দৃশ্যপট: ঢাকার মোহাম্মদপুরে বাস করেন রুমা আক্তার ও তার স্বামী সজীব। নতুন ফ্ল্যাট কিনে আনন্দের সীমা নেই, কিন্তু ইন্টেরিয়র ডিজাইনের দাম শুনে মনটা ভেঙে যায়। ডিজাইনারদের দেওয়া কোট দেখে মনে হলো, স্বপ্নের ঘর বানানো শুধু ধনীদের জন্যই সম্ভব। হতাশ রুমা একদিন স্থানীয় কারিগর রফিকুলের পরামর্শ নেন। রফিকুল তাকে দেখালেন কীভাবে পুরানো কাঠের বাক্সকে টেবিলে রূপান্তর করা যায়, কিভাবে স্থানীয় মৃৎশিল্পী জাহাঙ্গীরের তৈরি মাটির হ্যান্ডিক্রাফ্ট দিয়ে দেয়াল সাজানো যায়, আর পুরানো শাড়িকে কিভাবে কারুকার্যখচিত কুশন কভারে পরিণত করা যায়। ছয় মাস পর রুমার ফ্ল্যাটটি দেখে কেউ বলতে পারবে না এটা মাত্র ৩ লক্ষ টাকায় সাজানো হয়েছে! রুমার গল্পটি অসংখ্য বাংলাদেশির। একটি সুন্দর, আরামদায়ক বাসস্থান সবার অধিকার – আর তা গড়ে তোলা অসম্ভব নয়, যদি জানা থাকে ইন্টেরিয়র ডিজাইনে বাজেট গাইড এবং সাশ্রয়ী কিছু কৌশল।
ইন্টেরিয়র ডিজাইনে বাজেট গাইড: আপনার অর্থ সঠিকভাবে কাজে লাগানোর কৌশল
ইন্টেরিয়র ডিজাইনে বাজেট গাইড মানেই শুধু কম খরচা নয়, বরং আপনার অর্থের সর্বোচ্চ মূল্য পাওয়া। এটি একটি সচেতন পরিকল্পনা, যেখানে প্রতিটি টাকার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করে আপনি পেয়ে যান কাঙ্ক্ষিত রূপ ও কার্যকারিতা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, যেখানে বাড়ির দাম আকাশছোঁয়া এবং জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমাগত বাড়ছে, সেখানে সাশ্রয়ী ইন্টেরিয়র ডিজাইন কোনো বিকল্প নয়, বরং একান্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (BHBRI) একটি সমীক্ষা (২০২৩) অনুযায়ী, সঠিক পরিকল্পনা ও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করে ইন্টেরিয়র খরচ ৩০%-৫০% পর্যন্ত কমানো সম্ভব। মূল স্তম্ভগুলি হলো:
- অগ্রাধিকার নির্ধারণ (Priority Setting): আপনার অবশ্যই প্রয়োজনীয় (যেমন: ফাংশনাল কিচেন কার্নিশ, পর্যাপ্ত স্টোরেজ) এবং আবেগপ্রসূত চাহিদা (যেমন: ডেকোরেটিভ ওয়াল প্যানেল, অভিনব লাইটিং) আলাদা করুন। বাজেটের সিংহভাগ বরাদ্দ রাখুন অগ্রাধিকার আইটেমে।
- বাস্তবসম্মত লক্ষ্য (Realistic Goals): পুরো ঘর একসাথে পরিবর্তনের চাপ নেবেন না। ‘ফেজ-ওয়াইজ’ পদ্ধতি (Phase-wise Approach) গ্রহণ করুন – আগে বসার ঘর ও রান্নাঘর, পরে শোবার ঘর।
- স্থানীয় ও পুনঃব্যবহারযোগ্য উপকরণ (Local & Recycled Materials): আমদানিকৃত মার্বেলের বদলে নরসিংদীর মৃৎশিল্পের টেরাকোটা টাইলস, পুরানো শীতলপাটি দিয়ে তৈরি পার্টিশন, বা রাজশাহীর সিল্ক কাপড় দিয়ে সস্তা কার্টেন – এগুলোই আপনার বাজেটের বন্ধু। ঢাকার বলাকা বা চট্টগ্রামের রাউজানে পুনঃব্যবহারযোগ্য ফার্নিচারের দোকানগুলো ভালো আইটেম পেতে সহায়ক।
