/২৪ অর্থ বছরের প্রনোদনার আওতায় উফসী জাতের বীজ এবং সার দেওয়ার ব্যবস্থা করবো এবং সেই সাথে তার বাড়িতে পারিবারিক পুষ্টির বাগানের আওতায় আনা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।