জুমবাংলা ডেস্ক: বাংলাদেশের ১৫৩ জন সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত একটি চিঠিতে সুপারিশ করেছেন, বাংলাদেশে যেন ই-সিগারেট বা ভেপিংয়ের আমদানি, উৎপাদন, বিক্রি, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। খবর বিবিসি বাংলার।
সোমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের কাছে তারা এরকম একটি চিঠি দিয়েছেন।
সেই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং-এর চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবে মিল্লাত, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনিসহ ১৫৩জন সংসদ সদস্য।
কিন্তু যেখানে বাংলাদেশ তামাক সেবনে বিশ্বে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে একটি এবং অনেক কোম্পানির বিড়ি-সিগারেট উৎপাদন ও বিক্রির অনুমতি রয়েছে, সেখানে ই-সিগারেট বন্ধে এমপিদের এই উদ্যোগের কারণ কি?
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের একজন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ এবং তামাক বিরোধী সংগ্রামে বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়েছে। কিন্তু এটিকে বাইপাস করে ভেপিং এসেছে এবং ইয়াং জেনারেশনকে আকৃষ্ট করার জন্য নানান ধরণের ব্যবস্থা নানা জায়গায় নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, যেহেতু বাংলাদেশে এখনও এটা তৈরি হয় না, সম্পূর্ণ আমদানি করা হয়, আমরা জানি বেশ কিছু দেশ এর মধ্যেই এটা নিষিদ্ধ করেছে। তাই আমরা মনে করেছি, এটাই উপযুক্ত সময় এটাকে নিষিদ্ধ করার জন্য।
১৫৩ জন সংসদ সদস্য ভেপিং নিষিদ্ধ করার জন্য স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় তামাক বিরোধী বা জনস্বাস্থ্যের কোন ইস্যুতে বা কোন জাতীয় ইস্যুতে একসাথে এতো বেশি এমপির চিঠি পাঠানোর মতো কোন ঘটনার নজির নেই।
তামাক সেবনের ক্ষেত্রে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বাংলাদেশে প্রায় ৩৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করেন। সেখানে এমপিদের কাছ থেকে কোনদিন সিগারেট নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে এমন বিবৃতি দেখা যায়নি।
এতজন এমপি মিলে তামাকের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইনও দেখা যায়নি।
এই প্রশ্নে আ ফ ম রুহুল হক বলছেন, এভাবে আমরা চিঠি লিখিনি, তা ঠিক। কিন্তু আমরা তো আইন পাস করেছি, নতুন আইন তৈরি করেছি। এর চেয়েও বেশি এমপি মিলেই তো আইন পাস করেছি।
কিছুদিন আগেই বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সিগারেট নির্মাতা জাপান টোব্যাকো প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকায় বাংলাদেশের আকিজ গ্রুপের সিগারেট তৈরির ব্যবসা কিনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সেখানেও সরকার বা এমপিদের উদ্বেগ দেখা যায়নি।
মি. হক বলছেন, আমরা এভাবে হয়তো স্বাক্ষর করে কিছু করিনি, কিন্তু আপত্তি নেই তা বলা যাবে না। আমাদের আপত্তি আছে। আমরা এসব ব্যাপারে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। সেই জন্যই নতুন একটি জিনিস এখনই নিষিদ্ধ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছি। সেই সঙ্গে টোব্যাকোর ওপর আরও কর আরোপ করার জন্য প্রতিবারই বলি। সেটা স্বাস্থ্য খাতে ব্যবহারের জন্য বলেছি।
ভেপিং কি ক্ষতিকর?