- DIY (Do It Yourself): ছোট ছোট কাজ নিজে করুন। দেয়ালে রং করা, পুরানো ফার্নিচারে নতুন কোট দেওয়া, ছোট টেবিল বানানো – ইউটিউব টিউটোরিয়াল (বাংলায় অনেক চ্যানেল, যেমন ‘ঘরে তৈরি’) দেখে শিখে নিন।
- পেশাদারের পরামর্শ (Strategic Professional Help): পুরো প্রজেক্টের জন্য ডিজাইনার ভাড়া করা বাজেটের বাইরে হলে, শুধুমাত্র একটি ‘কনসালটেশন আওয়ার’ (Consultation Hour) নিন (ঢাকায় ১০০০-৩০০০ টাকায় পাওয়া যায়)। তারা লেআউট, কালার স্কিম, বা ক্রিটিক্যাল পয়েন্টে মূল্যবান পরামর্শ দিতে পারবেন।
সাশ্রয়ী ইন্টেরিয়র ডিজাইনের হাতিয়ার: স্থানীয় বুদ্ধি, বৈশ্বিক স্টাইল
ইন্টেরিয়র ডিজাইনে বাজেট গাইড কে সফল করতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কিছু সুনির্দিষ্ট, কার্যকরী কৌশল জরুরি:
দেয়ালের জাদু (Wall Magic):
- রঙের শক্তি: পুরো ঘর রাঙানোর বদলে একটি এক্সেন্ট ওয়াল বেছে নিন। গাঢ় নীল, বনসাই সবুজ বা টেরাকোটার মতো উষ্ণ রং ব্যবহার করুন। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেইন্টস এন্ড কেমিক্যালস লিমিটেডের (BPCL) স্থানীয় ব্র্যান্ডের রং (যেমন: এশিয়ান পেইন্টসের ‘রয়েল’ লাইন বা বার্জার পেইন্টসের ‘একোনমি’ রেঞ্জ) মানসম্মত ও সাশ্রয়ী।
- টেক্সচারাল ইন্টারেস্ট: সস্তা জুট ফেব্রিক, হ্যান্ডমেড পেপার (জামালপুর/কুমিল্লার কারিগরদের কাছ থেকে), বা এমনকি কাঠের তক্তা দিয়ে ওয়াল প্যানেলিংয়ের ভাব তৈরি করা যায়।
- গ্যালারি ওয়াল: পরিবারের ছবি, স্থানীয় শিল্পীদের আঁকা ছবি, বা নিজের তৈরি আর্ট ফ্রেম করে ঝুলিয়ে দিন। ঢাকার দোয়েল চত্বর বা চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায় সপ্তাহান্তে বসা শিল্পীদের হাটে সাশ্রয়ী চিত্রকর্ম পাওয়া যায়।
ফার্নিচার: স্মার্ট চয়েস, টেকসই সমাধান (Furniture: Smart Choices, Lasting Solutions):
- পুনর্জন্ম (Upcycling): পুরানো কাঠের আলমারি? নতুন রং দিন, হ্যান্ডল বদলান। সোফার ফ্যাব্রিক ফ্যাড হয়ে গেলে? স্থানীয় কাপড়ের দোকান থেকে কটন বা লিনেন কিনে ঢাকার মিরপুরের দক্ষ দর্জির সাহায্যে রি-আপহোলস্টারি করুন।
- মডুলার ম্যাজিক: ঢাকার হাতিরপুল বা চট্টগ্রামের ষোলশহরে পাওয়া যায় এমন মডুলার ফার্নিচার (যেমন: IKEA-স্টাইলে) ভবিষ্যতে রুম বদলানো বা বাড়তি প্রয়োজনে সহজেই রিকনফিগার করা যায়।
- স্থানীয় কারিগরের শিল্প: টাঙ্গাইলের কাঠের কাজ, নরসিংদীর বাঁশের ফার্নিচার, সিলেটের কাঁথা স্টিচের কুশন – এসব শুধু সাশ্রয়ীই নয়, অনন্য এবং টেকসই। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (BSCIC) এর ওয়েবসাইটে স্থানীয় কারিগরদের তথ্য পেতে পারেন।
