Close Menu
Bangla news
    Facebook X (Twitter) Instagram
    Bangla news
    • প্রচ্ছদ
    • জাতীয়
    • অর্থনীতি
    • আন্তর্জাতিক
    • রাজনীতি
    • বিনোদন
    • খেলাধুলা
    • শিক্ষা
    • আরও
      • লাইফস্টাইল
      • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
      • বিভাগীয় সংবাদ
      • স্বাস্থ্য
      • অন্যরকম খবর
      • অপরাধ-দুর্নীতি
      • পজিটিভ বাংলাদেশ
      • আইন-আদালত
      • ট্র্যাভেল
      • প্রশ্ন ও উত্তর
      • প্রবাসী খবর
      • আজকের রাশিফল
      • মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার
      • ইতিহাস
      • ক্যাম্পাস
      • ক্যারিয়ার ভাবনা
      • Jobs
      • লাইফ হ্যাকস
      • জমিজমা সংক্রান্ত
    • English
    Bangla news
    Home ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পিতা-মাতার মর্যাদা: আপনার করণীয় কী
    লাইফস্টাইল ডেস্ক
    লাইফস্টাইল

    ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পিতা-মাতার মর্যাদা: আপনার করণীয় কী

    লাইফস্টাইল ডেস্কMd EliasAugust 19, 202515 Mins Read
    Advertisement

    রাজশাহীর এক প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাসরত ফাতেমা বেগমের (৬৮) চোখে আজও সেই দিনটির কথা ভাসে। ছেলেটা ঢাকায় ভাল চাকরি পেয়েছে, শীতের ছুটিতে বাড়ি আসবে বলে কথা। ফাতেমা বেগম রোজ সকালে উঠে ছেলের প্রিয় পায়েস রান্না করেন, হাতের জমানো টাকা দিয়ে নতুন কাঁথা কিনে এনেছেন। ছেলে এল না। ফোনে বলল, অফিসের জরুরি কাজ। ফাতেমার চোখ জলে ভরে গেল, কিন্তু কণ্ঠে শুধু বললেন, “তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করো বাবা, শরীরের যত্ন নিও।” এই নির্মম নীরবতা, এই আত্মত্যাগের গভীরতা – এটাই তো পিতা-মাতার হকের (حق الوالدين) জীবন্ত উদাহরণ, যা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পিতা-মাতার মর্যাদা: আপনার করণীয় কী এই প্রশ্নটির মর্মকে হৃদয়স্পর্শী করে তোলে। শুধু ফাতেমা বেগম নন, বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মা-বাবা তাদের স্বপ্ন, সুখ, আরাম সবকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে সন্তানকে মানুষ করার নামে যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন, ইসলাম সেই ঋণকে ‘অপরিশোধ্য’ বলে ঘোষণা করেছে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, আমরা সেই ঋণ শোধ করতে কতটুকু সচেষ্ট? পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে, আমাদের সমাজের বাস্তব প্রেক্ষাপটে, এই মর্যাদা রক্ষায় সন্তান হিসেবে আমাদের করণীয়ই বা কী?

    ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পিতা-মাতার মর্যাদা

    • ইসলামে পিতা-মাতার মর্যাদা: স্বর্গের দরজা যাদের সন্তুষ্টিতে
    • পিতা-মাতার অধিকার আদায়ে সন্তানের করণীয়: তত্ত্ব থেকে বাস্তব প্রয়োগ
    • মায়ের বিশেষ মর্যাদা ও করণীয়: তিনবারের অগ্রাধিকারের রহস্য
    • পিতা-মাতা যদি অমুসলিম হন? ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি
    • বাংলাদেশি প্রেক্ষাপট: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

    ইসলামে পিতা-মাতার মর্যাদা: স্বর্গের দরজা যাদের সন্তুষ্টিতে

    ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পিতা-মাতার মর্যাদা: আপনার করণীয় কী এই জিজ্ঞাসার উত্তরের প্রথম ধাপই হলো তাদের মর্যাদার প্রকৃত গভীরতা উপলব্ধি করা। ইসলামে মাতা-পিতার স্থান আল্লাহর হুকুম পালনের পরেই। পবিত্র কুরআনে একাধিক স্থানে সরাসরি আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি পিতা-মাতার সাথে সদাচরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এবং তাদের প্রতি малей অবজ্ঞা বা ‘উফ’ (হালকা বিরক্তি প্রকাশক শব্দ) বলতেও নিষেধ করা হয়েছে:

    “আর তোমার প্রতিপালক আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বলো। আর তাদের জন্য নম্রতার ডানা অবনমিত কর দয়াপরবশ হয়ে এবং বলো, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’” (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৩-২৪)

