আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চলমান তীব্র হারিকেন মৌসুমে একের পর এক হারিকেনের আঘাতে নাস্তানাবুদ বিভিন্ন রাজ্যের মার্কিনিরা। কিন্তু তীব্র ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর চেয়ে ইসরাইলকে সহায়তা করার দিকে বেশি মনোযোগী মার্কিন সরকার। আর এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ মার্কিনিরা।
গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে দেশের দক্ষিণ উপকূলে হারিকেন হেলেনের আঘাতে বিভিন্ন রাজ্যে ২৩০ জনেরও বেশি মারা গেছেন। এখন হারিকেন মিল্টনের ভয়ে তটস্থ ফ্লোরিডাবাসী। স্থানীয় সময় বুধ বা বৃহস্পতিবার উপকূলে আঘাত হানবে ভয়ংকর রূপ ধারণ করে এগিয়ে আসতে থাকা এই হারিকেন। এরই মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘরবাড়ি ছেড়েছেন হাজারো মানুষ। টাম্পার মেয়র জেন ক্যাস্টর সোমবার সিএনএনকে বলেছেন, হারিকেনটি আক্ষরিক অর্থেই বিপর্যয়কর রূপ ধারণ করেছে। আমি কোনো ভণিতা না করেই এটা বলে দিতে পারি যে, কেউ যদি এই ঝড়ের কবলে পড়েন তাহলে তিনি বাঁচতে পারবেন না।
এমন এক অজানা বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমেরিকানরা ইসরাইলের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের বিরামহীন মনোযোগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যেমনটা আইজ্যাক নামে এক মার্কিনি তার এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, আসন্ন হারিকেনটি এতটাই ভয়ংকর যে ফ্লোরিডার একজন অভিজ্ঞ আবহাওয়াবিদ এটি সম্পর্কে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং জলবায়ু পরিবর্তনরোধে হস্তক্ষেপের অনুরোধ করেন। অথচ আমাদের রাজনৈতিক নেতারা ইসরাইলকে অস্ত্র, অর্থসহায়তা ইত্যাদি চলমান রাখতেই বেশি আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্র মানবতার মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর যখন হারিকেন হেলেন আঘাত হানে সেদিনই ইসরাইল ঘোষণা দেয় যে, তারা তাদের চলমান সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখতে ৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন সহায়তা পেয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার বিকালে হোয়াইট হাউস এক প্রতিবেদনের বরাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, জরুরি পরিষেবা সংস্থার কাছে হারিকেন মিল্টন ও হেলেনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত তহবিল রয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ ফ্লোরিডার ডব্লিউএলআরএন এফএম জানিয়েছে, জরুরি পরিষেবা সংস্থায় হারিকেন মিল্টনের সম্ভাব্য ধ্বংসযজ্ঞ মোকাবিলা করার জন্য লোকবলের অভাব রয়েছে। সোমবার সংস্থাটির দৈনিক বিবৃতি থেকে জানা যায়, ওইদিন পর্যন্ত সংস্থাটির মাত্র ৯ শতাংশ কর্মী বা ১ হাজার ২১৭ জন কর্মী কাজ করছেন।
মিডল ইস্ট আই লিখেছে, মার্কিন প্রশাসনের আশ্বাস সত্ত্বেও সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্কিনিরা ইসরাইলকে যুদ্ধে অর্থায়নের জন্য করদাতাদের অর্থ ব্যবহার করা নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে চলেছে। কারণ খোদ মার্কিনিরাই আজ হারিকেনের কবলে পড়ে বাস্তুচ্যুত হতে শুরু করেছে। তাই তো ক্ষোভ প্রকাশ করে অ্যাস্ট্রো হাইমবো নামে আরেক মার্কিনি এক্সে লিখেছেন, আমাদের এমন অনেক লোক আছে যারা ‘ঘরের সমস্যা নিয়ে চিল্লিয়ে মরে’ কিন্তু যখন এক হারিকেনেই পূর্ব উপকূল লন্ডভন্ড করে ফেলেছে তখন কোনো ভাবান্তর না দেখিয়ে ইসরাইলকে বৈরুতে বোমা মারার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাঠাচ্ছে, এটা কি ক্রিকেট খেলা?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই প্রলয়ঙ্করী হারিকেন মোকাবিলায় মার্কিন সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে পোস্টের পাশাপাশি দক্ষিণ ক্যারোলিনার সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম – যার রাজ্যে হারিকেন হেলেনের আঘাতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে – তার একটি সাম্প্রতিক ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রাহাম ফক্স নিউজের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে গতানুগতিক সুরে বলেছিলেন, আমি পুরো দক্ষিণ ক্যারোলিনা ঘুরে দেখেছি এবং আমিও এখানকার বেশিরভাগ লোকের মতো খুব একটা ঘুমাইনি। কিন্তু দেখুন ইসরাইলে কী হচ্ছে। আমাদেরকে আমাদের বন্ধুকে সাহায্য করতে হবে যাতে করে যুদ্ধটি সেখান থেকে এখানে ছড়িয়ে পড়তে না পারে।
তার এমন বক্তব্যের পর মার্কিন নাগরিকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তারা এও বলছেন, তারা পুরোদমে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে- অনেক রাজনীতিবিদ বাড়ির চেয়ে ইসরাইল নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। কোজিমা নামে এক মার্কিনি লিখেছেন, হারিকেনে আক্রান্তদের জন্য ত্রাণ কার্যক্রমের চেয়ে ইসরাইলকে সহায়তা করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ- গ্রাহামের এমন ভিডিও দেখার পর আমি অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেছি এবং প্রায় কেঁদেই ফেলেছি। কী একটা জঘন্য জগতে বাস করছি আমরা…
আরেক ব্যবহারকারী গ্রাহামকে নিয়ে এক্সে লিখেছেন, এটি (ভিডিওটি) প্রতিটি আমেরিকানকে ক্ষুব্ধ করবে কেননা আপনার (আমেরিকান) নিরাপত্তা কিংবা সুস্থতা তাদের ভাবার বিষয় নয়। গ্রাহামের মতো লোকেরা মৃত আমেরিকানদের বুক ডিঙিয়ে হলেও ইসরাইলকে সাহায্য করেই যাবে। আরেকজন লিখেছেন, ‘কিন্তু দেখুন ইসরাইলে কী ঘটছে’- এটিই এখন মার্কিন সরকারের সরকারি স্লোগান ঘোষণা করা উচিত। সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরেও মার্কিন নাগরিকরা বাইডেন প্রশাসনের এই ইসরাইলপ্রীতি নিয়ে বহুগুণে সরব। বিক্ষোভ-সমাবেশ তো সেখানে নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তবে এত ক্ষোভের পরও মার্কিন প্রশাসন যে ইসরাইলকে সমর্থন করেই যাবে তা একপ্রকার নিশ্চিত। প্রকৃতপক্ষে সব ডেমোক্র্যাটই তা সে বা তারা বর্তমান নীতিকে সমর্থন করুক বা না করুক- মনে করেন যে, নীতিগত ও রাজনৈতিক কারণে ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের মত পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই কম। বাইডেন প্রশাসনের সাবেক এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, বাইডেন বিশ্বাস করেন ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে এবং তিনি মনে-প্রাণে এটি বিশ্বাস করেন। সুতরাং ইসরাইলে সহায়তা বন্ধের ক্ষেত্রে ‘আমার দৃষ্টিতে কোনো সম্ভাবনাই নেই’।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।