বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আজীবন সংগ্রাম করলেন আব্দুর রহিম সাহেব। ছোট্ট একটি দোকান থেকে শুরু করে এখন বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। কিন্তু সেই কষ্টার্জিত সম্পত্তির হিস্যা নিয়ে মৃত্যুর পরই যেন শুরু হয় অকল্যাণের অধ্যায়! ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী, ভাই-বোনের মধ্যে শুরু হয় বিবাদ, সম্পর্কে পড়ে যায় ফাটল, এমনকি আদালত পর্যন্ত গড়ায় মামলা। মরহুম আব্দুর রহিম সাহেবের মতো অসংখ্য মানুষের অসমাপ্ত ইচ্ছা, অশ্রু আর বিচ্ছিন্নতার করুণ গল্প শোনা যায় আমাদের চারপাশে। এই টানাপোড়েন, এই বিভেদের মূল কারণ প্রায়ই থাকে একটিই – ইসলামিক উইল লেখার নিয়ম মেনে পরিষ্কার, শরীয়তসম্মত ওয়াসিয়্যত বা উইলের অনুপস্থিতি। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে ফরয করেছেন সম্পত্তি বণ্টনের বিধান (সূরা নিসা, আয়াত ১১-১২)। কিন্তু অনেকেই এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন, হয়তো অজ্ঞতাবশত, হয়তো কালক্ষেপণ করেন, আর তখনই সৃষ্টি হয় জটিলতা। আপনার আজকের সচেতনতা, ইসলামিক উইল লেখার নিয়ম মেনে একটি সহিহ ওয়াসিয়্যত প্রস্তুত করা, পারে ভবিষ্যতের অশান্তি দূর করে প্রিয়জনদের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখতে এবং আপনার আমলের ভার হালকা করতে। আসুন, জেনে নিই কিভাবে এই পবিত্র দায়িত্বটি সম্পন্ন করবেন।
ইসলামিক উইল লেখার নিয়ম: কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
মৃত্যু এক অবধারিত সত্য। কিন্তু এর পরও আমরা আমাদের প্রিয়জনদের জন্য, আমাদের রেখে যাওয়া সম্পদ নিয়ে কী হবে, তা ভাবতে চাই না। এই অবহেলার ফলাফল কখনো কখনো হয় ভয়াবহ। ইসলামিক উইল লেখার নিয়ম জানা এবং তা অনুসরণ করা শুধু একটি আইনি ফর্মালিটি নয়; এটি একটি গভীর ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “মুসলমানের ওপর ওয়াসিয়্যত করা জরুরি (ওয়াজিব) যে সম্পদ রেখে যায় তার জন্য।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ২৭০০)। এর গুরুত্ব নিহিত আছে কয়েকটি মৌলিক কারণে:
- আল্লাহর হুকুম পালন: সম্পত্তির বণ্টন ইসলামে একটি সুনির্দিষ্ট ফরয বিধান (ফারাইয)। মিরাসের হিসাব না জেনে, ইচ্ছেমতো সম্পদ বণ্টন করা জায়েজ নয়। উইল বা ওয়াসিয়্যত এই মিরাস বণ্টনের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে।
- পরিবার ও আত্মীয়দের মধ্যে সুসম্পর্ক রক্ষা: সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব-বিবাদ পরিবার ভেঙে দেয়, আত্মীয়তার বন্ধন নষ্ট করে। পরিষ্কার উইল সেই বিবাদের মূলোৎপাটন করে, সবাইকে তার হক বুঝে পেতে সাহায্য করে।
- অনাদায়ী ঋণ ও দায়িত্ব পূরণ: অনেকেরই মৃত্যুকালে অনাদায়ী ঋণ, জাকাত, মানত, হজ্জের ফরয আদায় না করা ইত্যাদি থেকে যায়। ইসলামিক উইল লেখার নিয়ম অনুযায়ী উইলে এই দায়িত্বগুলো পূরণের জন্য সম্পদ থেকে খরচ করার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া যায়, যাতে মৃত ব্যক্তির দায়িত্ব আল্লাহর দরবারে ঝুলে না থাকে।
- অমুসলিম আত্মীয় বা ওয়ারিশ নয় এমন ব্যক্তিকে সাহায্য: ইসলামী মিরাস আইনে অমুসলিম আত্মীয় (যেমন হিন্দু ভাই, খ্রিস্টান চাচা) বা কোনো ভালো বন্ধু, প্রতিবেশী যারা ওয়ারিশ নয়, তাদের স্বাভাবিকভাবে সম্পত্তির অংশ পায় না। উইলের মাধ্যমে এক-তৃতীয়াংশ সম্পত্তির মধ্যে সীমিত রেখে তাদের জন্য কিছু রেখে যাওয়া যায়, যা ইসলামে জায়েজ (বুখারী, মুসলিম)।
