আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক (আইপিইএফ) চালুর পাঁচ মাসের মাথায় এতে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কানাডা। বৃহস্পতিবার ১৩ জাতির এ জোটে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেয় অটোয়া।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইপিইএফ জোটকে এই অঞ্চলে চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কৌশল হিসেবে দেখা হয়। এদিন কানাডার রাজধানী অটোয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানিয়া জোলি। এতে মেলানিয়া প্রতিশ্রুতি দেন, কানাডা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বড় ভূমিকা পালন করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গভীর করবে।
মেলানিয়া জোলি বলেন, ‘আমি ঘোষণা করতে পেরে আনন্দিত যে কানাডা আইপিইএফ নামে পরিচিত ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্কের সদস্যপদ হতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুই দেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে কর্মপন্থাগুলোকে আর সংহত করতে প্রথমবারের মতো কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত সংলাপ করতে সম্মত হয়েছে।’ কানাডার এমন পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘আগামীতে যুক্তরাষ্ট্র নতুন সদস্যদের বিবেচনার জন্য একটি প্রক্রিয়া উন্নয়নের বিষয়ে অন্য সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরামর্শ করবে।’ বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনাই, ফিজি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামকে আইপিইএফের সদস্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাইডেন গত মে মাসে এ জোট প্রবর্তন করেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এশিয়া প্যাসিফিক, উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার ১২ দেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ট্রান্স-প্যাফিসিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) থেকে নিজ দেশকে প্রত্যাহার করেন। এরপর বাকি দেশগুলো গঠন করে কম্প্রেহেনসিভ অ্যান্ড প্রোগ্রেসিভ ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ নামে বহুপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি। কানাডা বর্তমানে ওই টিপিপির সদস্য। এ জোটে যোগ দেওয়ার জন্য চীন আবেদন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন এই অঞ্চলে তাদের অর্থনৈতিক নেতৃত্ব পুনরুদ্ধার করায় মনোনিবেশ করছে। এ জন্য তারা আইপিইএফর মাধ্যমে বাণিজ্য, সরবরাহ ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও ন্যায্য অর্থনীতির উপর গুরুত্বারোপ করছে।
কানাডার বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও সিইও গোল্ডি হায়দার, অটোয়ার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘আইপিইএফে যোগদান এই অঞ্চলে কানাডার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান মিত্র এবং একটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় শক্তি হওয়া সত্ত্বেও কানাডা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই অঞ্চলে ওয়াশিংটনের কৌশলগত পদক্ষেপগুলো থেকে বেশ দূরে ছিল।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোয়াড ও অকাসের মতো জোটে নেই কানাডা। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক উড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলারসের কানাডা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ক্রিস্টোফার স্যান্ডের মতে, ইন্দো-প্যাসিফিক সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার আলোচনা ‘স্পষ্টভাবে সমাপ্ত হয়েছে’।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের উপলব্ধি করা উচিত যে ইন্দো-প্যাসিফিকের অর্থনৈতিক সম্পর্কের জন্য তাদের লক্ষ্যগুলো তখনই উপকৃত হবে যখন ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে তার অংশীদার হিসেবে কানাডার মতো দেশ অংশ নেয়।’
কানাডা ২০২০ সালের শেষ নাগাদ একটি নতুন ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি নিয়ে আসবে বলে আশা করা হয়েছিল। সেই দীর্ঘ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কাঠামো কখনই বাস্তবায়িত হয়নি, অটোয়া জুনে কানাডার ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি প্রণয়নের জন্য এবং চীনের সঙ্গে কানাডার সম্পর্ক সমাধানের জন্য একটি ইন্দো-প্যাসিফিক উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে। বেইজিং-অটোয়া সম্পর্ক কয়েক বছর ধরে উত্তেজনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে কানাডা হুয়াওয়ের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝো গ্রেপ্তার করে। এরপর প্রতিক্রিয়ায় চীন দুই কানাডীয়কে আটক করে। কানাডার সাবেক রাষ্ট্রদূত র্যান্ডলফ মানক বিশ্বাস করেন, কয়েক বছর ধরে ইন্দো-প্যাসিফিক ও চীন ইস্যুতে অটোয়া পক্ষাঘাতগ্রস্ত ছিল। কানাডার বৃহস্পতিবারের পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তিনি।
এই সাবেক রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, আশা করা হচ্ছে যা আগামীতে আমাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াবে।’
সোমালিয়ায় শতাধিক নিহতের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের নিন্দা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।