আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইন্দোনেশিয়ায় যেসব নারী সেনাবাহিনীর যে কোন শাখায় যোগদান করতে চায়, কয়েক দশক ধরে চালু প্রথা অনুযায়ী তাদের কুমারীত্বের পরীক্ষা দেয়ার বিধান আছে। তাদের হাইমেন বা সতীচ্ছদ অক্ষত আছে কিনা তা দেখার জন্য একাধিক আঙুল ব্যবহার করে এই পরীক্ষা চালানো হয়। খবর বিবিসি বাংলার।
এই পরীক্ষায় কুমারীত্ব প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলে সেই নারীর আবেদন প্রত্যাখান করা হয় এবং সেনাবাহিনীতে কেরিয়ার গড়ার সেখানেই ইতি ঘটে।
কোন কোন ক্ষেত্রে এমনকি সেনাবাহিনীর অফিসার যে নারীকে বিয়ে করবেন, সেই নারীকেও একই পদ্ধতিতে প্রমাণ করতে হয় যে বিয়ের আগে তার যোনিমুখের সূক্ষ্ম পর্দা বা সতীচ্ছদ ছেঁড়েনি।
এই পরীক্ষা সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য নারী আবেদন প্রার্থীদের সার্বিক মেডিকেল পরীক্ষার অংশ, যে পরীক্ষায় একজন নারীর সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য শারীরিক সুস্থতা যাচাই করে দেখা হয়।
এ পরীক্ষা ‘বিজ্ঞানসম্মত ভাবে অপ্রমাণিত’
ইন্দোনেশিয়াতে কুমারীত্বের এই পরীক্ষা দিতে হয় শুধু নারী আবেদনকারীদের। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বেশ কয়েক বছর ধরে এই প্রথাকে বৈষম্যমূলক এবং নিপীড়নমূলক বলে এর নিন্দা জানিয়ে আসছে।
ইন্দোনেশিয়ায় হিউমান রাইটস ওয়াচের গবেষক অ্যান্ড্রিয়াস হাসর্নো বলছেন, কুমারীত্ব পরীক্ষা মেয়েদের ওপর একটা লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা এবং খুবই অপমানজনক একটা প্রথা।
মি. হাসর্নো বলছেন, এই পরীক্ষায় নারীর যোনিতে দুই আঙুল ব্যবহার করে তার সতীচ্ছদ বা হাইমেন অক্ষত আছে কিনা অর্থাৎ সে কুমারী কিনা তা পরীক্ষা করা হয়।
এই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাওয়া বহু নারী যারা মানবাধিকার সংগঠনটির সাথে কথা বলেছেন তারা বলেছেন, এটি তাদের জন্য খুবই কষ্টকর পদ্ধতি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে এক রিপোর্টে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে যে এই পরীক্ষার মাধ্যমে কুমারীত্ব পরীক্ষা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে অপ্রমাণিত পদ্ধতি।
কী বলছে ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোন নারীর সতীচ্ছদ অক্ষত থাকা বা না থাকার সাথে সে কোন যৌন সংসর্গ করেছে কিনা তার কোন যোগসূত্র নেই।
বিজ্ঞানীদের মতে কুমারীত্ব বলে চিকিৎসা পরিভাষায় কিছু নেই।
ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীর প্রধান আন্দিকা পেরকাসা এখন ঘোষণা করেছেন যে, যেসব নারী সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানের জন্য আবেদন করবেন, তাদের এধরনের পরীক্ষা করাতে হবে না।
এর আর প্রয়োজন হবে না। নির্বাচন প্রক্রিয়ার মূল লক্ষ্য কারও স্বাস্থ্যের অবস্থা যাচাই করে দেখা, এ মন্তব্য করে আন্দিকা পেরকাসা বলেন, সেনা বাহিনীতে যোগদানের জন্য এই পরীক্ষা “অবাঞ্ছিত”।
তিনি বলেন, এখন থেকে নারীরা শারীরিক প্রশিক্ষণে অংশ নেবার জন্য সক্ষম কিনা সেটা মূল্যায়ন করেই প্রার্থীদের যোগ্যতা বিবেচনা করা হবে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক মি. হাসর্নো বিবিসি মুন্ডোকে বলেছেন, সেনা প্রধান সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। এখন আঞ্চলিক ও ব্যাটালিয়ানের কমান্ডারদের এই নির্দেশ মানতে হবে এবং অপমানজনক এই পরীক্ষা যে অবৈজ্ঞানিক তা স্বীকার করে নেবার দায়িত্ব তাদের ওপরও বর্তাবে।
মি. হাসর্নো এক ইমেইলে জানান, সেনা বাহিনীর দৃষ্টান্ত যাতে নৌ ও বিমান বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডাররাও অনুসরণ করেন এবং এই প্রথার অবসান ঘটান, সে ব্যাপারেও চাপ বাড়াতে হবে।
এই সিদ্ধান্ত শুধু সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে নাকি ইন্দোনেশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর সকল শাখার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে তা এখনও স্পষ্ট করা হয়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশাবলী প্রকাশ করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।