- মানসিক শান্তি: নিজের জীবদ্দশায় জেনে যাওয়া যে মৃত্যুর পর আপনার সম্পদ শরীয়তসম্মতভাবে এবং আপনার ইচ্ছানুযায়ী বণ্টিত হবে, তা এক অমূল্য মানসিক শান্তি দেয়।
বাস্তব উদাহরণ: ঢাকার মিরপুরে বাস করতেন জনাব করিম উদ্দিন। তাঁর তিন ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়েকে তিনি সবসময় বেশি স্নেহ করতেন। মৃত্যুর আগে তিনি মৌখিকভাবে বলে গেলেন তার ফ্ল্যাটটি যেন মেয়েকে দেওয়া হয়। কিন্তু ইসলামিক উইল লেখার নিয়ম মেনে লিখিত ওয়াসিয়্যত না থাকায়, ছেলেরা ফ্ল্যাটের দখল নেয় এবং মেয়েকে অংশ দিতে অস্বীকার করে। মামলা চলছে বছরখানেক ধরে, পারিবারিক সম্পর্ক সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। একটি সহিহ উইল এই ট্র্যাজেডি রোধ করতে পারত।
ইসলামিক উইল লেখার নিয়ম: ধাপে ধাপে বিস্তারিত নির্দেশিকা
একটি শরীয়তসম্মত ওয়াসিয়্যত প্রস্তুত করতে হলে অবশ্যই ইসলামিক উইল লেখার নিয়ম এর প্রতিটি দিক সতর্কতার সাথে মেনে চলতে হবে। নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
নিয়ত পরিশুদ্ধ করা: উইল লেখার শুরুতে নিয়ত হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। পার্থিব কোনো স্বার্থ, কারো প্রতি পক্ষপাত বা বৈরিতা উইলের পেছনে কাজ করবে না। মনে রাখবেন, এটি একটি ইবাদত।
ওয়ারিশদের অংশের প্রতি সম্মান: এটি ইসলামিক উইল লেখার নিয়ম এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অলঙ্ঘনীয় বিধান। ইসলামী উত্তরাধিকার আইন (ফারাইয) অনুযায়ী যাদের জন্য আল্লাহ তায়ালা সম্পত্তির নির্দিষ্ট অংশ নির্ধারণ করে দিয়েছেন (যেমন স্ত্রী/স্বামী, পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন প্রমুখ), তাদেরকে উইলের মাধ্যমে বঞ্চিত করা, কম দেওয়া বা বাড়িয়ে দেওয়া যাবে না। উইল শুধুমাত্র ওয়ারিশ নয় এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দেয়ার জন্য প্রযোজ্য, এবং তা মোট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। উদাহরণস্বরূপ:
- আপনার স্ত্রী/স্বামী, সন্তান, পিতা-মাতা – এরা সবাই ওয়ারিশ। তাদের জন্য আল্লাহ নির্ধারিত অংশ উইল দিয়ে পরিবর্তন করা হারাম।
- আপনার কোনো অমুসলিম ভাই (ওয়ারিশ নয়), অসহায় প্রতিবেশী, কোনো এতিমখানা বা মসজিদ (ওয়ারিশ নয়) – এদের জন্য আপনি উইলের মাধ্যমে সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে (বা তার কম) দান করতে পারেন।
এক-তৃতীয়াংশের সীমা কঠোরভাবে মেনে চলা: উইলের মাধ্যমে সর্বোচ্চ মোট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ দান করা যাবে। এর বেশি দান করা জায়েজ নয় এবং ওয়ারিশগণ সেই উইল বাতিল করার অধিকার রাখেন (যদিও এক-তৃতীয়াংশের কম দান করা উত্তম)। রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) কে উইল করতে বলেন, তখন সাদ (রা.) বলেন তিনি তার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ দান করতে চান। রাসূল (সা.) বললেন, “আধাআধি?” সাদ (রা.) বললেন, এক-তৃতীয়াংশ? রাসূল (সা.) বললেন, “এক-তৃতীয়াংশ, আর এক-তৃতীয়াংশই তো অনেক। তুমি তোমার ওয়ারিশদের ধনী রেখে যাওয়া, তাদের অভাবগ্রস্ত রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম।” (বুখারী, হাদীস নং ২৭৪২; মুসলিম, হাদীস নং ১৬২৮)। অর্থাৎ, ওয়ারিশদের অধিকার ক্ষুণ্ণ না করাই শ্রেয়।
সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় লেখা: উইল এমনভাবে লিখতে হবে যাতে কোনোরকম অস্পষ্টতা, দ্ব্যর্থতা বা ভুল ব্যাখ্যার অবকাশ না থাকে। প্রতিটি বেনিফিশিয়ারির (যাকে দান করা হচ্ছে) পূর্ণ নাম, পিতার নাম, ঠিকানা এবং তার সাথে আপনার সম্পর্ক স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। সম্পত্তির সুনির্দিষ্ট বিবরণ (যেমন: জমির খতিয়ান/দাগ নম্বর, ফ্ল্যাট নম্বর ও ঠিকানা, ব্যাংক একাউন্ট নম্বর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা ইত্যাদি) অবশ্যই দিতে হবে। শুধু “আমার জমি থেকে এক বিঘা” বা “আমার একটি ফ্ল্যাট” লিখলে ভবিষ্যতে জটিলতা সৃষ্টি হবে।
অনাদায়ী দায়-দায়িত্ব উল্লেখ করা): ইসলামিক উইল লেখার নিয়ম শুধু সম্পদ বণ্টনই নয়, দায়িত্ব পূরণেরও নির্দেশ দেয়া। উইলে স্পষ্ট করে লিখুন:
- আপনার নামে কোনো অনাদায়ী ঋণ (ব্যাংক, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান) আছে কিনা এবং তা কোন সম্পত্তি থেকে পরিশোধ করতে হবে।
- জাকাত, ফিদইয়া, মানত বা কাফফারা আদায় না করে থাকলে, তা কোন সম্পত্তি থেকে পরিশোধ করতে হবে।
- হজ্জ ফরয ছিল কিন্তু আদায় করতে পারেননি, তাহলে আপনার পক্ষ থেকে হজ্জ করানোর জন্য সম্পদ থেকে খরচ করার নির্দেশ দিতে পারেন।
- আপনার দাফন-কাফন ও জানাযার ব্যয় যেন আপনার সম্পদ থেকেই হয়, সে নির্দেশ দিতে পারেন।
- এছাড়া কোনো নির্দিষ্ট ওসিয়ত (নৈতিক উপদেশ) থাকলে তা লিখে রাখতে পারেন।
সাক্ষী নিয়োগ: উইলটির বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতার জন্য কমপক্ষে দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কের, ন্যায়পরায়ণ মুসলিম পুরুষ সাক্ষীর প্রয়োজন। সাক্ষীরা অবশ্যই উইলকারীকে চিনবেন এবং উইলের বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবগত থাকবেন। উইলকারীর সামনেই তারা স্বাক্ষর করবেন। সাক্ষীদের পূর্ণ নাম, পিতার নাম, ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর উইলে উল্লেখ করতে হবে। অনেক ইসলামিক স্কলার নারী সাক্ষীকেও জায়েজ বলেন, তবে সর্বোত্তম হলো দুই পুরুষ সাক্ষী রাখা বা একজন পুরুষ ও দুইজন নারী সাক্ষী রাখা। বাংলাদেশের আইনগত জটিলতা এড়াতে দুইজন পুরুষ সাক্ষীই ভালো।
লিখিত ও স্বাক্ষরিত হওয়া (H3): মৌখিক উইলের চেয়ে লিখিত উইল অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য এবং আইনগতভাবে শক্তিশালী। উইলটি সুস্পষ্ট বাংলা বা বাংলা-ইংরেজি মিশ্রণে লিখতে পারেন। উইলকারী নিজে স্বাক্ষর করবেন। যদি স্বাক্ষর করতে অক্ষম হন, তবে আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া যেতে পারে, তবে তা দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে এবং উইলে তার কারণ উল্লেখ করে। উইলের শেষে তারিখ (দিন, মাস, বছর) অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