    এই আয়াতগুলোর তাৎপর্য অপরিসীম। আল্লাহ তা’আলা তাঁর নিজের ইবাদতের পরপরই পিতা-মাতার হকের কথা উল্লেখ করেছেন, যা তাদের মর্যাদার সর্বোচ্চ স্তর নির্দেশ করে। ‘উফ’ বলতে নিষেধ করা হয়েছে – এতটাই সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গি। রাসূলুল্লাহ (সা.) পিতামাতার সন্তুষ্টিকে আল্লাহর সন্তুষ্টির সাথে এবং তাদের অসন্তুষ্টিকে আল্লাহর অসন্তুষ্টির সাথে সরাসরি যুক্ত করেছেন। একটি প্রসিদ্ধ হাদিসে এসেছে:

    “আবু আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল কোনটি? তিনি বললেন, সময়মতো সালাত আদায় করা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করা।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

    এখানে গভীরভাবে চিন্তা করার বিষয়: সালাত, যা ইসলামের স্তম্ভ, তার পরেই স্থান পিতা-মাতার হকের। এটি তাদের মর্যাদার অকাট্য প্রমাণ। আরও হৃদয়বিদারক হলো, রাসূলুল্লাহ (সা.) মায়ের মর্যাদাকে বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলেছেন:

    “এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার সদাচরণের সর্বাধিক হকদার কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা।’ লোকটি আবার জিজ্ঞাসা করল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা।’ লোকটি তৃতীয়বার জিজ্ঞাসা করল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা।’ লোকটি চতুর্থবার জিজ্ঞাসা করল, ‘তারপর কে?’ তখন তিনি বললেন, ‘তোমার পিতা।’” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

    মায়ের এই তিনবারের অগ্রাধিকার তার গর্ভধারণ, প্রসবযন্ত্রণা, দুগ্ধপান এবং অক্লান্ত সেবা-যত্নের অসামান্য কষ্ট ও ত্যাগের স্বীকৃতি। ইসলামি স্কলারগণ ব্যাখ্যা করেন যে, মায়ের শারীরিক ও মানসিক কষ্টই তাকে পিতার তুলনায় অধিক হকদার বানিয়েছে। পিতার অবদান প্রধানত আর্থিক ও সুরক্ষামূলক। সুতরাং, ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পিতা-মাতার মর্যাদা: আপনার করণীয় কী – এর প্রথম ধাপই হলো এই মর্যাদার পরিমাণ ও গভীরতা হৃদয়ঙ্গম করা, যে মর্যাদা সরাসরি আল্লাহর আদেশে প্রতিষ্ঠিত এবং জান্নাত-জাহান্নামের সাথে সম্পর্কিত।

    পিতা-মাতার অধিকার আদায়ে সন্তানের করণীয়: তত্ত্ব থেকে বাস্তব প্রয়োগ

    শুধু মর্যাদা বোঝাই যথেষ্ট নয়, ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পিতা-মাতার মর্যাদা: আপনার করণীয় কী – এই প্রশ্নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্তর নিহিত রয়েছে এর বাস্তব প্রয়োগে। কুরআন-হাদিসের আলোকে এবং ইসলামিক স্কলারদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য বহুমুখী এবং অত্যন্ত সূক্ষ্ম:

    1. সম্মান, শ্রদ্ধা ও কোমল ব্যবহার: এটিই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ করণীয়। তাদের সাথে সর্বদা নম্র ও ভদ্র ভাষায় কথা বলা, কণ্ঠস্বর না বাড়ানো, তাদের সামনে বেয়াদবি বা অসম্মানজনক আচরণ থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা। তাদের উপদেশ বা মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া, এমনকি তা নিজের মতের সাথে না মিললেও ধৈর্য ধারণ করা। রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার পিতামাতাকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল অথচ তাদের খিদমত করে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না, তার ধ্বংস হোক!” (সহীহ মুসলিম)। এই হাদিসের ভয়াবহ সতর্কবার্তা তাদের সাথে দুর্ব্যবহারের ভয়ানক পরিণতি নির্দেশ করে।

    2. আর্থিক সহায়তা ও ভরণপোষণ: পিতা-মাতা যদি অসচ্ছল হন, বৃদ্ধ কিংবা অসুস্থ হন, তাদের ভরণপোষণ দেওয়া সন্তানের জন্য ফরজ (অবশ্য কর্তব্য)। শুধু খাওয়ানো-পরানো নয়, তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, বাসস্থান, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং জীবনযাত্রার অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করা। তাদেরকে কারো কাছে হাত পাততে বাধ্য করাও জুলুম। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, অনেক সন্তান শহরে চাকরি করলেও গ্রামের বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে সময়মতো আর্থিক সাহায্য পাঠাতে গড়িমসি করে, যা ইসলামি দৃষ্টিকোণে গুরুতর অবহেলা। মনে রাখতে হবে, তাদের সম্পদে আপনার হক আছে, কিন্তু আপনার সম্পদেও তাদের হক আছে। পিতা-মাতা যদি ধনীও হন, তবুও সন্তানের পক্ষ থেকে উপহার, খাবার পাঠানো বা তাদের জন্য কিছু ক্রয় করা সদাচরণের অংশ এবং সাওয়াবের কাজ।

