টেসলা, স্পেসএক্স ও নিউরালিংকের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর সাহসী ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে সব সময়ই আলোচনায় থাকেন। ১৯৯৮ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে এমন একটি ধারণা ব্যক্ত করেছিলেন, যা তখনকার অনেকের কাছে ছিল একেবারে অবিশ্বাস্য। প্রলাপ বলেও উড়িয়ে দিয়েছেন অনেকে। তবে আজ ২০২৪ সালে এসে তার সেই ভবিষ্যদ্বাণী প্রায় পুরোপুরি সত্য প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি সেই বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এবং তা নিয়ে আলোচনা নতুন করে শুরু হয়েছে।
১৯৯৮ সালে সিবিএস সানডে মর্নিং অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাস্ককে ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়। তিনি উত্তর দেন এটি একটি বিপ্লবী মাধ্যম হবে, যা একসময় সব ধরনের প্রচলিত মাধ্যমকে নিজের মধ্যে একীভূত করে নেবে। তিনি বলেছিলেন, ‘ইন্টারনেট সব মাধ্যমের সমষ্টি। এটি মাধ্যম বা মিডিয়ার সর্বশেষ রূপ। মুদ্রিত, সম্প্রচার এবং রেডিও—সবই ইন্টারনেটে মিশে যাবে। এটি প্রথম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন দ্বিমুখী যোগাযোগমাধ্যম, যেখানে ব্যবহারকারীরা নিজের ইচ্ছেমতো কনটেন্ট নির্বাচন করতে পারবেন—যখন ও যেভাবে তাঁরা চান।
তখন ইন্টারনেট ছিল একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে এবং ইলন মাস্কের এই মন্তব্য বেশির ভাগ মানুষই ‘অবিশ্বাস্য’ কিংবা ‘পাগলামি’ মনে করেছিলেন। কারণ, ১৯৯৮ সালে ইন্টারনেটের বাণিজ্যিক ব্যবহারের বয়স ছিল মাত্র সাত বছর। এটি তখনো মূলত ই–মেইল এবং সাধারণ ওয়েবসাইট ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম তখনো কল্পনার বাইরে। এমন একসময়ে মাস্কের এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যিই ছিল সময়ের অনেক আগের চিন্তা। তবে মাস্ক তখনই এমন একটি ভবিষ্যতের কথা বলেছিলেন, যেখানে ইন্টারনেট হবে সব ধরনের যোগাযোগ, তথ্য এবং বিনোদনের মূল মাধ্যম।
মাস্কের ১৯৯৮ সালের সেই ভবিষ্যদ্বাণীর ভিডিও ক্লিপটি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন করে ভাইরাল হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর মাস্ক নিজেই ভিডিওটি শেয়ার করে মন্তব্য করেছেন, ‘অবিশ্বাস্য বিষয় হলো আমি যখন এই অত্যন্ত স্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণীটি করেছিলাম, তখন সবাই আমাকে পাগল বলেছিল।’
ভিডিওটি দেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র। কেউ মাস্ককে ‘দূরদর্শী’ হিসেবে প্রশংসা করেছেন, আবার কেউ মজা করে বলেছেন, ‘আপনি নিশ্চয়ই ভবিষ্যৎ থেকে এসেছেন।’ এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘এটা এখন সহজ মনে হলেও ১৯৯৮ সালে এটা ছিল একেবারে অদ্ভুত।’ কিছু সমালোচক এটিকে কেবল ‘সৌভাগ্যবশত সঠিক অনুমান’ বলে উড়িয়ে দিলেও বেশির ভাগ মানুষ এটিকে একেবারে সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে মানছেন।
আজকের দিনে ইলন মাস্কের সেই ভবিষ্যদ্বাণী অনেকাংশে সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। ইন্টারনেট এখন সব ধরনের মিডিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য হলো:
স্ট্রিমিং সেবা: নেটফ্লিক্স, ইউটিউব এবং স্পটিফাইয়ের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো এখন টিভি ও রেডিওর স্থান দখল করেছে এবং বিনোদনের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার), ইনস্টাগ্রাম এবং টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো মানুষের কনটেন্ট শেয়ার এবং গ্রহণের ধরন পুরোপুরি বদলে দিয়েছে।
ইন্টারঅ্যাকটিভ মিডিয়া: অনলাইন মাধ্যমগুলো এখন ব্যবহারকারীদের নিজের মতো করে কনটেন্ট দেখতে ও নির্বাচন করতে দিচ্ছে, যা মাস্কের সেই ‘দ্বিমুখী যোগাযোগ মাধ্যম’-এর ধারণার সঙ্গে মিলে যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।