আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়া সীমান্তের কাছে পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গোলার আঘাতে ইউক্রেনের এক সেনা নিহত হয়েছেন বলে দেশটির সামরিক বাহিনী জানিয়েছে। পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধের তীব্র শঙ্কার মাঝে শনিবার সকালের দিকে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় ওই সেনা নিহত হয়েছেন। খবর রয়টার্স, এএফপি’র।
দুই মাসের বেশি সময় ধরে দুই দেশের সীমান্তে চলা উত্তেজনার মাঝে শনিবারের এই হামলার পেছনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হাত রয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, তারা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা পূর্ব ইউক্রেনের দোনেস্ক শহরের উত্তরেও কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তবে এই বিস্ফোরণের কারণ পরিষ্কার নয়। এছাড়া এই বিস্ফোরণের ব্যাপারে বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্তৃপক্ষ অথবা কিয়েভ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পেইজে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলেছে, শনিবার বিচ্ছিন্নতাবাদীরা অন্তত ১৯ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছেন; যা আগের ২৪ ঘণ্টার ৬৬ বারের তুলনায় কম।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলেছে, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভারী গোলাবারুদ ব্যবহার করে ২০টির বেশি স্থাপনায় গোলাবর্ষণ করেছে; যা মিনস্ক চুক্তি অনুযায়ী নিষিদ্ধ।
চলতি সপ্তাহে বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং ইউক্রেনের সরকারি বাহিনীকে বিভক্তকারী সীমান্তরেখা বরাবর গোলাবর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউক্রেনের সরকার এসব ঘটনাকে উসকানি বলে অভিহিত করেছে। এছাড়া পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কিয়েভ হামলা চালাতে পারে রাশিয়া যে ইঙ্গিত দিয়েছে তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে ইউক্রেন।
এদিকে, শনিবার ইউক্রেনের ভেঙে যাওয়া তথাকথিত গণপ্রজাতন্ত্রী দোনেস্কের নেতা বলেছেন, সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দেশটিতে যুদ্ধের তীব্র আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় তিনি সাধারণ লোকজনকে রাশিয়ায় সরিয়ে নেওয়ার কাজে নেতৃত্ব দেবেন।
গত দুই মাস ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে ১ লাখেরও বেশি সেনা মোতায়েন রেখেছে রাশিয়া। সম্প্রতি কিছু সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে বলে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করলেও এই বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে ইতোমধ্যে সংশয় প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যরা।
যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে—সীমান্তে সেনা উপস্থিতি কমায়নি রাশিয়া, বরং বাড়িয়েছে। ইউরোপের দেশসমূহের আঞ্চলিক সামরিক জোট অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশনে (ওসসিই) নিযুক্ত মার্কিন দূত মাইকেল কার্পেন্টার শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) এক বৈঠকে বলেছেন, গত ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত যেখানে ইউক্রেন সীমান্তে ১ লাখ রুশ সেনার উপস্থিতি ছিল— বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছে ১ লাখ ৯০ হাজার বা তারচেয়ে কিছু বেশি সেনা।
ইউক্রেন যেন ন্যাটোর সদস্যপদ লাভের আবেদন প্রত্যাহার করে নেয়, মূলত সেজন্য দেশটির ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। কারণ ১৯৪৯ সালে গঠিত ন্যাটোকে রাশিয়া বরাবরই পাশ্চাত্য শক্তিসমূহের আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে মনে করে; এবং ঐতিহাসিকভাবেই রাশিয়া পাশ্চাত্য আধিপত্যবাদবিরোধী।
বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতির একটি কূটনৈতিক সমাধানের পথ বের করতে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বৈঠক করবেন বলে শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন জো বাইডেন। ইউরোপে হবে এই বৈঠক।
পাশাপাশি রাশিয়ার উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ২৪ ফেব্রুয়ারির বৈঠকের আগে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হলে কূটনৈতিকভাবে এই সংকট সমাধনের পথ ‘চিরতরে বন্ধ’ হয়ে যাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।