    3. আজ্ঞাবহতা (যখন তা শরিয়ত পরিপন্থী নয়): পিতা-মাতার নির্দেশ পালন করা সন্তানের কর্তব্য, তবে শর্ত হলো সেই নির্দেশ আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর আদেশের পরিপন্থী না হওয়া। যেমন, তারা যদি শরিয়তবিরোধী কোনো কাজ করতে বলে (যেমন: সুদ খাওয়া, অন্যায়ভাবে কারো ক্ষতি করা), তবে তা মান্য করা যাবে না। তবে এমন ক্ষেত্রেও তাদের সাথে সদাচরণ ও নম্রভাবে ব্যাখ্যা করার নির্দেশ আছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, “সৃষ্টিকর্তার অবাধ্যতায় কোনো সৃষ্টির আনুগত্য করা যাবে না। আনুগত্য কেবল সৎকাজে।” (সহীহ বুখারী)। তাদের বৈধ নির্দেশ, যেমন পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া, ভালো চাকরি করা, সৎপথে চলা ইত্যাদিতে আনুগত্য প্রদর্শন করা জরুরি।

    4. শারীরিক ও মানসিক সেবা-যত্ন: বৃদ্ধাবস্থায় বা অসুস্থতায় পিতা-মাতার শারীরিক সেবা করা সন্তানের জন্য বিরাট ইবাদত। ওষুধ খাওয়ানো, খাবার খাওয়ানো, পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় সাহায্য করা, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া – এসবই সেবার অন্তর্ভুক্ত। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জেরিয়াট্রিক ওয়ার্ডে দেখা যায়, অনেক বৃদ্ধ মা-বাবা সন্তানদের অবহেলায় একাকী দিন কাটাচ্ছেন। ইসলাম এই ধরনের পরিত্যাগকে কঠোরভাবে নিষেধ করে। মানসিক সেবাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সাথে সময় কাটানো, কথা বলা, তাদের অতীত গল্প শোনা, তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা, তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রিয় বোধ করানো। একাকিত্ব তাদের জন্য ভয়ানক যন্ত্রণা। সন্তানের একটি ফোনকল, একটি সকালের সালাম, তাদের দিন আলোকিত করতে পারে।

    5. দোয়া চাওয়া ও তাদের জন্য দোয়া করা: পিতা-মাতার দোয়া সন্তানের জন্য অত্যন্ত বরকতময়। রাসূল (সা.) বলেছেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া অবশ্যই কবুল করা হয়: মজলুমের দোয়া, মুসাফিরের দোয়া এবং সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া।” (সুনানে ইবনে মাজাহ)। তাই জীবদ্দশায় তাদের নেক দোয়া পাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। পাশাপাশি, তাদের জন্য নিয়মিত দোয়া করা, বিশেষ করে তাদের সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু, ক্ষমা ও জান্নাতের জন্য দোয়া করা সন্তানের কর্তব্য। সূরা ইবরাহিমে বর্ণিত হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সেই দোয়া স্মরণীয়: “হে আমাদের রব! আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে ক্ষমা কর, আর সকল মুমিনকে ক্ষমা কর, যেদিন হিসাব কায়েম হবে।” (সূরা ইবরাহিম, আয়াত ৪১)।

    6. মৃত্যুর পরের করণীয়: পিতা-মাতার মর্যাদা ও অধিকার তাদের মৃত্যুর পরেও শেষ হয় না। সন্তানের করণীয়:
      • তাদের জন্য দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা: নিয়মিত তাদের রূহের মাগফিরাত ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য দোয়া করা।
      • তাদের ওয়াদা পূরণ করা: যদি তারা কোনো ওয়াদা বা অসিয়ত করে যান যা শরিয়তসম্মত, তা পূরণ করা।
      • আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা: বিশেষ করে তাদের বন্ধু ও নিকটাত্মীয়দের সাথে, যাদের সাথে তারা সুসম্পর্ক রাখতেন।
      • সদকায়ে জারিয়া: তাদের পক্ষ থেকে দান-খয়রাত, ওয়াকফ, মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ বা এমন কোনো ভালো কাজ করা যা চলতে থাকে এবং এর সাওয়াব তাদের রূহে পৌঁছতে থাকে। রাসূল (সা.) বলেছেন, “মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি আমল ছাড়া: (১) সদকায়ে জারিয়া (চলমান দান), (২) এমন জ্ঞান যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়, (৩) নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।” (সহীহ মুসলিম)।