- সেকেন্ড-হ্যান্ড জয়: ফেসবুক গ্রুপ (যেমন: “Dhaka Buy/Sell Furniture”), বা ঢাকার গুলশান, বনানীর সেকেন্ড-হ্যান্ড ফার্নিচার শোরুমে (যেমন: ‘লেটস ডেকোর’, ‘থ্রিফটি নেস্ট’) প্রায় নতুন, মানসম্মত ফার্নিচার অর্ধেক দামে পাওয়া সম্ভব।
আলোকসজ্জা: বাতিঘর তৈরি (Lighting: Creating Ambience):
- লেয়ার্ড লাইটিং: একটি সেন্ট্রাল লাইট (সিলিং লাইট) সস্তা সমাধান নয়! টেবিল ল্যাম্প, ফ্লোর ল্যাম্প, ওয়াল স্কোন্সের কম্বিনেশন ব্যবহার করে গভীরতা ও মাত্রা যোগ করুন। ঢাকার নিউ মার্কেট বা চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পাওয়া যায় সাশ্রয়ী ও সুন্দর ডিজাইনের লাইট ফিক্সচার।
- ডিআইওয়াই ল্যাম্পশেড: মাটি, কাপড়, বাঁশ বা কাগজ দিয়ে নিজের স্টাইলের ল্যাম্পশেড বানানো খুব সহজ।
- LED-র রাজত্ব: বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী LED বাল্ব শুধু বিল কমায় না, দীর্ঘস্থায়ীও হয়। ব্র্যান্ডেড দোকান থেকে কিনুন (যেমন: ফিলিপস, ওরিয়েন্ট, প্রাণ-RFL) নিশ্চিত গুণমানের জন্য।
- সজ্জা ও আনুষাঙ্গিক: ব্যক্তিত্বের ছোঁয়া (Decor & Accessories: The Personal Touch):
- প্রকৃতির উপহার: টবে লাগান স্থানীয়, সহজে রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য গাছ (স্নেক প্ল্যান্ট, মানি প্ল্যান্ট, অ্যালোভেরা)। নারায়ণগঞ্জের ফুলের নার্সারি বা ঢাকার ধানমন্ডি লেকের পাশের দোকানগুলো ভালো বিকল্প। কাঁচের জারে শুকনো ফুল, কাঠের টুকরো বা নদীর পাথর সাজিয়ে রাখুন।
- টেক্সটাইল ট্রান্সফরমেশন: কুশন কভার, থ্রো, কার্পেট, কার্টেন – এসব সহজেই ঘরের মেজাজ বদলে দেয়। পুরানো শাড়ি, কুর্তা বা লুঙ্গির কাপড় দিয়েও তৈরি করা যায় অনন্য টেক্সটাইল আইটেম। বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্পের ঐতিহ্যকে কাজে লাগান।
- হ্যান্ডমেড হাইলাইট: নিজে মাটির পাত্র বানান (ঢাকার ধামরাই বা বগুড়ার কুমারপাড়ায় শর্ট কোর্স আছে), ব্লক প্রিন্টিং শিখুন, বা ম্যান্ডালা আঁকুন। এই আইটেমগুলোর আবেগগত মূল্য অসামান্য।
সফল বাজেট ইন্টেরিয়রের জন্য পরিকল্পনা ও নির্বাহ (Planning & Execution for Success)
একটি ইন্টেরিয়র ডিজাইনে বাজেট গাইড অনুসরণ করে সফলতা পেতে চাইলে অবশ্যই একটি কাঠামোবদ্ধ পদ্ধতি অনুসরণ করুন:
গভীর ডাইভ: আপনার চাহিদা ও স্পেস বোঝা (Deep Dive):
- ঘরের নিখুঁত মাপ নিন (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, দরজা-জানালার অবস্থান)।
- প্রতিটি রুমের প্রাথমিক ব্যবহার কী (কাজ, বিশ্রাম, মেলামেশা)? পরিবারের সদস্যদের রুটিন ও চাহিদা বিবেচনা করুন।
- বিদ্যমান আইটেমগুলোর মধ্যে কী কী পুনরায় ব্যবহার করা যায় (ফার্নিচার, আসবাবপত্র)?