নির্বাহী (এক্সিকিউটর) নিয়োগ: উইল বাস্তবায়নের জন্য একজন বিশ্বস্ত, সৎ ও সক্ষম ব্যক্তিকে নির্বাহী (এক্সিকিউটর) নিযুক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্যক্তি উইলকারীর মৃত্যুর পর উইলের নির্দেশনা অনুযায়ী সম্পত্তি বণ্টন, ঋণ পরিশোধ ইত্যাদি কাজ তত্ত্বাবধান করবেন। নির্বাহীর পূর্ণ নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর এবং তার সাথে আপনার সম্পর্ক উইলে উল্লেখ করুন। নির্বাহীর সম্মতি নেওয়া উচিত। বিকল্প নির্বাহীও নামিয়ে রাখতে পারেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, পরিবারের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও জ্ঞানী ব্যক্তি, অথবা কোনো আলেম বা আইনজীবীকে নির্বাহী নিযুক্ত করা যেতে পারে।
- নোটারি পাবলিক বা আইনজীবীর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন: যদিও ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে সাক্ষীসহ লিখিত উইলই যথেষ্ট, বাংলাদেশের আইনগত জটিলতা এবং জালিয়াতি রোধ করতে নোটারি পাবলিকের সামনে বা আইনজীবীর মাধ্যমে উইল রেজিস্ট্রি করা অত্যন্ত জরুরি। রেজিস্ট্রিকৃত উইল আইনগতভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী প্রমাণিত হয় এবং ভবিষ্যতে বিরোধ এড়াতে সাহায্য করে। ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার অফিস বা স্থানীয় সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে নির্ধারিত ফি দিয়ে এটি রেজিস্ট্রি করা যায়। উইলের কপি নির্বাহী, আস্থাভাজন ব্যক্তি এবং সম্ভব হলে একজন ওয়ারিশের কাছেও সুরক্ষিত রাখুন।
ইসলামিক উইল লেখার নিয়ম: যেসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি
ইসলামিক উইল লেখার নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা মেনে চলতে হবে:
- মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা: উইলকারীকে অবশ্যই পূর্ণ সুস্থ মস্তিষ্কের (Sound Mind) এবং প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। গুরুতর অসুস্থতা, মানসিক ভারসাম্যহীনতা বা চাপের মধ্যে উইল করলে তা পরে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। উইল করার সময় সাক্ষীরা নিশ্চিত করবেন যে উইলকারী পুরোপুরি সচেতন ও স্বাধীন ইচ্ছায় কাজ করছেন।
- জোর-জবরদস্তি বা প্রভাবিত করা: কারো চাপে পড়ে, ভয় দেখিয়ে বা প্রলোভন দেখিয়ে উইল করা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং বাতিলযোগ্য। উইলকারীর ইচ্ছাই চূড়ান্ত এবং স্বাধীন হতে হবে।
- ওয়ারিশকে এক-তৃতীয়াংশে দান: কোনো ওয়ারিশকে (যেমন ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী) উইলের মাধ্যমে সম্পদ দান করা জায়েজ নয়, কারণ তার জন্য আল্লাহ নির্ধারিত অংশ আছে। যদি বিশেষ কোনো কারণ থাকে (যেমন কোনো প্রতিবন্ধী সন্তানের অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন), তবে অন্যান্য ওয়ারিশদের সম্মতি সাপেক্ষে এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে তাকে দান করা যেতে পারে। তবে এটি জটিল এবং আলেমদের পরামর্শ ছাড়া না করাই ভালো। সাধারণ নীতি হলো ওয়ারিশদেরকে উইলের মাধ্যমে দান না করা।
- উইল পরিবর্তন বা বাতিল করা: জীবদ্দশায় যতবার ইচ্ছা উইল পরিবর্তন, পরিমার্জন বা সম্পূর্ণ বাতিল করা যায়। প্রতিবার নতুন উইল করতে হবে পূর্বের উইল বাতিল বলে উল্লেখ করে এবং নতুন সাক্ষী ও রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সর্বশেষ উইলই কার্যকর বলে গণ্য হবে।
