কুমিল্লায় লালমাই উপজেলার ইছাপুরা গ্রামে কৃষককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। নিহত ওই কৃষকের নাম আমান উল্লাহ। গতকাল শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) ওই কৃষককে মারধর করে ইউপি সদস্য ও তার সঙ্গীরা। এতে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয় তাকে।
শনিবার (১৮ এপ্রিল) ওই কৃষক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লালমাই থানার ওসি মোহাম্মদ আইয়ুব। তিনি জানান এ ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে এবং ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নিহতের পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের ইছাপুরা গ্রামের কৃষক আমান উল্লাহর এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েকে কিছুদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিল বেলঘর উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক ও ইউপি মেম্বার দেলোয়ার হোসেন মজুমদারের ছোট ভাই কাঠমিস্ত্রী সোহরাব।
গত ১৬ এপ্রিল রাত ১১টায় দিকে সোহরাব আমান উল্লাহর বাড়িতে গিয়ে তার মেয়েকে ডাকাডাকি শুরু করেন। এ সময় আমান উল্লাহ ও তার ছেলেরা চোর চোর বলে চিৎকার দেয়। তাদের চিৎকার শুনে আশপাশের বাড়ির লোকজন বেরিয়ে আসে। খুঁজতে গিয়ে সবাই দেখে সোহরাব বাড়ির পাশের ধান খেতে শুয়ে আছে। এ সময় তাকে মারধর করা হয়। এ খবর পেয়ে সোহরাবের ভাই দেলোয়ার মেম্বারের নেতৃত্বে ১০/১২ জন রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমান উল্লাহর বাড়িতে হামলা করে।
পরদিন ১৭ এপ্রিল দুপুরে গ্রামের গণ্যমান্যদের আমান উল্লাহ ঘটনাটি জানান। গ্রামবাসীকে জানানোর কারণে দুপুরে দেলোয়ার মেম্বারের নেতৃত্বে তার ভাইসহ কয়েকজন আমান উল্লাহকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। ঘর থেকে বের করার সময় দেলোয়ার মেম্বার আমান উল্লাহকে শূন্যে তুলে মাটিতে আছাড় দেন। এরপর সবাই মিলে তাকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে ইছাপুরা গ্রামের শহীদের বাড়ি সংলগ্ন সড়কের পাশে ফেলে দেয়।
পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে। এ ঘটনায় আমান উল্লাহর ছেলে আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ওই দিন বিকেলে দেলোয়ার মেম্বারসহ এজাহারভুক্ত ৪ জন ও অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে লালমাই থানায় মামলা দায়ের করেন।
শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় লালমাই থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ইছাপুরা গ্রামের ফজর আলীর ছেলে তোফাজ্জল ও আজগর আলীর ছেলে রবিউলকে গ্রেফতার করে।
নিহতের ছেলে ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবদুল জলিল সাংবাদিকদের বলেন, সোহরাবের চরিত্র খারাপ হওয়ায় তার স্ত্রী চলে গেছে। বেশ কিছুদিন ধরে সে আমার বোনকে উত্ত্যক্ত করে আসছে। এর প্রতিবাদ করায় দেলোয়ার মেম্বারের নেতৃত্বে আমার বাবাকে খুন করা হয়েছে। খুনি দেলুসহ তার ভাইদের গ্রেফতার ও ফাঁসি চাই।
লালমাই থানার ওসি মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, নিহতের ছেলে আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আজ সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিকটিমের মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা শাহবাগ থানার মাধ্যমে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করি। দায়েরকৃত মামলায় ৩০২ ধারা সংযুক্তের জন্য আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ করি। এখন পর্যন্ত দুইজনকে গ্রেফতার করেছি। ইউপি মেম্বার দেলোয়ারসহ বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।