    বাস্তব প্রয়োগের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়: বাংলাদেশের দ্রুত নগরায়ন, যৌথ পরিবার ভাঙন, অর্থনৈতিক চাপ এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবে অনেক সময় এই করণীয়গুলো পালন করা কঠিন হয়ে পড়ে। সন্তান দূরে থাকে, সময়ের অভাব থাকে, আর্থিক সক্ষমতা কম থাকে। কিন্তু ইসলাম এগুলোর অজুহাতকে গ্রহণযোগ্য বলে না। ছোট ছোট পদক্ষেপই বড় পরিবর্তন আনে। নিয়মিত ফোন করা, টাকা পাঠানো (অল্প হলেও), ছুটিতে তাদের সাথে সময় কাটানো, ছেলেমেয়েদের সাথে তাদের দেখা করানো, তাদের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেওয়া – এসবই মর্যাদা রক্ষার অংশ। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পিতা-মাতার মর্যাদা: আপনার করণীয় কী – এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে নিজের জীবনযাপন, অগ্রাধিকার এবং পিতা-মাতার প্রতি আমাদের দৈনন্দিন আচরণের দিকে তাকাতে হবে।

    মায়ের বিশেষ মর্যাদা ও করণীয়: তিনবারের অগ্রাধিকারের রহস্য

    পূর্বেই আলোচিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) মায়ের হককে তিনবার বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পিতা-মাতার মর্যাদা: আপনার করণীয় কী – এই আলোচনায় মায়ের অধিকার ও করণীয় নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে আলোকপাত করা অপরিহার্য। কেন এই বিশেষ অবস্থান?

    • অভূতপূর্ব শারীরিক ত্যাগ: গর্ভধারণের কষ্ট, প্রসব যন্ত্রণা (যাকে কুরআনে ‘করণ কষ্টকর’ বলা হয়েছে – সূরা লুকমান, আয়াত ১৪), দুগ্ধদান, রাত জেগে সেবা করা – এই কষ্টগুলো একমাত্র মা-ই জানেন। এই ত্যাগের ঋণ শোধ করা কোনো সন্তানের পক্ষেই সম্ভব নয়।
    • অবিরাম স্নেহ ও মমতার উৎস: মা হলেন নিঃশর্ত ভালোবাসা, মমতা ও নিরাপত্তার প্রধান আশ্রয়। তার দোয়াই সন্তানের জীবনে বরকতের চাবিকাঠি।
    • প্রথম শিক্ষক ও চরিত্র গঠনের ভিত্তি: সন্তানের প্রথম শিক্ষা, আদব-কায়দা, বিশ্বাসের বীজ বপনের দায়িত্ব মায়ের কাঁধেই প্রধানত বর্তায়।

    মায়ের প্রতি সন্তানের বিশেষ করণীয়:

    • অতিরিক্ত ধৈর্য ও কোমলতা: মায়ের আবদার, কথার পুনরাবৃত্তি, বা কিছুটা ভুলভ্রান্তিতে ধৈর্য ধারণ করা। তার বৃদ্ধাবস্থায় বা অসুস্থতায় বিশেষ নরম ও স্নেহপরায়ণ আচরণ করা। রাসূল (সা.)-এর মা-বাবার প্রতি আচরণ ছিল সর্বোচ্চ আদর্শ।
    • গোপনীয়তা ও লজ্জারক্ষায় বিশেষ যত্ন: মায়ের ব্যক্তিগত বিষয়, বিশেষ করে শারীরিক সেবার সময় তার লজ্জা ও সম্মান রক্ষা করা। সম্ভব হলে মেয়ে সন্তান বা অন্য নারী আত্মীয়ের মাধ্যমে এর দায়িত্ব পালন করা উত্তম, তবে প্রয়োজনে সন্তানকেই এগিয়ে আসতে হবে, তবে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সম্মানের সাথে।
    • তার ভালোবাসার ভাষা বুঝা ও পুরণ করা: প্রতিটি মা তার ভালোবাসা প্রকাশ করেন ভিন্ন ভাবে। কারো ভালোবাসা হয় রান্না করে, কারো সেবা করে, কারো কথা বলে। সন্তানের কর্তব্য তার ভালোবাসার ভাষা চিনে নিয়ে তাকে সেইভাবে সাড়া দেওয়া এবং তাকে বোঝানো যে তার প্রচেষ্টা মূল্যবান।
    • তার আত্মীয়-স্বজন, বিশেষ করে মামা-খালাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা: ইসলাম মাতৃকুলের আত্মীয়তার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখাও মায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ।