- পেশাদার পরামর্শ গ্রহণ: ইসলামিক উইল লেখার নিয়ম এবং স্থানীয় আইনের জটিলতা বিবেচনায়, একজন বিশ্বস্ত ইসলামিক স্কলার (যিনি ফারাইয বা মিরাস বিষয়ে অভিজ্ঞ) এবং একজন আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা আপনাকে শরীয়ত ও আইন উভয় দিক থেকে সঠিক পথ দেখাবেন, ফরমেট ঠিক করতে সাহায্য করবেন এবং ভুলত্রুটি এড়াতে সহায়তা করবেন। বাংলাদেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশন বা স্থানীয় মাদ্রাসার মুফতি/আলেমদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী উইলের বৈধতা নিশ্চিত করতে আইনজীবীর পরামর্শ অপরিহার্য।
ইসলামিক উইল লেখার নিয়ম: একটি আদর্শ উইলের নমুনা
(বিঃদ্রঃ: এটি একটি সাধারণ নমুনা মাত্র। প্রকৃত উইল আপনার সম্পদ, পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী ভিন্ন হবে। অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন)
ওয়াসিয়্যতনামা (উইল)
আমি, [আপনার পূর্ণ নাম], পিতা [পিতার পূর্ণ নাম], মাতা [মাতার পূর্ণ নাম], বর্তমান ঠিকানা [বাড়ি নং, রোড/লেন, এলাকা, থানা, জেলা], বাংলাদেশ। জাতীয় পরিচয়পত্র নং [আপনার এনআইডি নম্বর], জন্ম তারিখ [আপনার জন্ম তারিখ], ধর্ম ইসলাম।
আমি সুস্থ মস্তিষ্কে, পূর্ণ সচেতনতা ও স্বাধীন ইচ্ছায় এই ওয়াসিয়্যতনামা (উইল) প্রস্তুত করছি। আমি জানি মৃত্যু একটি অনিবার্য সত্য। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় এবং আমার মৃত্যুর পর আমার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে যাতে কোনো দ্বন্দ্ব-বিবাদ না হয়, সে উদ্দেশ্যে ইসলামী শরীয়তের বিধান অনুযায়ী এই উইল করছি।
১. ওয়ারিশদের হক: আমি পূর্ণরূপে বিশ্বাস করি এবং স্বীকার করছি যে, ইসলামী শরীয়তের ফারাইয (মিরাস) বিধান অনুযায়ী আমার সমস্ত ওয়ারিশদের (স্ত্রী/স্বামী, সন্তান, পিতা-মাতা, ভাই-বোন প্রমুখ) জন্য আল্লাহ তায়ালা সম্পত্তির নির্দিষ্ট অংশ নির্ধারণ করে রেখেছেন। আমি এই উইলের মাধ্যমে আমার কোনো ওয়ারিশকে তাদের প্রাপ্য অংশ থেকে বঞ্চিত করছি না বা তাদের অংশে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করছি না। আমার সমস্ত সম্পত্তি আমার ওয়ারিশদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ফারাইযের বিধান অনুসারে বণ্টিত হবে।
২. অনাদায়ী দায়-দায়িত্ব:
- (ক) আমার নামে কোনো অনাদায়ী ঋণ (ব্যক্তিগত, ব্যাংক বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের) থাকলে, আমার মৃত্যুর পর আমার রেখে যাওয়া নগদ অর্থ/ব্যাংক জমা/বিক্রয়যোগ্য সম্পত্তি থেকে সর্বপ্রথম তা পরিশোধ করতে হবে। বিশেষ করে:
- ব্যাংক [ব্যাংকের নাম] এর শাখা [শাখার নাম] এ আমার সঞ্চয়ী/চালু হিসাব নং [হিসাব নম্বর] থেকে… (যদি থাকে)।
- জনাব/জনাবা [ঋণদাতার নাম], পিতা [পিতার নাম], ঠিকানা [ঠিকানা] এর কাছে আমার অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ [টাকার পরিমাণ] টাকা পরিশোধ করতে হবে।
- (খ) আমার উপর জাকাত, ফিদইয়া, মানত বা কাফফারা আদায় না করা থাকলে, তার হিসাব করে আমার সম্পদ থেকে তা আদায় করতে হবে।
- (গ) আমার উপর হজ্জ ফরয ছিল কিন্তু আমি আদায় করতে পারিনি। তাই আমার পক্ষ থেকে একজন যোগ্য ব্যক্তিকে হজ্জ করানোর জন্য আমার সম্পদ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করতে হবে।