- আপনার স্টাইল ইনস্পিরেশন কোথা থেকে আসে (পিন্টারেস্ট বোর্ড, ইনস্টাগ্রাম, ম্যাগাজিন)? একটি ‘মুড বোর্ড’ তৈরি করুন (ফিজিক্যাল বা ডিজিটাল)।
অবিচল বাজেট বরাদ্দ (Strict Budget Allocation):
- সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ: বাস্তবসম্মত হন। আপনার সঞ্চয় ও সামর্থ্য বিবেচনা করুন।
- বিভাজন (Breakdown): বাজেটকে প্রধান ক্যাটাগরিতে ভাগ করুন (যেমন: ফার্নিচার ৪০%, পেইন্টিং ও ওয়াল ট্রিটমেন্ট ২০%, লাইটিং ১৫%, ডেকোর ও এক্সেসরিজ ১৫%, কন্টিনজেন্সি ১০%)।
- ট্র্যাকিং টুল ব্যবহার: এক্সেল শীট বা বাজেটিং অ্যাপ (যেমন: Money Manager) ব্যবহার করে প্রতিটি খরচ ট্র্যাক করুন।
বুদ্ধিমত্তার সাথে শপিং (Shop Smart):
- মূল্য তুলনা: শুধু এক জায়গায় দেখে কিনবেন না। ঢাকার বিভিন্ন মার্কেট (হাতিরপুল, নিউ মার্কেট, উত্তরা সেক্টর ৭ এর ফার্নিচার স্ট্রিট), অনলাইন মার্কেটপ্লেস (দারাজ, Pickaboo, ইভ্যালি), এবং স্থানীয় কারিগরদের দাম তুলনা করুন।
- দরকষাকষি: বিশেষ করে স্থানীয় মার্কেট ও কারিগরদের সাথে দরাদরি করার সুযোগ আছে। ভদ্রভাবে চেষ্টা করুন।
- সিজনাল অফার ও সেল: ঈদ, পূজা, নববর্ষের সময় বা শপ-অন-শপের সেল (ঢাকার বসুন্ধরা সিটি, জামুনা ফিউচার পার্ক, চট্টগ্রামের সিটি সেন্টারে) কাজে লাগান।
- গ্রুপ অর্ডার: বন্ধু বা প্রতিবেশীরা একই আইটেম কিনতে চাইলে একসাথে অর্ডার দিয়ে ডিসকাউন্ট পেতে পারেন।
- কন্টিনজেন্সি ফান্ড: অপ্রত্যাশিতের জন্য প্রস্তুতি (Contingency Fund):
- সর্বদা বাজেটের ১০-১৫% অতিরিক্ত খরচের জন্য রিজার্ভ রাখুন (যেমন: রং করার সময় পুরানো ওয়ালের সমস্যা ধরা পড়া, ডেলিভারি চার্জ বাড়া)।
সাশ্রয়ী ইন্টেরিয়রের জন্য টেকসই চিন্তা (Sustainable Thinking for Affordable Interiors)
ইন্টেরিয়র ডিজাইনে বাজেট গাইড শুধু টাকা বাঁচানো নয়, টেকসই পছন্দেরও কথা বলে:
- গুণগত মানের প্রতি নজর: সস্তার লো-কোয়ালিটি আইটেম বারবার পরিবর্তনের চেয়ে একটু দামি কিন্তু টেকসই আইটেম বেছে নিন, দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হবেন।
- স্থানীয়কে সমর্থন: স্থানীয় কারিগর, মৃৎশিল্পী, কাঠমিস্ত্রিদের কাছ থেকে কেনা শুধু অর্থনীতিকেই চাঙ্গা করে না, পরিবেশবান্ধবও (পরিবহন কার্বন ফুটপ্রিন্ট কম)।
- টাইমলেস ডিজাইন: খুব দ্রুত ফ্যাশন আউট হয়ে যাবে এমন ট্রেন্ডি আইটেমের বদলে ক্লাসিক, টাইমলেস পিস বেছে নিন। নিউট্রাল রং, প্রাকৃতিক উপাদান, পরিষ্কার লাইন দীর্ঘস্থায়ী আবেদন রাখে।
আপনার বাজেট ফ্রেন্ডলি ইন্টেরিয়র যাত্রা শুরু করুন আজই!
