বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি বড় সুযোগ এসে দাঁড়িয়েছে। ইতালি, ইউরোপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ, এবার সরাসরি বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী নিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই খবর শুধু কর্মসংস্থানের দরজা খুলে দেয় না, বরং দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককেও করে আরও দৃঢ়। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ইতালির মন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি যে বার্তা দিয়েছেন, তা ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা হয়ে উঠতে পারে।
ইতালি কর্মী নিয়োগ: বাংলাদেশিদের জন্য নতুন দিগন্ত
ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি সম্প্রতি ঢাকায় বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাতে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন যে, ইতালি বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী নিয়োগ করতে আগ্রহী। তাঁর মতে, ইতালিতে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটি অত্যন্ত তরুণ, পরিশ্রমী এবং ইতালির সমাজে সহজেই মিশে গিয়েছে।
Table of Contents
এই বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বৈধ অভিবাসনের সুযোগ সৃষ্টি করে মানবপাচার বন্ধ করার দিকে মনোযোগী হয়েছে ইতালি সরকার। তিনি উল্লেখ করেন, অনেক বাংলাদেশি ঝুঁকিপূর্ণ পথে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করেন, যা মানবিক ও নিরাপত্তাজনিত দিক থেকে অত্যন্ত সমস্যাজনক।
মূল আলোচনা পয়েন্টসমূহ:
- ইতালির পক্ষ থেকে বৈধভাবে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে আগ্রহ।
- মানবপাচার ও সংঘবদ্ধ অপরাধ প্রতিরোধে সহযোগিতা।
- দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা।
- বাংলাদেশিদের জন্য নিরাপদ ও বৈধ অভিবাসন নিশ্চিতকরণ।
ইতালি-বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন মোড়: দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা
এই আলোচনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি আগামী সেপ্টেম্বরের আগেই বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনা করছেন। এই সফরটি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ‘নবায়ন’ এবং ‘পুনরুজ্জীবিত’ করার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন, কিছু আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী বাংলাদেশিদের অবৈধ পথে বিদেশ যাওয়ার প্রলোভন দেখায়, যা মানবপাচারের মূল উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যার সমাধানে তিনি বলেন, “অভিবাসীরা ভুক্তভোগী, আর সুবিধাভোগীরা হচ্ছে পাচারকারীরা।”
বাংলাদেশ সরকার ইতালির সঙ্গে একযোগে কাজ করতে আগ্রহী এবং ইতালির প্রস্তাবিত “নতুন সহযোগিতার নীতি”কে স্বাগত জানিয়েছে। এটি শ্রমবাজারের উন্নয়নের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ দমনে দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্ব গড়ে তুলবে।
ইতালিতে বাংলাদেশি শ্রমবাজার: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বর্তমানে ইতালিতে প্রায় ১.৫ লাখের বেশি বাংলাদেশি বসবাস করছেন। এদের অনেকেই রেস্তোরাঁ, নির্মাণ, কৃষি, পরিষেবা খাতে কর্মরত। ইতালি সরকার এই কমিউনিটিকে ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করে থাকে। ফলে নতুন নিয়োগের পরিকল্পনা আরও বিস্তৃতভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে।
যেহেতু বৈধ পন্থায় কর্মী নিয়োগ করা হলে সেটা একদিকে যেমন কর্মীদের জন্য নিরাপদ, অন্যদিকে সরকারের জন্য রাজস্বের উৎস হিসেবেও কার্যকর হতে পারে।
সতর্কতা ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি
এই প্রক্রিয়ার সফল বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যেমন:
- প্রতারণামূলক এজেন্সি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা।
- কর্মীদের স্কিল উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।
- দুই দেশের সরকারের মধ্যে নিয়মিত কূটনৈতিক আলোচনা।
এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হলে কেবল ইতালি নয়, অন্য দেশেও বৈধ অভিবাসনের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।
যা জানা গেলো: ইতালির আগ্রহ ও বাংলাদেশের প্রস্তুতি
মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি ও অধ্যাপক ইউনূসের মধ্যে আলোচনা এই ইঙ্গিত দেয় যে, সামনে আরও বৃহৎ আকারে কর্মী প্রেরণ কার্যক্রম শুরু হতে পারে। দুই দেশের মধ্যকার ইতিবাচক সম্পর্ক এই উদ্যোগকে সফল করতে সহায়ক হবে।
ANSA সহ অন্যান্য বিশ্বস্ত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এই সফর ও আলোচনার খবর প্রকাশিত হয়েছে, যা এর গুরুত্ব বাড়িয়ে তোলে।
উল্লেখযোগ্য যে, ইতালি শুধুমাত্র শ্রম নয়, ব্যবসা-বিনিয়োগেও আগ্রহী। ফলে এই সম্পর্কের বিস্তার বহুমাত্রিক হতে পারে। বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য এটি একটি সোনালী সুযোগ।
বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে ইতালি যাওয়ার সুযোগ একটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের ইঙ্গিত।
FAQs
- ইতালি বাংলাদেশ থেকে কত ধরনের কর্মী নিয়োগ করতে চায়?
প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন খাত যেমন কৃষি, নির্মাণ, রেস্তোরাঁ এবং সেবা খাতে নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। - এই নিয়োগ প্রক্রিয়া কখন শুরু হবে?
এখনো আনুষ্ঠানিক তারিখ ঘোষণা হয়নি, তবে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে এবং সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগেই অগ্রগতি আশা করা যাচ্ছে। - বাংলাদেশ সরকার কী ধরনের সহযোগিতা করবে?
বাংলাদেশ সরকার প্রশিক্ষণ, স্ক্রিনিং ও অবৈধ অভিবাসন রোধে কড়া পদক্ষেপ নেবে। - মানবপাচার বন্ধে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?
দুই দেশ একসাথে কাজ করবে এবং পাচারকারী চক্র বন্ধে নীতিমালা তৈরি করবে। - কীভাবে জানবো কোন সুযোগ বৈধ?
সরকার অনুমোদিত রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করতে হবে এবং দালালের প্রলোভনে পড়া যাবে না।
ইতালি থেকে বৈধভাবে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুধুমাত্র বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না, বরং দুই দেশের সম্পর্কেও এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।