- (ঘ) আমার দাফন-কাফন, জানাযা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় কার্যাদির যাবতীয় ব্যয় আমার সম্পদ থেকেই নির্বাহ করতে হবে।
৩. এক-তৃতীয়াংশ সম্পত্তির দান (ওয়ারিশ নয় এমন জন্য): আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এবং শরীয়তের অনুমোদিত এক-তৃতীয়াংশের সীমার মধ্যে আমি নিম্নলিখিত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে আমার সম্পত্তি থেকে দান করছি:
- প্রাপক ১: [পূর্ণ নাম], পিতা [পিতার নাম], ঠিকানা [ঠিকানা], আমার সাথে সম্পর্ক [সম্পর্ক, যেমন: অমুসলিম ভাই/ভাগ্নে/বন্ধু]। তাকে/তার প্রতিষ্ঠানকে দান করছি [সম্পত্তির সুনির্দিষ্ট বিবরণ, যেমন: জমির অংশ, টাকার পরিমাণ, বাড়ির অংশ – সম্পত্তির সুনির্দিষ্ট আইডেন্টিফিকেশন যেমন দাগ/খতিয়ান নম্বর, ফ্ল্যাট নম্বর ইত্যাদি উল্লেখ করুন]।
- প্রাপক ২: [প্রতিষ্ঠানের নাম, যেমন: স্থানীয় মসজিদ/মাদ্রাসা/এতিমখানা], ঠিকানা [ঠিকানা]। প্রতিষ্ঠানটিকে দান করছি [সম্পত্তির সুনির্দিষ্ট বিবরণ]।
(দ্রষ্টব্য: প্রয়োজন অনুসারে প্রাপক বাড়ানো যেতে পারে, তবে সর্বমোট মূল্য মোট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি হতে পারবে না।)
৪. নির্বাহী (এক্সিকিউটর): আমার এই ওয়াসিয়্যতনামা বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমি অর্পণ করছি জনাব [নির্বাহীর পূর্ণ নাম], পিতা [পিতার নাম], ঠিকানা [ঠিকানা], মোবাইল নং [নম্বর], যিনি আমার [সম্পর্ক, যেমন: বড় ছেলে/ভাই/বন্ধু]। তাকে এই উইল বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সব ধরনের কর্তৃত্ব প্রদান করা হলো। তার অনুপস্থিতি বা অক্ষমতার ক্ষেত্রে বিকল্প নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন জনাব [বিকল্প নির্বাহীর পূর্ণ নাম], পিতা [পিতার নাম], ঠিকানা [ঠিকানা], মোবাইল নং [নম্বর]।
৫. ঘোষণা: আমি ঘোষণা করছি যে এই আমার শেষ ওয়াসিয়্যতনামা (উইল)। আমার পূর্বে করা অন্য কোনো উইল বা মৌখিক ওয়াসিয়্যত (যদি থাকে) এখানে সম্পূর্ণরূপে বাতিল বলে গণ্য হবে। আমি আমার নির্বাহী(দের)কে এই উইল বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সব ধরনের আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা প্রদান করছি।
সাক্ষীগণ:
আমার উপস্থিতিতে এবং আমার সামনেই নিম্নস্বাক্ষরকারী সাক্ষীগণ এই উইলটি পড়ে শুনেছেন এবং নিশ্চিত করেছেন যে আমি সুস্থ মস্তিষ্কে ও স্বাধীন ইচ্ছায় এটি করেছি।
১. সাক্ষী ১: নাম: [পূর্ণ নাম], পিতা: [পিতার নাম], ঠিকানা: [ঠিকানা], জাতীয় পরিচয়পত্র নং: [নম্বর], স্বাক্ষর: __
২. সাক্ষী ২: নাম: [পূর্ণ নাম], পিতা: [পিতার নাম], ঠিকানা: [ঠিকানা], জাতীয় পরিচয়পত্র নং: [নম্বর], স্বাক্ষর: __
উইলকারীর স্বাক্ষর/আঙ্গুলের ছাপ:
আমি উক্ত ওয়াসিয়্যতনামার বিষয়বস্তু পড়ে/শুনে বুঝে সম্পূর্ণ সম্মত হয়ে স্বাক্ষর/আঙ্গুলের ছাপ প্রদান করছি।
নাম: [আপনার পূর্ণ নাম]
স্বাক্ষর: __
/ অথবা
আঙ্গুলের ছাপ (ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল): __
(স্বাক্ষর করতে অক্ষমতার কারণ: [সংক্ষেপে কারণ উল্লেখ করুন, যেমন: অসুস্থতা])
স্থান: [লেখার স্থান, যেমন: বাড়ি/অফিসের ঠিকানা]
তারিখ: [তারিখ] বাংলা / [তারিখ] ইংরেজি