ইন্টেরিয়র ডিজাইনে বাজেট গাইড অনুসরণ করে আপনি শিখে গেছেন যে, সীমিত সম্পদই সৃজনশীলতার জন্ম দেয়। এটি আপনার ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা এবং প্রিয় স্মৃতিকে ঘরের প্রতিটি কোণে ফুটিয়ে তোলার সুযোগ। ঢাকার গলি, সিলেটের চা বাগান, বা কক্সবাজারের সমুদ্রের ঢেউ – বাংলাদেশের রঙ, টেক্সচার ও শিল্প ঐতিহ্য আপনার ঘর সাজানোর অফুরান উৎস। ইন্টেরিয়র ডিজাইনে বাজেট গাইড এই পথযাত্রায় আপনার বিশ্বস্ত সঙ্গী। আজই শুরু করুন: একটি নোটবুক হাতে নিন, আপনার চাহিদাগুলো লিখুন, বাজেট ঠিক করুন, এবং স্থানীয় কারিগরদের সাথে কথা বলুন। মনে রাখবেন, সাশ্রয়ী টিপস ও সঠিক পরিকল্পনা আপনাকে এমন এক আবাসন দেবে, যা শুধু চোখেই নয়, হৃদয়েও শান্তি দেবে – আপনার স্বপ্নের ঘর, আপনারই তৈরি, আপনারই মতো অনন্য। আজই আপনার সাশ্রয়ী ইন্টেরিয়র ডিজাইনের যাত্রা শুরু করুন এবং ঘরটিকে সত্যিকারের ‘হোম’-এ পরিণত করুন!
জেনে রাখুন (FAQs)
প্র: কিভাবে খুব সীমিত বাজেটে (১-২ লক্ষ টাকা) আমার বসার ঘরটাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারি?
উ: ফোকাস করুন কয়েকটি শক্তিশালী পরিবর্তনে: একটি এক্সেন্ট ওয়ালে সাহসী রং করুন (স্থানীয় ব্র্যান্ডের রং ব্যবহার করে), পুরানো সোফার কভার বদলে সস্তা কিন্তু টেক্সচারাল ফ্যাব্রিক কিনে রি-আপহোলস্টারি করুন বা নতুন কভার দিন, স্মার্ট লাইটিং যোগ করুন (কিছু ফ্লোর ল্যাম্প/টেবিল ল্যাম্প), এবং ডিআইওয়াই প্রজেক্টে মন দিন – যেমন হাতে আঁকা ক্যানভাস বা কাঠের তৈরি শেলফ। প্রচুর গাছপালা যোগ করুন।
প্র: ঢাকার বাইরে থেকে সাশ্রয়ী ও মানসম্মত ইন্টেরিয়র আইটেম কোথায় পেতে পারি?
উ: প্রতিটি বিভাগীয় শহর ও জেলায় স্থানীয় কারিগর ও ছোট শো-রুম আছে। খুলনার কুমারপাড়া (মৃৎশিল্প), নরসিংদী/কুমিল্লা (হ্যান্ডমেড পেপার, বাঁশের সামগ্রী), সিলেট (কাঁথা স্টিচ, বেতের ফার্নিচার), রাজশাহী (সিল্ক, কটন টেক্সটাইল), রংপুর/দিনাজপুর (কাঠের কাজ) বিখ্যাত। স্থানীয় বাজারে খোঁজ নিন, স্থানীয় কারিগর সমবায় সমিতির সাথে যোগাযোগ করুন। অনলাইনেও অনেক স্থানীয় বিক্রেতা এখন পণ্য তুলছেন।
প্র: ডিআইওয়াই (DIY) প্রজেক্ট শুরু করার জন্য সবচেয়ে সহজ আইডিয়া কী কী?
