গোপাল হালদার, পটুয়াখালী: পটুয়াখালী জেলার বাউফলের ইমরান হোসেনের (২৫) প্রেমের টানে ৭ হাজার ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে বাংলাদেশে এসেছে ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক নিকা উল ফিয়া(২৩)। দুজনের ভাষা ভিন্ন। বড় হয়েছেন ভিন্ন সংস্কৃতিতে। এত অমিল থাকা সত্ত্বেও ভালোবাসার টানে আজ বিয়ে করেছেন তাঁরা। আর এই যুগলদের এক নজর দেখতে ভীড় করছে উৎসুক জনতা।
বাউফল উপজেলার দাসপাড়া ইউনিয়নের খাজুর বাড়িয়া গ্রামের বাবা দেলোয়ার হোসেন ও মা বীথী আকতার দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে ইমরান হোসেন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। নিকি ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়া প্রদেশের জেম্বার এলাকার বাসিন্দা ইউলিয়ানতোর মেয়ে। তার মায়ের নাম শ্রী আনি।
ইন্দোনেশিয়ার কন্যা নিকি উল ফিয়া বাউফলে আসার বিষয়টি এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আশপাশের লোকজন ভিনদেশি বউ দেখতে ওই বাড়িতে ভিড় করছেন। তবে ভাষা বুজতে পারছেন না কেউ। স্বামী ইমরান ভাষান্তর করে সবাইকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
জানা যায় যে, ২০১৬ সালে ফেসবুকে ইন্দোনেশিয়ার মেয়ে নিকির সঙ্গে পরিচয় হয় ইমরানের। প্রথমে বন্ধুত্ব হলেও পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুই পরিবারের সম্মতিতে তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। নিকির পরিবারের কোনো আপত্তি না থাকায় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে এসে যান ইমরানের বাউফলের বাড়িতে। কিন্তু তার বয়স ২১ বছর না হওয়ায় সে বার বিয়ে করতে পারেননি। দেশে ফিরে যান নিকি উল ফিয়া।
সোমবার রাতে বাংলাদেশে আবার আসেন নিকি উল ফিয়া। তাকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পটুয়াখালী বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিয়ে আসেন ইমরান। আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে নিয়ে যান বাউফলে। বুধবার রাত ৮টার সময় স্থানীয় কাজির উপস্থিতিতে ১০১ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন ইমরান। আজ বিয়ের আনুষ্ঠিকতা শেষ পর্যায়ে। ইমরানের পরিবার ছোট পরিসরে বিয়ের আয়োজন করলেও বাড়িতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ উৎসুক জনতা।
ইমরানের দাদা সিদ্দিক হাওলাদার বলেন, ‘জীবনে অনেক প্রেমের কাহিনি শুনেছি। কিন্তু প্রথমে বিয়ে করতে এসে ফিরে যাওয়ার পাঁচ বছর পর আবার কোনো বিদেশি মেয়ে এসে বাংলাদেশি কোনো ছেলেকে বিয়ে করেছে। এমন প্রেমকাহিনি শুনিনি। এমন বিয়েতে সাক্ষী হতে পেরে খুবই আনন্দিত।’
খাজুর বাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ বিশ্বাস বলেন, ভিনদেশি বউ দেখতে আসছি। এলাকায় মানুষজন নতুন বউ দেখতে তো সবাই আসে। এই বউ তো আবার ইন্দোনেশিয়া থেকে আসছে। তারা সুখী হোক এই কামনা করি।
ইমরান হোসেন বলেন, নিকি সোমবার রাতে বাংলাদেশে আসে এরপর বুধবার সকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে এফিডেভিট করে তাকে বিয়ের জন্য বাড়িতে নিয়ে আসি। দুজনের ইচ্ছায় এক ডলার মান হিসাব করে ১০১ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করি।
ইন্দোনেশিয়ান তরুণী নিকি উল ফিয়া বলেন, বাংলাদেশ আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আজকের দিনের জন্য আমি খুব খুশি এবং আমি সারা জীবন বাংলাদেশ থেকে যাবো।
দাশপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ,এন,এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গতকাল রাতে তারা ১০১ টাকা দেনমোহরে বিয়ের কাজ সম্পন্ন। আজ বিয়ের শেষ পর্ব। স্বাভাবিকভাবে দূর-দূরান্তের মানুষ এমনিতেই আসবে। যেহেতু কনে ইন্দোনেশিয়া থেকে এসেছে। আমি তাদের দুজনের জন্য অনেক দোয়া করি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।