(রেজিস্ট্রি স্ট্যাম্প লাগানোর জায়গা এবং রেজিস্ট্রার অফিসের সীল ও স্বাক্ষর থাকবে যদি রেজিস্ট্রি করা হয়)
ইসলামিক উইল লেখার নিয়ম: ডিজিটাল যুগে প্রাসঙ্গিকতা ও সংরক্ষণ (H2)
ডিজিটালাইজেশনের এই যুগেও ইসলামিক উইল লেখার নিয়ম এর মূলনীতি অপরিবর্তিত। তবে কাগজের পাশাপাশি ডিজিটাল কপি সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ:
- ডিজিটাল কপি: মূল রেজিস্ট্রিকৃত কাগজের উইলের স্ক্যান কপি বা ডিজিটাল পিডিএফ তৈরি করুন। এটি নির্বাহী, আস্থাভাজন ব্যক্তি এবং ব্যক্তিগত ড্রাইভে (পাসওয়ার্ড প্রোটেক্টেড) সংরক্ষণ করুন। ক্লাউড স্টোরেজেও রাখতে পারেন, তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
- নির্বাহীকে অবহিতকরণ: নির্বাহীকে অবশ্যই উইলের অবস্থান (কোথায় রাখা আছে) এবং ডিজিটাল কপি সম্পর্কে জানাতে হবে। তাকে মূল কপি বা অ্যাক্সেস দেওয়ার ব্যবস্থা রাখুন।
- নিয়মিত হালনাগাদ: সম্পত্তির ধরন, পরিমাণ বা প্রাপক পরিবর্তন হলে, অথবা নির্বাহীর পরিবর্তন হলে অবশ্যই নতুন উইল তৈরি করুন এবং পুরাতনটি বাতিল ঘোষণা করুন। প্রতি কয়েক বছর পর পর উইলটি পর্যালোচনা করা ভালো।
- আইনগত পরিবর্তন: বাংলাদেশের সম্পত্তি বা রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত আইনে কোনো পরিবর্তন হলে, বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জেনে নিন তা আপনার উইলকে প্রভাবিত করছে কিনা।
বাহ্যিক উৎস (External Link): ইসলামিক উত্তরাধিকার আইনের জটিল গণনা বুঝতে বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট (https://islamicfoundation.gov.bd/) বা তাদের প্রকাশিত “ফারাইয” বিষয়ক বই পরামর্শযোগ্য। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া জানতে জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের ওয়েবপেজ দেখুন।
(Internal Link): জানতে পারেন ইসলামে সম্পত্তি বণ্টনের বিধান (মিরাস) নিয়ে আমাদের বিস্তারিত আলোচনা [লিংক: ইসলামিক মিরাস আইনের বিস্তারিত]। এছাড়া, জাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে জাকাতের সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করুন [লিংক: জাকাত ক্যালকুলেটর]।
ইসলামিক উইল লেখার নিয়ম শুধু কাগজে কলমে কিছু লিখে শেষ করা নয়; এটি আপনার ঈমানের প্রকাশ, প্রিয়জনদের প্রতি দায়িত্ববোধের চূড়ান্ত নিদর্শন এবং আল্লাহর নির্দেশ পালনের সুস্পষ্ট পদক্ষেপ। একটি সহিহ, শরীয়তসম্মত ও আইনগতভাবে শক্তিশালী উইল আপনার পরলোকগমনের পরও রেখে যেতে পারে সদকায়ে জারিয়ার অফুরন্ত সুযোগ, পারিবারিক শান্তির অবিচ্ছিন্ন ধারা এবং আপনার রবের কাছে গ্রহণযোগ্য আমলের সওয়াব। আপনার সম্পদ, আপনার শ্রমের ফসল যেন বিতর্ক-বিবাদের আগুনে পুড়ে ছাই না হয়, বরং বরকতের বীজ হয়ে আপনার পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে – সেই মহান দায়িত্ব পালনের সময় এখনই। আজই সময় একজন যোগ্য ইসলামিক স্কলার এবং আইনজীবীর সাথে কথা বলে আপনার ইসলামিক উইল টি প্রস্তুত করার। এটিই হবে আপনার প্রিয় সৃষ্টির জন্য প্রকৃত ভালোবাসা এবং মহান স্রষ্টার নির্দেশের প্রতি আপনার আনুগত্যের সবচেয়ে বাস্তবসম্মত প্রকাশ। বিলম্ব করবেন না, কারণ মৃত্যু কোনো তফসিল মেনে আসে না।
জেনে রাখুন
১. প্রশ্ন: উইল বা ওয়াসিয়্যত কি ইসলামে বাধ্যতামূলক?
