জুমবাংলা ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন, দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং ইসরাইল ও আমেরিকার সাথে আরববিশ্বের বিরোধ ও দ্বন্দ্বের চিরস্থায়ী অবসানের ক্ষেত্রে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সমস্যার চিরস্থায়ী একটা সমাধান হওয়া সে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা বিশ্বের রাজনীতি সচেতন সব মানুষই বোধহয় কমবেশি জানেন। বিশেষ করে ‘ইসরাইল বনাম আরববিশ্ব’ মনোভাব বা দ্বন্দ্ব আরবি ভাষার ও আরব ভূখন্ডের গন্ডি পেরিয়ে সময়ের সাথে ক্রমে যেভাবে ‘ইসরাইল বনাম মুসলিম বিশ্ব’ মনোভাব বা দ্বন্দ্ব হিসেবে রূপ ধারণ করেছে, তা একজন বাংলাদেশি মুসলমান হিসেবে সেই রাজনৈতিক প্রাথমিক জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই সবার কাছে বেশ কৌতূহলপূর্ণ একটা বিষয়। আজ আপনাদের জন্য রয়েছে দ্বিতীয় পর্ব।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ নাগাদ ও তার পরবর্তী সময় পূর্ব ইউরোপসহ বলতে গেলে পুরো ইউরোপ জুড়েই বিভিন্ন স্থানে বংশানুক্রমে ইহুদি অভিবাসীদের বসবাস ছিল।অত্যন্ত মেধাশক্তিসম্পন্ন, বুদ্ধিমান ও কর্মঠ জাতি হিসেবে পরিচিত ইহুদিরা ইউরোপে সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও অর্থনীতিকে অনেকাংশ নিয়ন্ত্রণ করত এবং অবধারিতভাবে অর্থের জোরে রাজনীতিকেও তারা কমবেশি প্রভাবিত করতে সক্ষম ছিল।
এতে করে কোনো কোনো দেশ সংখ্যাগুরু খ্রিস্টানদের মাঝে অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং সেসব দেশের ক্ষমতাসীন শাসকদের কারও কারও পক্ষে দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে ইহুদিদের ভূমিকা নিয়ন্ত্রণ বা সীমিত করা ক্রমে কঠিন হয়ে পড়ে। একদিন অর্থনৈতিকভাবে তুলনামূলক পশ্চাদপদ কিংবা সুবিধাবঞ্চিত সংখ্যাগুরু দেশবাসীর ক্ষোভ এবং অন্যদিকে অর্থনৈতিক সুবিধাভোগী সংখ্যালঘুদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি ও প্রভাব প্রতিপত্তি-ইহুদিদের নিয়ে দেশে দেশে সৃষ্ট রাজনীতির এই টানাপোড়ন ইউরোপ তৎকালীন সময়ে ‘দ্য জুয়িশ কোয়েশ্চিন’ (ইহুদি প্রশ্ন) নামে বহুল পরিচিত।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের তথাকথিত ইহুদি প্রশ্নের সমাধানকল্পে ব্রিটিশ সরকার স্বদেশের ইহুদিদের সাথে সমঝোতায় আসে এবং ১৯১৭ সালে বেলাফোর ডিক্লারেশন’ (বেলাফোর ঘোষণা) নামে ইতিহাসখ্যাত এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। যে চুক্তি অনুসারে আরব অধ্যুষিত তৎকালীন ফিলিস্তিনে ইহুদিদের স্থানীয়ভাবে বসবাসের জন্য সুনির্দিষ্ট একটা ভূমি (রাষ্ট্র নয় অবশ্য) প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। ইহুদিদের সাথে ব্রিটিশ সরকারের ‘বেলফোর’ চুক্তি করার আরেকটা উদ্দেশ্য ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ‘অটোম্যান এম্পায়ার’কে পরাজিত করে ফিলিস্তিন দখল করা যা কৌশলগত কারণে ইহুদিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন ছাড়া ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে রাজনৈতিকভাবে অর্জন করা সম্ভব ছিল না।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর নবগঠিত ‘লীগ অব নেশন্স’ (বহুজাতি সংগঠন) ব্রিটিশ সরকারকে দখলকৃত ফিলিস্তিনের ওপর ‘ম্যান্ডেট (প্রশাসনিক ক্ষমতা) প্রদান করে মূলত ব্রিটিশ সরকারের ‘বেলফোর’ চুক্তিকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে।
ব্রিটিশ সরকার যে সময় ফিলিস্তিনের ম্যান্ডেট পায়, সে সময় ফিলিস্তিনে বসবাসকারী ইহুদিদের আনুমানিক সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার মাত্র ১১ শতাংশ। অবশ্য নিজেদের নির্ধারিত পুণ্যভূমিতে ফিরে যাওয়ার এবং সেখানে ইহুদিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ও পরিকল্পনাকে সামনে রেখে অটোম্যান সুলতান ও তার এজেন্টদের কাছ থেকে ফিলিস্তিনের পতিত জলাশয় ও অনুর্বর ভূমি ইউরোপিয়ান ইহুদিরা গণহারে কিনতে শুরু করেছিল বিংশ শতাব্দীর প্রায় পুরো শেষ ভাগ জুড়েই। পরবর্তী বছরগুলোতে ব্রিটিশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদিদের অনেকে ফিলিস্তিনে মাইগ্রেট করতে শুরু করে এবং ১৯৩০-১৯৩১ সাল নাগাদ ফিলিস্তিনে ইহুদি জনসংখ্যা বেড়ে প্রায় ১৭ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায় ।
ইতোমধ্যে জার্মানে নাৎসিরা ক্ষমতায় এল ইহুদি বিদ্বেষ চরমে পৌছে এবং প্রক্রিয়াগতভাবে ইহুদিদেরকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়। ইহুদি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করায় জার্মানে নাৎসিরা ক্ষমতায় এলে ইহুদি বিদ্বেষ চরমে পৌঁছে এবং প্রক্রিয়াগতভাবে ইহুদিদেরকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়। ইহুদি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জার্মানদের এই কুখ্যাত পরিকল্পনা ইতিহাসে ‘দ্য ফাইনাল সল্যুশন’ (চূড়ান্ত সমাধান) নামে পরিচিত।
নিরাপত্তাহীনতার কারণে ও প্রাণভয়ে প্রচুর ইহুদি সে সময় জার্মান থেকে পালিয়ে ফিলিস্তিনে এসে আশ্রয় নিলে ফিলিস্তিনে ইহুদি অধিবাসীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। স্বভূমিতে ইহুদি জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান ও দ্রুততম বৃদ্ধি ফিলিস্তিনি আরবদেরকে শঙ্কিত করে তোলে অদূর ভবিষ্যতে অত্র এলাকায় নিজেদের জাতীয়তা ও আরব পরিচয় বজায় রাখার প্রশ্নে। এছাড়া ভূমি বেচাকেনা এবং ইহুদি মালিকানাধীন কল-কারখানা ও খামারে আরব মুসলিমদেরকে কাজ করতে না দেয়ার ইহুদিদের একপেশে ও বক্র নীতিমালা ভীষণ ক্ষিপ্ত করে তোলে ফিলিস্তিনি আরবদের। যার ফলশ্রুতিতে ফিলিস্তিনি আরবরা স্থানীয় ইহুদিদের সাথে পর্যায়ক্রমে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরবর্তীকালে দুই দালেই সন্ত্রাসী গ্রুপের জন্ম হয় এবং উভয় পক্ষে অসংখ্য সন্ত্রাসী হামলা ও গুপ্ত হত্যার ঘটনা ঘটে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।