    বাংলাদেশের সমাজে মায়ের স্থান অনন্য। “মা” শব্দটির মাঝেই লুকিয়ে আছে সবচেয়ে বড় সান্ত্বনা ও শক্তি। তাই, ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পিতা-মাতার মর্যাদা: আপনার করণীয় কী – এই প্রশ্নের উত্তরে মায়ের প্রতি বিশেষ দায়িত্ববোধ ও সেবার মানসিকতা গড়ে তোলা অপরিহার্য। একটি প্রবাদই যথেষ্ট: “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।”

    পিতা-মাতা যদি অমুসলিম হন? ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি

    বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম পরিবার হলেও, কিছু ক্ষেত্রে পিতা-মাতা অন্য ধর্মাবলম্বী হতে পারেন, অথবা কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে তার পিতা-মাতা অমুসলিম থাকতে পারেন। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পিতা-মাতার মর্যাদা: আপনার করণীয় কী – এই প্রশ্নটি এমন পরিস্থিতিতে আরও জটিল হয়ে ওঠে। ইসলাম এ ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে:

    1. শরিয়ত পরিপন্থী নয় এমন সব ক্ষেত্রে সদাচরণ অব্যাহত রাখা: পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার, শ্রদ্ধা, ভরণপোষণ দেওয়া, শারীরিক-মানসিক সেবা করা – এসব দায়িত্ব তাদের ধর্ম নির্বিশেষে অব্যাহত থাকে। আল্লাহ কুরআনে নির্দেশ দিয়েছেন:

      “আর যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছুর শরিক স্থাপনে জোর করে, যার জ্ঞান তোমার নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। তবে দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহাবস্থান করো…” (সূরা লুকমান, আয়াত ১৫)
      এই আয়াতে অমুসলিম পিতামাতার সাথেও ‘সদ্ভাবে সহাবস্থান’ (معروف) করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। ‘মা’রুফ’ বলতে সদাচরণ, সম্মান ও ন্যায়সঙ্গত আচরণ বোঝায়।

    2. দাওয়াত দেওয়া: কোমলতা ও হিকমতের সাথে: সন্তানের কর্তব্য হিকমত (প্রজ্ঞা) ও উত্তম পদ্ধতিতে পিতা-মাতাকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়া। তাদের সামনে নিজের উত্তম চরিত্র, আচরণ ও সততা দ্বারা ইসলামের সৌন্দর্য উপস্থাপন করা। জবরদস্তি বা অসম্মানজনক আচরণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন:

      “আপনার প্রতিপালকের পথে আহ্বান করুন হিকমত ও উত্তম উপদেশ সহ এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন উত্তম পন্থায়…” (সূরা নাহল, আয়াত ১২৫)

    3. ধর্মীয় বিষয়ে আনুগত্য না করা: তারা যদি ইসলাম পরিত্যাগ করতে বা শির্ক-কুফরির কাজে লিপ্ত হতে বলে, তবে সে ক্ষেত্রে আনুগত্য করা যাবে না। তবে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা বা দুর্ব্যবহার করাও নিষিদ্ধ। সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে, তবে ঈমানের সীমারেখা অক্ষুণ্ণ রেখে। তাদের জন্য দোয়া করতে হবে যেন আল্লাহ তাদের হিদায়াত দান করেন।

    4. তাদের মৃত্যুর পরের করণীয়: অমুসলিম পিতা-মাতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা বা ইস্তিগফার করা যাবে না। কুরআনে ইবরাহিম (আ.) তার মুশরিক পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন, কিন্তু পরে যখন নিশ্চিত হলেন যে তিনি আল্লাহর শত্রু, তখন তিনি তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা বন্ধ করেন (সূরা তাওবা, আয়াত ১১৪)। তবে তাদের জন্য দোয়া করা যেতে পারে যে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করুন বা তাদের ব্যাপারে যা কল্যাণকর তাই করুন – এমন সাধারণ দোয়া করা যায়, কিন্তু সরাসরি ক্ষমা বা জান্নাতের দোয়া করা যায় না। তাদের সাথেও সুসম্পর্ক রেখেছিলেন এমন আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা যেতে পারে।

    সারকথা: অমুসলিম পিতা-মাতার সাথেও ইসলাম সদাচরণ, সম্মান ও ভরণপোষণের নির্দেশ দেয়, তবে ধর্মীয় আনুগত্যে নয়। দাওয়াত দিতে হবে প্রজ্ঞা ও উত্তম আচরণের মাধ্যমে। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পিতা-মাতার মর্যাদা: আপনার করণীয় কী – এই প্রশ্নের উত্তরে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর দিক, যাতে ভারসাম্য ও ইসলামি নির্দেশনা মেনে চলা জরুরি।

    বাংলাদেশি প্রেক্ষাপট: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

    ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পিতা-মাতার মর্যাদা: আপনার করণীয় কী – এই তাত্ত্বিক আলোচনাকে বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতায় রেখে দেখা দরকার। এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা চোখে পড়ে:

    চ্যালেঞ্জসমূহ:

    1. যৌথ পরিবার ভাঙন ও নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি: দ্রুত নগরায়ন ও অর্থনৈতিক চাপে যৌথ পরিবার প্রথা ভেঙে পড়ছে। সন্তানরা শহরে বা বিদেশে, বৃদ্ধ পিতা-মাতা গ্রামে বা একাকী শহরের ফ্ল্যাটে। দূরত্ব শারীরিক সেবা ও মানসিক সঙ্গ দেয়াকে কঠিন করে তোলে। “অফিসের ব্যস্ততা”, “ট্রাফিক জ্যাম”, “সন্তানদের পড়াশোনা” – এসব অজুহাত প্রকৃত সান্নিধ্য বাধাগ্রস্ত করে।
    2. অর্থনৈতিক চাপ ও ভরণপোষণের দায়: জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, বেকারত্ব বা স্বল্প আয় অনেক সন্তানকে পিতা-মাতার ভরণপোষণ দিতে অক্ষম করে তোলে। আবার কখনো কখনো সন্তানের আর্থিক সচ্ছলতা থাকলেও কৃপনতা বা অগ্রাধিকারে ভুল বসায় পিতা-মাতা অবহেলিত হন।
    3. প্রজন্মগত ব্যবধান ও মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব: দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধে প্রজন্মের মধ্যে ব্যবধান তৈরি হয়। বৃদ্ধ পিতা-মাতার রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি এবং যুবক সন্তানের আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির সংঘাত অনেক সময় শ্রদ্ধা ও ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়ে আসে। সন্তানরা পিতা-মাতাকে “অতীতবদ্ধ” বলে মনে করতে পারে, আর পিতা-মাতা সন্তানদের “অভদ্র” বা “অবাধ্য” ভাবতে পারেন।
    4. বৃদ্ধাশ্রমের প্রাদুর্ভাব (এক ভয়াবহ প্রবণতা): ইসলামে যেখানে পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশেও দুঃখজনকভাবে এই প্রবণতা বাড়ছে। শারীরিক অসুবিধা, সেবার অভাব বা পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে অনেক বৃদ্ধকে এভাবে পরিত্যক্ত করা হচ্ছে, যা ইসলামি শিক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক এবং মানবিক দিক থেকেও লজ্জাজনক। বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তর বৃদ্ধদের সুরক্ষায় কাজ করলেও পারিবারিক দায়িত্বই মুখ্য।
    5. জ্ঞান ও সচেতনতার অভাব: অনেক মুসলিম সন্তানই ইসলামে পিতা-মাতার যে বিশাল হক ও মর্যাদা রয়েছে, তা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান রাখেন না। বিশেষ করে মৃত্যুর পরের করণীয় (দোয়া, সদকায়ে জারিয়া) বিষয়ে সচেতনতা কম।

    সম্ভাবনা ও করণীয়:

    1. ইসলামিক শিক্ষার প্রসার: মসজিদ, মাদ্রাসা, ইসলামিক সেন্টার এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমে পিতা-মাতার মর্যাদা ও করণীয় সম্পর্কে নিয়মিত আলোচনা, ওয়াজ, সেমিনার ও কন্টেন্ট প্রচার করা। স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমেও এই মূল্যবোধ শেখানো জরুরি।
    2. পারিবারিক বন্ধন শক্তিশালীকরণ: ছুটির দিনে বা ঈদের সময় পরিবারের সকল সদস্যের একত্রিত হওয়ার প্রচলনকে উৎসাহিত করা। পিতা-মাতার সাথে সন্তান ও নাতি-নাতনিদের সম্পর্ক গভীর করা। প্রযুক্তির ব্যবহার (ভিডিও কল) করে দূরত্ব কমিয়ে আনা।
    3. সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি: স্থানীয় সমাজ, মসজিদ কমিটি বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে একাকী বা অসহায় বৃদ্ধদের খোঁজখবর নেওয়া, প্রয়োজনীয় সাহায্য করা এবং তাদের সন্তানদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
    4. সন্তানের দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা: যুবসমাজকে তাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া। পিতা-মাতার ত্যাগের কথা চিন্তা করে কৃতজ্ঞতাবোধ জাগানো। ছোট ছোট কাজ (ফোন করা, ছোট উপহার পাঠানো, সময় দেওয়া) এর গুরুত্ব তুলে ধরা।
    5. রাষ্ট্রীয় সহায়তা: সরকারি পর্যায়ে বৃদ্ধ ভাতা, স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা বাড়ানো এবং পরিবারকে উৎসাহিত করার নীতিমালা প্রণয়ন।

    ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পিতা-মাতার মর্যাদা: আপনার করণীয় কী – এই প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইসলামি শিক্ষার সাথে সামাজিক বাস্তবতার সমন্বয় ঘটানো এবং পারিবারিক বন্ধনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। মা-বাবার হাসি মুখেই লুকিয়ে আছে পারিবারিক শান্তি ও সমৃদ্ধির চাবিকাঠি।

    জেনে রাখুন (FAQs)

    প্রশ্ন: ইসলামে পিতা-মাতার মর্যাদা কতটুকু?
    উত্তর: ইসলামে পিতা-মাতার মর্যাদা অপরিসীম। আল্লাহর ইবাদতের পরপরই তাদের হকের কথা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের প্রতি সামান্য অসন্তুষ্টি প্রকাশ (“উফ” বলা) নিষিদ্ধ। রাসূল (সা.) বলেছেন, পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তাদের অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি নিহিত। মায়ের হককে বিশেষভাবে তিনবার গুরুত্ব দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।

    প্রশ্ন: পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের প্রধান করণীয় কী কী?
    উত্তর: প্রধান করণীয়গুলোর মধ্যে রয়েছে:

    • সর্বদা সম্মান ও কোমল ভাষায় কথা বলা, ধৈর্য ধারণ করা।
    • তাদের ভরণপোষণ, চিকিৎসা ও প্রয়োজন মেটানো (যদি তারা অসচ্ছল বা অসুস্থ হন)।
    • শরিয়ত পরিপন্থী নয় এমন নির্দেশে আনুগত্য করা।
    • শারীরিক ও মানসিক সেবা-যত্ন নেওয়া, বিশেষ করে বৃদ্ধাবস্থায়।
    • জীবদ্দশায় তাদের দোয়া নেওয়া এবং তাদের জন্য নিয়মিত দোয়া করা।
    • মৃত্যুর পর তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা, ওয়াদা পূরণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও সদকায়ে জারিয়া করা।

    প্রশ্ন: পিতা-মাতা যদি অমুসলিম হন, তাহলে করণীয় কী?
    উত্তর: অমুসলিম পিতা-মাতার সাথেও সদাচরণ, সম্মান, ভরণপোষণ ও সেবা দেওয়া ফরজ। তবে ধর্মীয় বিষয়ে তাদের আনুগত্য করা যাবে না। প্রজ্ঞা ও উত্তম আচরণের মাধ্যমে তাদের ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতে হবে। তাদের মৃত্যুর পর সরাসরি ক্ষমা প্রার্থনা করা যায় না, তবে সাধারণ কল্যাণের দোয়া করা যায় এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক রাখা যায়।

    প্রশ্ন: মায়ের হক কেন পিতার চেয়ে তিন গুণ বেশি বলা হয়েছে?
    উত্তর: হাদিসে মায়ের হক তিনবার উল্লেখ করার কারণ হলো মায়ের গর্ভধারণ, প্রসব যন্ত্রণা, দুগ্ধদান ও শৈশবের অক্লান্ত সেবা-যত্নের অতুলনীয় শারীরিক ও মানসিক কষ্ট ও ত্যাগ। এই কষ্টের ঋণ শোধ করা সন্তানের পক্ষে অসম্ভব। তাই ইসলাম মাকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে।

    প্রশ্ন: পিতা-মাতার অবাধ্যতার ইসলামি শাস্তি কী?
    উত্তর: ইসলামে পিতা-মাতার অবাধ্যতা (উকুকুল ওয়ালিদাইন) কবিরা গুনাহ। রাসূল (সা.) একে সর্বনাশা পাপ বলে উল্লেখ করেছেন। হাদিসে এসেছে, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং তার আমল কবুল হবে না। দুনিয়াতেও তার জীবন অশান্তি ও বরকতহীনতায় ভরে উঠতে পারে।

    প্রশ্ন: পিতা-মাতার মৃত্যুর পর সন্তান কীভাবে তাদের মর্যাদা রক্ষা করতে পারে?
    উত্তর: মৃত্যুর পরও সন্তানের করণীয়:

    • নিয়মিত তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমতের দোয়া করা।
    • তাদের রেখে যাওয়া শরিয়তসম্মত ওয়াদা বা অসিয়ত পূরণ করা।
    • তাদের বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
    • তাদের পক্ষ থেকে সদকায়ে জারিয়া করা (যেমন: মসজিদ/মাদ্রাসা নির্মাণ, দাতব্য কাজ, কুরআন শিক্ষা ব্যবস্থা, এমন কিছু করা যা থেকে ক্রমাগত সাওয়াব তাদের রূহে পৌঁছায়)।
    • তাদের নামে হজ বা ওমরা আদায় করা।

    ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পিতা-মাতার মর্যাদা: আপনার করণীয় কী – এই গভীর তাত্পর্যবহ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা দেখেছি, এটি শুধু কিছু কর্তব্য পালনের তালিকা নয়; এটা ঈমানের পরীক্ষা, মানবিকতার মাপকাঠি, এবং জান্নাত-জাহান্নামের সাথে জড়িত এক মহান দায়িত্ব। ফাতেমা বেগমের মতো কোটি মা-বাবার নীরব কষ্ট, তাদের অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা, এবং তাদের জন্য আল্লাহর নির্দেশ আমাদের হৃদয়কে নাড়া দিতে বাধ্য। পবিত্র কুরআনের স্পষ্ট বাণী, রাসূল (সা.)-এর কঠোর সতর্কবাণী এবং আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র – সবকিছুই এক সত্যের দিকে ইঙ্গিত করে: পিতা-মাতার সন্তুষ্টি অর্জনই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সবচেয়ে নিশ্চিত সেতুবন্ধ। তাদের একটি হাসি, একটি সন্তুষ্টি আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের সাফল্যের চাবিকাঠি। তাদের প্রতি সামান্য অবহেলা বা দুর্ব্যবহার আমাদের আমলনামাকে অন্ধকার করে দিতে পারে। আজই এই মুহূর্তে, আপনার হাতের স্মার্টফোনটি ব্যবহার করুন, আপনার পিতা বা মাতাকে ফোন করুন। তাদের খোঁজ নিন। তাদের জানান আপনি তাদের কতটা ভালোবাসেন ও সম্মান করেন। তাদের জন্য দোয়া করুন। তাদের প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করুন। তাদের জীবদ্দশায়ই তাদের হক আদায়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, কাল আপনি হয়তো সময় পাবেন, কিন্তু হয়তো তারা আর পাশে থাকবেন না। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পিতা-মাতার মর্যাদা: আপনার করণীয় কী – এই প্রশ্নের উত্তরের চূড়ান্ত পদক্ষেপটি আপনার হাতেই। শুরু করুন আজই। আপনার মা-বাবার পায়ের নিচে যে জান্নাত পড়ে আছে, তা অর্জনের এই সুবর্ণ সুযোগ হেলায় হারাবেন না।

    জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।
    ‘পিতা-মাতার আপনার ইসলামি করণীয়, কী? থেকে দায়িত্ব, দৃষ্টিকোণ নীতিমালা ন্যায় প্রভা মর্যাদা মূল্যবোধ, লাইফস্টাইল শিক্ষা স্থান
    Related Posts
    অনলাইন ক্লাসে মনোযোগ ধরে রাখার কৌশল

    অনলাইন ক্লাসে মনোযোগ ধরে রাখার কৌশল: সহজ টিপস

    August 19, 2025
    শরীর ঠান্ডা রাখার প্রাকৃতিক উপায়

    শরীর ঠান্ডা রাখার প্রাকৃতিক উপায়: সহজ টিপস

    August 19, 2025
    সফল মানুষদের সকাল শুরু করার নিয়ম

    সফল মানুষদের সকাল শুরু করার নিয়ম: সাফল্যের রহস্য

    August 19, 2025
    সর্বশেষ খবর
    ব্রাক ব্যাংক

    ব্রাক ব্যাংকে কত মাসের এফডিআরে সুদের হার কত? রইল বিস্তারিত

    ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পিতা-মাতার মর্যাদা

    ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে পিতা-মাতার মর্যাদা: আপনার করণীয় কী

    Google Gemini App Adds Illustrated AI Storybook Creation

    Gemini Transforms Productivity in Google Docs and Gmail Workflows

    trade war

    U.S.-Brazil Diplomatic Crisis Deepens as Trade War Escalates

    BD Biman

    ফ্লাইটে বারবার কারিগরি ত্রুটি দেখা দেওয়ায় বিমানের কঠোর সিদ্ধান্ত

    The Diplomat Season 3

    The Diplomat Season 3 Premieres October 2025: Political Turmoil Escalates with New President

    ওয়েব সিরিজ

    উল্লুতে রিলিজ হলো জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজের দ্বিতীয় সিজন, একা দেখুন

    অনলাইন ক্লাসে মনোযোগ ধরে রাখার কৌশল

    অনলাইন ক্লাসে মনোযোগ ধরে রাখার কৌশল: সহজ টিপস

    The Conjuring: Last Rites' Annabelle Popcorn Bucket Arrives at Regal Theatres

    The Conjuring: Last Rites’ Annabelle Popcorn Bucket Arrives at Regal Theatres

    Namjari

    ৩টি সহজ নিয়মে নামজারি পদ্ধতি চালু, কার্যকর হচ্ছে নতুন ব্যবস্থা

    • About Us
    • Contact Us
    • Career
    • Advertise
    • DMCA
    • Privacy Policy
    • Feed
    • Banglanews
    © 2025 ZoomBangla News - Powered by ZoomBangla

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.