উত্তর: ফরয বা বাধ্যতামূলক না হলেও, রাসূলুল্লাহ (সা.) একে অত্যন্ত জরুরি (ওয়াজিব) বলে উল্লেখ করেছেন, বিশেষ করে যদি কারো কাছে সম্পদ থাকে বা তার উপর কোনো দায়িত্ব (ঋণ, মানত ইত্যাদি) থাকে যা আদায় হয়নি। ওয়ারিশ নয় এমন কাউকে কিছু দিতে চাইলে বা দায়িত্ব পূরণের নির্দেশ দিতে চাইলে উইল করা প্রায় অপরিহার্য। (সূত্র: বুখারী, মুসলিম)।
২. প্রশ্ন: স্ত্রী বা সন্তানদের জন্য কি উইলে আলাদা করে কিছু দিতে পারি?
উত্তর: ইসলামী মিরাস আইনে স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য আল্লাহ তায়ালা নির্দিষ্ট অংশ নির্ধারণ করে রেখেছেন (সূরা নিসা)। তাই উইলের মাধ্যমে তাদেরকে তাদের নির্ধারিত অংশের অতিরিক্ত কিছু দেওয়া জায়েজ নয়। তবে যদি সব ওয়ারিশ একমত হয়ে সম্মতি দেয়, তাহলে এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে তাদেরকে অতিরিক্ত দান করা যেতে পারে। কিন্তু সাধারণত এটি না করাই ভালো। তাদের জন্য উত্তম উত্তরাধিকার ব্যবস্থাপনাই যথেষ্ট।
৩. প্রশ্ন: উইল করার পর সম্পত্তি বিক্রি করলে কী হবে?
উত্তর: উইল করার পর আপনি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে আপনার সম্পত্তি বিক্রি, দান বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করতে পারেন। উইল শুধু মৃত্যুর পরকার বিষয়। আপনি যদি উইলে উল্লেখিত কোনো সম্পত্তি জীবদ্দশায় বিক্রি করে ফেলেন, তবে সেই সম্পত্তি আর উইলের অন্তর্ভুক্ত থাকবে না। নতুন করে উইল আপডেট করা উচিত।
৪. প্রশ্ন: উইল না করলে সম্পত্তি কীভাবে বণ্টিত হবে?
উত্তর: উইল না থাকলে সম্পূর্ণ সম্পত্তি ইসলামী ফারাইয (মিরাস) বিধান অনুযায়ী আপনার ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টিত হবে। বাংলাদেশে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ (Muslim Family Laws Ordinance 1961) অনুযায়ী এই বণ্টন হবে। কোনো অমুসলিম আত্মীয় বা ওয়ারিশ নয় এমন কেউ এই বণ্টনে অংশ পাবে না। অনাদায়ী দায়-দায়িত্ব (ঋণ, জাকাত ইত্যাদি) পরিশোধের নির্দেশনা না থাকায় জটিলতা তৈরি হতে পারে।
৫. প্রশ্ন: উইল লেখার পর কতদিন পর্যন্ত তা বৈধ থাকে?
উত্তর: উইল লেখার পর সেটি লেখকের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বৈধ থাকে, যতক্ষণ না তিনি এটিকে বাতিল বা পরিবর্তন করেন। উইলের মধ্যে কোনো মেয়াদ উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। মৃত্যুর পরই উইল কার্যকর হয় এবং তা তখনই বাস্তবায়ন করতে হবে।
৬. প্রশ্ন: উইল জালিয়াতির আশঙ্কা আছে কি? কিভাবে রোধ করা যায়?
উত্তর: দুর্ভাগ্যবশত উইল জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। এটি রোধ করার সর্বোত্তম উপায় হলো:
- রেজিস্ট্রেশন: নোটারি পাবলিক বা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রি করা। রেজিস্ট্রিকৃত দলিল জাল করা কঠিন।
- সাক্ষী: বিশ্বস্ত ও ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী নেওয়া, যারা দীর্ঘদিন বাঁচবেন এমন ব্যক্তি হলে ভালো। তাদের পরিচয় স্পষ্ট উল্লেখ করা।
- নির্বাহী: বিশ্বস্ত ও সক্ষম নির্বাহী নিযুক্ত করা।
- সংরক্ষণ: মূল কপি নিরাপদ স্থানে (যেমন ব্যাংক লকার) এবং ডিজিটাল কপি সংরক্ষণ করা। নির্বাহী ও কাছের আত্মীয়কে অবস্থান জানানো।
- আইনজীবীর সহায়তা: আইনজীবীর মাধ্যমে উইল প্রস্তুত ও রেজিস্ট্রি করানো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।