উ: শুরু করুন সহজ কাজ দিয়ে: পুরানো ফার্নিচার রিফিনিশ করা (স্যান্ডিং, প্রাইমিং, রং/ভার্নিশ দেওয়া), কাঠের ক্রেট বা বাক্সকে শেলফ/সাইড টেবিলে রূপান্তর করা, নিজে কুশন কভার সেলাই করা (বেসিক সেলাই দক্ষতাই যথেষ্ট), দেয়ালে স্টেনসিল বা টেপ ব্যবহার করে প্যাটার্ন তৈরি করা, বা মাটির সাধারণ পাত্রে রং করা। ইউটিউবে বাংলা DIY টিউটোরিয়াল প্রচুর আছে।
প্র: ইন্টেরিয়রে রং ব্যবহারে সাশ্রয়ী ও টেকসই কিছু টিপস কী?
উ: স্থানীয় ব্র্যান্ডের ভালো কোয়ালিটির রং (যেমন: এশিয়ান পেইন্টসের ‘রয়েল’, বার্জার পেইন্টসের ‘ওয়ালসঅল’) চয়েস করুন – এগুলো কম কোয়ালিটির রঙের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী, বারবার রং করার ঝামেলা কমে। নিউট্রাল বেস কালার (হালকা ক্রিম, গ্রে, সাদা) ব্যবহার করুন, যা সহজে এক্সেসরিজের রং বদলিয়ে রুমের লুক পরিবর্তন করতে দেয়। এক্সেন্ট রং শুধু একটি ছোট দেয়ালে বা ফিচার এলাকায় প্রয়োগ করুন।
প্র: পেশাদার ইন্টেরিয়র ডিজাইনার না ভাড়া করলে, ডিজাইন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্যের জন্য কী করব?
উ: অনেক বিকল্প আছে: অনলাইন ইন্টেরিয়র ডিজাইন পরিষেবা (e.g., Fiverr, Upwork-এ দক্ষিণ এশিয়ান ডিজাইনাররা সাশ্রয়ী রেটে কাজ করেন), শুধুমাত্র পরামর্শের জন্য ঘণ্টাপ্রতি ভাড়া (ঢাকায় অনেক ফ্রিল্যান্স ডিজাইনার এটা অফার করেন), পিন্টারেস্ট/ইনস্টাগ্রাম থেকে আপনার পছন্দের স্টাইল বিশ্লেষণ করে নিজের মুড বোর্ড বানানো, বা ফার্নিচার শোরুমের (যেমন: অটব, হোমস) ফ্রি ডিজাইন কনসালটেশন সুবিধা কাজে লাগানো।
প্র: বাজেট ইন্টেরিয়র ডিজাইনে সবচেয়ে বড় ভুলগুলো কী কী?
উ: প্রধান ভুলগুলো হলো: পর্যাপ্ত পরিকল্পনা ও গবেষণা না করা (আবেগে চোখ বন্ধ করে কেনা), অগ্রাধিকার না ঠিক করা (গুরুত্বপূর্ণ জিনিসে বাজেট শেষ করে ফেলা), গুণগত মান উপেক্ষা করা (অতি সস্তা, নিম্নমানের জিনিস কিনে যা দ্রুত নষ্ট হয়), সঠিক মাপ না নেওয়া (বড় সোফা কিনে ফেললে রুম ঠেসে যায়), প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের প্রবাহকে অবহেলা করা (ভারী পর্দা বা বড় ফার্নিচার দিয়ে জানালা ঢেকে দেওয়া), এবং কন্টিনজেন্সি ফান্ড না রাখা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।