আন্তর্জাতিক ডেস্ক : একমাস আগেও একটি গ্রামের দখল নিতে রাশিয়ার সেনাদের যেখানে দুই-তিন সপ্তাহ বা তারচেয়েও বেশি সময় লেগেছে, এখন তা দুয়েক দিনেই দখলে নিচ্ছে। ফ্রন্টলাইনে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা চলমান থাকলে খুব দ্রুতই ইউক্রেনের ডিফেন্স লাইন ভেঙে পড়তে পারে বলে পশ্চিমা গণমাধ্যমেই আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর আভদিভকার পতনের পর অল্প সময়ের ব্যবধানে বড় রকমের প্রতিরোধ ছাড়াই বেশ কিছু গ্রাম দখল করে নিয়েছে রুশ সেনারা।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এক হাজার কিলোমিটার ফ্রন্টলাইনজুড়ে কৌশলগত পয়েন্টগুলিতে আক্রমণ ক্রমেই বাড়িয়ে চলে রুশ সেনারা।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নির্দেশে ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রতিরক্ষা লাইন টিকিয়ে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাশিয়া তাদের বিধ্বংসী গ্লাইড বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ভারী কামান দিয়ে লাগাতার আঘাত করে যাচ্ছে।
ইউক্রেনীয় সেনা কর্মকর্তাদের বরাতে ফাইনান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, বাখমুত থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে পাহাড়ি শহর চাসিভ ইয়ার দখলের লড়াই শুরু করেছে রুশ সেনারা। শহরটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইউক্রেনের সেনাপ্রধান জেনারেল সিরস্কি দাবি করেছেন, আগামী ৯ মের মধ্যে চাসিভ ইয়ার দখল করতে চায় রাশিয়া। দিনটিতে ১৯৪৫ সালে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে সোভিয়েত বিজয়ের বর্ষপূর্তি উদযাপন করবে রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্ব। চাসিভ ইয়ারের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে তা হবে মস্কোর জন্য একাধারে কৌশলগত এবং প্রতীকী বিজয়।
ইউক্রেনীয় সেনাদের মধ্যেও চাসিভ ইয়ারের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ রাশিয়ান বাহিনী শহরটির পূর্ব সীমান্তে পৌঁছে গেছে।
সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাশিয়া যদি শহরটি দখল করে তবে তারা দোনেৎস্ক অঞ্চলে অত্যন্ত দ্রুত অগ্রসর হতে পারবে। তারা বলেছেন, রাশিয়া চাসিভ ইয়ারে একটি বড় যুদ্ধের জন্য পর্যাপ্ত সেনা জড়ো করার পাশাপাশি সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
ইউক্রেনের একটি ড্রোন ব্যাটালিয়নের কমান্ডার ইউরিয়ে ফেডোরেঙ্কো বলেন, রাশিয়ার সেনারা চাসিভ ইয়ারে পৌঁছতে পারলে কোস্ত্যন্তিনিভকা, দ্রুজকিভকা এবং ক্রামতোর্স্ক শহর তাদের ফায়ার কন্ট্রোলে চলে আসবে। এখানে তারা সেনা জড়ো করে সামনের দিকে আক্রমণ চালানোর ভালো সুযোগ পাবে।
চাসিভ ইয়ার থেকে ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে কোস্ত্যন্তিনিভকা থেকে যুদ্ধের লক্ষণ দৃশ্যমান। সেখানে সম্প্রতি কামান এবং রকেট হামলার ধোঁয়ায় আকাশ ছেয়ে যাচ্ছে, সঙ্গে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘পলিটিকো’ একটি খবর প্রকাশ করেছে, যার শিরোনাম ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইন ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে (Ukraine is at great risk of its front lines collapsing)।
ইউক্রেনের উচ্চপদস্থ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা, যারা সাবেক সেনাপ্রধান ভ্যালেরি জালুঝনির অধীনে কাজ করেছে তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের অবস্থা ভয়াবহ!
ওই সেনা কর্মকর্তাদের মতে, রাশিয়ান জেনারেলরা আক্রমণ চালাতে যেসব অঞ্চলে বেশি মনোযোগ দেবেন সেখানে ফ্রান্টলাইগুনলো ভেঙে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। রাশিয়ার সেনা সংখ্যা বেশি এবং তাদের বিমানগুলো কয়েক সপ্তাহ ধরে ফ্রান্টলাইনের কাছাকাছি এসে ইউক্রেনের অবস্থানগুলি ধ্বংস করছে।
পলিটিকোকে ওই কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়েছেন, যাতে তারা নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারেন।
‘এখন ইউক্রেনকে সাহায্য করতে পারে এমন কিছুই নেই। কারণ, রাশিয়া আমাদের দিকে যে বিশাল সেনাবহর পাঠাবে তাদের ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম এমন কোনো গুরুতর প্রযুক্তি ইউক্রেনের কাছে নেই, এমনকি পশ্চিমের কাছেও সেগুলি পর্যাপ্ত নেই।’ পলিটিকোকে বলছিলেন ইউক্রেনের শীর্ষস্থানীয় এক সামরিক কর্মকর্তা।
তার মতে, এই মুহূর্তে যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার যে ভয়াবহ গতি তা শুধু কমাতে পারে ইউক্রেনীয় সেনাদের দৃঢ়তা এবং সেইসাথে রাশিয়ান কমান্ডারদের ভুল। কিন্তু তাদের এই ভুলের আশায় তো আর যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ করা যায় না।
‘প্রায়ই, আমরা প্রয়োজনের সময় সঠিক অস্ত্রটি পাই না। সেগুলি যখন আসে তখন আর প্রাসঙ্গিক থাকে না।’ বলেন তিনি।
অন্য একজন সিনিয়র অফিসার উদাহরণ হিসাবে এফ-১৬ ফাইটার জেটের কথা বলেন। প্রাথমিক পাইলট প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর এই গ্রীষ্মে এক ডজন বা তার বেশি এফ-১৬ পাওয়ার আশা করছিলো ইউক্রেন।
‘প্রতিটি অস্ত্র ব্যবহারেরই সঠিক সময় থাকে। ২০২৩ সালে এফ-১৬ এর প্রয়োজন ছিল; ২০২৪ সালে এটি তেমন কাজে আসবে না।’ বলেন তিনি।
এর কারণও জানিয়েছেন ওই অফিসার। তার মতে, রাশিয়া এই বিমানগুলো মোকাবিলা করতে এখন পুরোপুরি প্রস্তুত।
‘গত কয়েক মাসে আমরা লক্ষ্য করেছি, রাশিয়ানরা উত্তর ক্রিমিয়ার ঝানকয় থেকে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে, যেগুলোতে বিস্ফোরক ওয়ারহেড ছিলো না। শুরুতে আমরা বুঝতে পারিনি, তারা কী করছে! পরে আমরা বিষয়টি খুঁজে বের করেছি। তারা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর পাল্লা খুঁজছে।’
ওই অফিসার ব্যাখ্যা করে বলেন, রাশিয়া তার এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র এবং রাডার সিস্টেমগুলি কোথায় মোতায়েন করলে সেরা ফলাফল পাবে সেই হিসেব-নিকেশ করছে; যাতে তারা এফ-১৬কে টার্গেট করে ভূপাতিত করতে পারে অথবা এগুলোকে ফ্রান্টলাইন এবং রাশিয়ান লজিস্টিক হাব থেকে দূরে রাখতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।