আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইসরাইল-সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিকের চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে ভারত। পশ্চিম এশিয়ার দুটি রাষ্ট্রের সঙ্গেই ভারতের মিত্রতা রয়েছে। পাশাপাশি দ্বিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইসরাইল-ফিলিস্তিনের মধ্যে সরাসরি আলোচনা শুরুর আহ্বান জানায় নয়াদিল্লি।
শুক্রবার (১৪ আগস্ট) ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। বৃহস্পতিবার ঘোষিত ইসরাইল-আমিরাত শান্তি চুক্তির বিষয়ে জয়শঙ্করকে অভিহিত করেন আবদুল্লাহ নাহিয়ান।
জয়শঙ্কর টুইটে বলেন, আমিরাত এবং ইসরাইলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষটি জানাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন জায়েদ ফোন করেছেন। পুরো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের এ পদক্ষেপকে আমরা মন থেকে স্বাগত জানাই।
নরেন্দ্র মোদি সরকারের জন্য এমন একটি খবর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, ওমান, বাহরাইনের মতো আরব দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। ইসরাইলের সঙ্গেও নয়াদিল্লি নিরাপত্তা এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ করছে।
করোনা মহামারীর আগে পশ্চিম এশিয়ায় প্রায় ৮০ লাখ ভারতীয় ছিল। ওই অঞ্চলের শান্তি এবং স্থিতিশীলতায় নয়াদিল্লির ব্যাপক স্বার্থ রয়েছে। নিয়িমিত সংবাদ সম্মেলনে পশ্চিম এশিয়াকে সম্প্রসারিত প্রতিবেশী বলে আখ্যা দেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব।
বলেন, পশ্চিম এশিয়ার উন্নয়ন, শান্তি, স্থিতিশলীতা বজায় রাখতে ভারত অব্যাহতভাবে সহায়তা করছে। তারা আমাদের সম্প্রসারিত প্রতিবেশী। সেই সূত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইসরাইলের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। উভয় দেশই ভারতের কৌশলগত অংশীদার।
তবে, ফিলিস্তিন ইস্যুতে ভারত তার ঐতিহাসিক সমর্থন অব্যাহত রাখবে। দ্বিরাষ্ট্র প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে গ্রহণযোগ্য উপায় খুঁজতে ফিলিস্তিন-ইসরাইল সরাসরি আলোচনা শুরু করবে বলে আমরা আশা করি। বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
বৃহস্পতিবার, আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ফোনালাপের পরই চুক্তির বিষয় ঘোষণা করা হয়। জর্ডান, মিশরের পর তৃতীয় কোনো আরব দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইসরাইলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনে চুক্তিতে সম্মত হলো।
আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমিরাত এবং ইসরাইলের প্রতিনিধিদের মধ্যে চুক্তি সই হওয়ার কথা। চুক্তি অনুযায়ী দূতাবাস প্রতিষ্ঠা, নিরাপত্তা, সরাসরি বিমান চলাচল, বিনিয়োগ, পর্যটন, প্রযুক্তি ও জ্বালানিখাতে সম্পর্ক স্থাপন করবে দু’দেশ। জুদিয়া এবং সামারিয়ায় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা বাতিল করবে ইসরাইল। একইসঙ্গে আরব এবং মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সম্প্রসারিত করবে তেল আবিব।
ফিলিস্তিনের ভূমিতে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা বাতিল করা ভারতের মতো দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যারা আরব রাষ্ট্রগুলোর পাশাপাশি ইসরাইলের সঙ্গে সমানভাবে সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। আমিরাতের পথ ধরে ওমান, বাহরাইনও ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে হাঁটবে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
তবে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ইরানসহ ওই অঞ্চলের কিছু দেশ চুক্তির কারণে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। চাবাহারে কৌশলগত বন্দর উন্নয়নে নয়াদিল্লির অংশীদারিত্ব বিবেচনায় বিষয়টি ভাবাচ্ছে ভারতকে।
এছাড়া, আরব দেশগুলো এবং ইসরাইলের কাছাকাছি আসাও ইরানের চিন্তার কারণ। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ চুক্তিকে ভয়াবহ এবং অবৈধ বলে আখ্যা দিয়েছেন। বলেন, চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের পিঠে ছুরিকাঘাত করেছে আমিরাত।
আমিরাতের চুক্তিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তুরস্কও। আবুধাবির ভণ্ডামি মানুষ কখনো ভুলবে না এবং ক্ষমা করবে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আঙ্কারা। তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ফিলিস্তিনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ফিলিস্তিনিদের হয়ে ইসরাইলের সঙ্গে সমঝোতার কোনো অধিকার নেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।