বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। আবিষ্কার করেছিলেন আপেক্ষিকতা, একাই আমূলে বদলে দিয়েছিলেন পদার্থবিজ্ঞানের মূল ধারা। তিনি আলবার্ট আইনস্টাইন। ১৯০৫ সালে প্রকাশিত আইনস্টাইনের প্রথম গবেষণাপত্রটি ছিল: On a Heuristic Point of View Concerning the Production and Transformation of Light. Annalen der Physik, সংখ্যা ১৭ (১৯০৫), পৃষ্ঠা ১৩২-১৪৮। এ প্রবন্ধে আইনস্টাইন আলোর কণা ফোটনের ধারণা প্রতিষ্ঠা করেন।
আলো তরঙ্গের আকারে যেমন থাকতে পারে, তেমনি থাকতে পারে গুচ্ছ গুচ্ছ কণার শক্তির আকারে। এই ধারণা ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠা করেছেন ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক। আলোর এ রকম গুচ্ছাকার শক্তিকে আলোর কোয়ান্টা বলা হয়। আলোর কোয়ান্টা বা ফোটনের ধারণার ওপর ভিত্তি করে আইনস্টাইন দেখান যে কোনো বস্তুর ওপর আলো প্রতিফলিত হওয়ার পর সে বস্তু থেকে কিছু ইলেকট্রন নির্গত নয়।
অবশ্য এ ইলেকট্রন বেরিয়ে আসার জন্য কমপক্ষে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তির দরকার হয়। আলো যেহেতু বিদ্যুৎ–চুম্বকীয় তরঙ্গ, বস্তুর ওপর আলোকপাতের ফলে বস্তু থেকে ইলেকট্রন নির্গত হওয়ার ঘটনাকে বলা যায় একধরনের বিদ্যুৎ–চুম্বকীয় বিকিরণ।
আরও সুনির্দিষ্টভাবে বললে বলা যায়, শক্তি = প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক x কম্পাঙ্ক। এই আবিষ্কারের জন্য আইনস্টাইনকে ১৯২১ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। অবশ্য এই পুরস্কার ঘোষিত হয়েছিল ১৯২২ সালে। আলোর কোয়ান্টাম তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে কোয়ান্টাম মেকানিকসের অনেক উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটে।
বিশেষ করে বোরের পরমাণু তত্ত্বের ভিত্তি স্থাপিত হয় আইনস্টাইনের ফোটন তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে। যদিও কোয়ান্টাম মেকানিকস নিয়ে আইনস্টাইন ও বোরের মধ্যে অনেক তর্কবিতর্ক হয়েছে, আইনস্টাইন কখনোই কোয়ান্টাম মেকানিকসের সূত্র মেনে নেননি। আইনস্টাইন বিশ্বাস করেছেন, বিশ্বের সব ঘটনার একটি সুনির্দিষ্ট পরিণতি থাকে।
১৯০৫ সালের মার্চ মাসে ফটোইলেকট্রিক ইফেক্টের পেপারটি পাঠানোর পরই পিএইচডির থিসিস নিয়ে আবার চিন্তা শুরু করেছেন আইনস্টাইন। আরেকটি থিসিস লিখতেই হবে তাঁকে। কিন্তু কোন বিষয়ে? এ নিয়ে দুবার থিসিস লিখেছেন তিনি। দুবারই তা প্রত্যাখ্যান করেছেন তাঁর সুপারভাইজার অধ্যাপক ক্লেইনার।
আইনস্টাইন গ্র্যান্ড ইউনিফিকেশন থিওরি বা একটি সমন্বিত তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। কিন্তু তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। ইতিমধ্যে ইউরোপে নাৎসিদের উত্থান ঘটায় আইনস্টাইনকে জার্মানি ছেড়ে আশ্রয় নিতে হয় যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে তিনি প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজে অধ্যাপক হিসেবে কাটিয়ে দেন বাকি জীবন। ১৯৫২ সালে আইনস্টাইনকে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়।
আইনস্টাইন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল আইনস্টাইনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পরও আইনস্টাইনের তত্ত্ব থেকে আরও অনেক নতুন বিজ্ঞানের শাখা–প্রশাখা বিকশিত হচ্ছে। আমেরিকান মহাকাশ সংস্থা নাসা ‘বিয়ন্ড আইনস্টাইন’ প্রকল্পের মাধ্যমে মহাবিশ্বের জন্মরহস্য, ব্ল্যাক হোল, ডার্ক এনার্জি ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা চালাচ্ছে। আইনস্টাইন কোনো ধরনের পরীক্ষাগার ছাড়াই যে গবেষণা-তত্ত্ব দিয়ে গেছেন সেগুলো এখনো কাজ করছে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের পথপ্রদর্শক হিসেবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।