জুমবাংলা ডেস্ক : প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আজ আমরা শুনবো ইরানের প্রাচীন একটি গল্প। গল্পটি এরকম:
ছোট্ট একটা গ্রাম। ওই গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক ছিল বেশিরভাগ মানুষই কৃষক। কৃষিকাজের ক্ষেত্রে তাদের খ্যাতি এবং অভিজ্ঞতা ছিল সবার মুখে মুখে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে তারা ছিল যথেষ্ট পরিশ্রমি। সেইসঙ্গে ওই গ্রামের জমিও ছিল বেশ উর্বর। সুতরাং দেশের সবচেয়ে সবুজ অঞ্চল হিসেবে ওই গ্রামটিকে ধরা হতো। এইসব বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ হবার পরও ওই গ্রামের লোকজন ছিল অভাবী। তাদের উৎপাদিত তফল-ফসলের খুব কমই অবশিষ্ট ছিল। কারণ ওই গ্রামে ইঁদুর প্রবেশ করেছিল। ওরা কৃষকদের উৎপাদিত ফসল এমনভাবে খেয়ে ফেললো যে বেচারা কৃষকদের মাথায় হাত পড়ে গেল। সবখানেই ইঁদুর। কি ঘরে কি বাইরে কি রাস্তাঘাটে কি ধানক্ষেতে-সবখানেই ইঁদুরের উৎপাত। এমনকি থাকার ঘর, শোবার ঘর সেখানেও ইঁদুর। তবু রক্ষা পাওয়া যেত যদি গোলায় তারা তারা হামলা না করতো। একদিন এক অচেনা মানুষ ওই গ্রামে ঢুকলো। লোকটাকে দেখতে ভালোই মনে হলো। হাস্যোজ্জ্বল চেহারা, হালকা-পাতলা তবে লম্বাটে গড়ন। তার হাতে ছিল একটা বাঁশি।
হাতের সেই বাঁশিতে ভদ্রলোক এমন এমন অদ্ভুত সুন্দর এক সুর তুলতো যে যে-ই শুনতো হতবাক হয়ে যেত। যাই হোক, লোকটা খেয়াল করলো ওই গ্রামের মানুষজন খুব কষ্ট এবং অভাবের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। সে এক কৃষকের কাছ থেকে ইঁদুরের বিষয়টা জানলো। তারপর গ্রামের লোকজনকে জড়ো করে বললো: আমি তোমাদেরকে ইঁদুরের উপদ্রব থেকে বাঁচাবো। একটি ইঁদুরও আর এই গ্রামে থাকবে না। গ্রামের লোকেরা তো আশ্চর্য হয়ে গেল। তারা কতো চেষ্টাই না করেছিল কিন্তু কোনো কাজ হয় নি।
গ্রামের মেম্বার বললো: এটা করতে পারলে তোমাকে আমরা এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা দেবো। বাঁশিওয়ালা রাস্তায় গিয়ে বাঁশি বাজাতে শুরু করলো। অমনি আশ্চর্য এক কাণ্ড ঘটলো। লম্বা লাইন দিয়ে ইঁদুরেরা বাঁশিওয়ালার পেছনে পেছনে যেতে লাগলো। যেখানেই ইঁদুরের বাসা ছিল সেখান থেকেই বেরিয়ে এসে লাইনে যুক্ত হলো ইঁদুরের দল। বাঁশিওয়ালা এক রাস্তা থেকে আরেক রাস্তায় গিয়ে বাঁশি বাজালো আর দরোজা-জানালা-গর্ত থেকে ইঁদুরেরা বেরিয়ে আসতে লাগলো। বাঁশি বাজাতে বাজাতে লোকটি ওই গ্রামের বাইরে চলে গেল। যেতে যেতে বিশাল একটি নদী পড়লো। ওই নদীর তীরে খানিক দাঁড়ালো এবং তারপর নদীতে নেমে পড়লো।