সারা পৃথিবীতেই ই-সিগারেটের ব্যবহার বা ভেপিংয়ের চল রয়েছে। তবে এ নিয়ে বিতর্কও রয়েছে।
এক ঘোষণায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৪ সালে বলেছিল, ই-সিগারেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে তাদের পণ্যের বিক্রির ব্যাপারে প্রচারণা চালাতে না পারে। কারণ এই সিগারেট থেকে যে ধোঁয়া বের হয় অধূমপায়ীদের স্বাস্থ্যের ওপর সেটা কী ধরনের প্রভাব ফেলে সেটা এখনও পরিষ্কার নয়। অনেক দেশ বা এলাকায় এটির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আবার ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে এমপিদের বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিষয়ক কমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভেপিং বা ই-সিগারেট সাধারণ বা তামাকের সিগারেটের থেকে কম ক্ষতিকর।
ফলে ই-সিগারেটের ব্যবহার সহজলভ্য হলে, সেটা অনেক মানুষকে তামাকের সিগারেটের ব্যবহার বা ধূমপান থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করবে।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এনএইচএস-এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সিগারেট ছাড়ার ক্ষেত্রে ভেপিং একটি উপায় হতে পারে। সিগারেটের ক্ষতির চেয়ে ভেপিংএর ক্ষতি অনেক কম। মানুষ যাতে সিগারেট ছাড়ে, তার একটি বিকল্প ভেপিং হতে পারে।
তবে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক বলছেন, এই বক্তব্য নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। অনেকেই মনে করছেন যে, ভেপিংয়ের মধ্যে যেসব রাসায়নিক বের হয়, সেটি তামাকের চেয়েও নাকি বেশি ক্ষতিকর।
এমপিদের এই পদক্ষেপ প্রকারান্তরে সিগারেট কোম্পানিগুলোর জন্য সহায়ক হয়ে উঠতে পারে কিনা, জানতে চাওয়া হলে আ ফ ম রুহুল হক হাসির সঙ্গে সেটি নাকচ করে দেন।
তিনি বলেন, আমি মনে করি না, এই যুক্তি কেউ গ্রহণ করবে। সিগারেট কোম্পানিকে সাহায্য করার জন্য আমরা কখনোই এগিয়ে আসবো না। আমরা অবশ্যই সিগারেটের বিপক্ষে, তামাকের বিপক্ষে, গুলের বিপক্ষে, অ্যাকটিভ এবং প্যাসিভ স্মোকিং-দুইটির বিপক্ষে।
ই-সিগারেট কীভাবে কাজ করে?
এই সিগারেটের ভেতরে নিকোটিন, প্রোপাইলিন গ্লাইকল অথবা ভেজিটেবল গ্লিসারিন এবং সুগন্ধী মিশ্রিত থাকে।
কিন্তু তামাকের ভেতর থাকা অনেক বিষাক্ত রাসায়নিকের তুলনায় (যেমন টার এবং কার্বন মনোক্সাইড) নিকোটিন তুলনামূলক কম ক্ষতি করে।
নিকোটিনের কারণে ক্যান্সার হয় না, কিন্তু সাধারণ সিগারেটের ভেতরে থাকা তামাকের কারণে ক্যান্সার হতে পারে- যার কারণে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
এ কারণেই ধূমপান বন্ধ করতে নিকোটিন গ্রহণের মাধ্যম পরিবর্তনের জন্য অনেক বছর ধরে পরামর্শ দিয়ে আসছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। যার মধ্যে রয়েছে গাম, স্কিন প্যাচেস বা মুখে স্প্রে করা।
মাদক ও ধূমপান বিরোধী সংগঠন ‘মানস’এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. অরুপ রতন চৌধুরী বলছেন, বাংলাদেশে ধূমপান ও তামাক বিরোধী আইন রয়েছে। সেই আইনের পুরোপুরি প্রয়োগ নিয়ে দুর্বলতা রয়েছে। কিন্তু ই-সিগারেট বা ভেপিং নিয়ে এখনও কোন আইনি ব্যবস্থা নেই।
তিনি বলেন, কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের দেশে এটার ব্যবহার শুরু হয়েছে। অনেক তরুণ-যুবক এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। কিন্তু এটি নিয়ে বিশ্বে অনেক বিতর্ক আছে। অনেক গবেষণায় বলা হচ্ছে, এখানেও যে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, সেটা ফুসফুসের রোগের কারণ হতে পারে। অনেক দেশে এটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
”তাই আমরা মনে করি, যেহেতু এটার ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি রয়েছে, তাই এখনই এটার আমদানি বা বিক্রির ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ বা নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নেয়া উচিত।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।