লক্ষ লক্ষ ইঁদুরও বাঁশিওয়ালার সাথে নদীতে নেমে পড়লো এবং ডুবে মারা গেল। বাঁশিওয়ালা সাঁতার কেটে তীরে উঠে সেই গ্রামের চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে বললো: গ্রাম এখন ইঁদুরমুক্ত হয়ে গেছে। দেখুন একটা ইঁদুরও আর গ্রামে নেই। সব ইঁদুর চলে গেছে এবং একটা ইঁদুরও আর ফিরে আসবে না। এখন তোমার দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা আমাকে দাও। চেয়ারম্যান সাহেব হেসে দিলো। বললো: সামান্য ইঁদুর তাড়ানোর জন্য এতো টাকা দিতে হবে? আমার তো মনে হয় পঞ্চাশ মুদ্রাই যথেষ্ট। তোমার কী ধারণা? বাঁশিওয়ালা বিরক্ত হলো এবং পঞ্চাশ মুদ্রা গ্রহণ করলো না। উল্টো চেয়ারম্যানকে কথা অনুযায়ী কাজ করার পরামর্শ দিলো।
চেয়ারম্যান তো কিছুতেই মানলো না এবং বাঁশিওয়ালার সাথে দুর্ব্যবহার করে তাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিলো। বেচারা বাঁশিওয়ালাও ক্ষেপে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিলো গ্রামবাসীকে এমন শিক্ষা দেবে যেন সারা জীবন তার কথা মনে রাখে। পরদিন সকালে গ্রামের কৃষকরা যখন নিজ নিজ ক্ষেত খামারে কৃষিকাজ করার জন্য চলে গেল তখন বাঁশিওয়ালা অদ্ভুত সুরে বাঁশি বাজাতে শুরু করে দিলো। ওই বাঁশির সুর শুনে ঘরবাড়ি থেকে শিশুরা দৌড়ে দৌড়ে বেরিয়ে এসে বাঁশিওয়ালার পেছনে পেছনে ছুটলো। বাঁশিওয়ালা তার অদ্ভুত সুরের বাঁশি বাজাতে বাজাতে গ্রামের বাইরে চলে গেল। যেতে যেতে একেবারে পাহাড়-পর্বতের ভেতর একটা উপত্যকায় পৌঁছে গেল।
বাচ্চারাও তার পিছে পিছে সেই উপত্যকায় গিয়ে হাজির হলো। বাঁশিওয়ালা বাচ্চাদের সেই উপত্যকায় রেখে ফিরে গেল সেই গ্রামে। সেখানে গিয়ে দেখে নারীরা তাদের বাচ্চাদের জন্য কান্নাকাটি করছে ভীষণভাবে। গ্রামের চেয়ারম্যান এবং কৃষকরা এলো বাঁশিওয়ালার কাছে। তার কাছে ক্ষমা চেয়ে এবং অনুনয় বিনয় করে বললো: যেই স্বর্ণমুদ্রা দেবো বলে কথা দিয়েছিলাম সেগুলো তোমাকে দেবো যদি বাচ্চাদের ফিরিয়ে আনো। বাঁশিওয়ালা স্বর্ণমুদ্রাগুলো বুঝে নিলো। তারপর গ্রামের লোকজনকে সেই উপত্যকায় নিয়ে গেল যেখানে সে বাচ্চাগুলোকে নিয়ে রেখে এসেছিলো।
গ্রামের নারী-পুরুষ সবাই হণ্যে হয়ে বাঁশিওয়ালার পিছে পিছে দৌড়ে গিয়ে বাচ্চাদের উপত্যকায় খুঁজে পেল। যে যার বাচ্চাকে বুঝে নিয়ে তাদের বুকের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে আদর করে কোলে তুলে গ্রামে ফিরে গেল। মা-বাবা তাদের শিশু সন্তানকে ফিরে পেয়ে আনন্দে চোখে-মুখে অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল। বাঁশিওয়ালা অপেক্ষা করছিল গ্রামের লোকজন এবং তাদের বাচ্চাদের গ্রামে ফেরার জন্য। এখন তাদের ফিরে আসতে দেখে আবারও বাঁশিতে অদ্ভুত সুন্দর সুর তুলে বাজাতে বাজাতে সেই গ্রাম ত্যাগ করলো।# (‘৯৮ গল্প’ গ্রন্থ থেকে নেওয়া)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।