ওমর ফারুক হিমেল: করোনা মহামারিকালে আরেকটি ঈদ পালন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের মুসলিম সমাজ। চলমান লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আপনজনদের সাথে ঈদ করতে নানা কৌশলে বাড়িতে যাচ্ছে মানুষ, মানছে না কোন বাধা। আপনজন ছাড়া যেন ঈদে আনন্দই হয় না। তাই শত কষ্ট করে হলেও মানুষ বাড়ি যাচ্ছে। ঈদে প্রতিটি ঘরে আনন্দ ও খুশির জোয়ার উঠে। বন্ধু ও আত্মীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ভালোবাসা-প্রীতি।
এই আনন্দ শুধু তাদের জন্য যারা বাবা-মা এবং পরিবার পরিজন নিয়ে দেশে এবং প্রবাসে ঈদ করেন। কিন্তু যারা পিতা- মাতা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান এবং আত্মীয় স্বজন ছাড়া দেশের বাইরে থাকেন তাদের গল্পটা ভিন্ন এবং নিরানন্দের। প্রবাসে বসবাসরতদের বড় একটা অংশকেই ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়। বিশেষ এই দিনটিতেও শ্রম বিক্রির তাগাদা তাদের তাড়া করে ফেরে।
করোনাকালে প্রবাসীরা গত বছরের ন্যায় এবারও ঈদ আনন্দে শামিল হতে দেশে আসতে পারেনি। করোনাকালীন সময়ে প্রবাসীদের অনেকেরই বেতন অর্ধেক হয়ে গেছে। অনেকেই আবার দেশে ছুটিতে এসে করোনার কারণে আটকা পড়ে দিকভ্রান্ত।
আমরা জানি একজন সাধারণ মানুষ ব্যথা সহ্য করার সক্ষমতা সর্বোচ্চ ৪৫ ডেল ইউনিট। পাশাপাশি একজন মা প্রসববেদনা সহ্য করেন ৫৭ ডেল ইউনিট পর্যন্ত। সন্তান প্রসবের জন্য মায়েদের এ ত্যাগ তিতিক্ষা অসহনীয়, অবর্ণনীয়।মায়েদের প্রসববেদনার কষ্টের উপাখ্যান একজন মা ছাড়া যেমন কেউ বোঝে না, তেমনিভাবে একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীর পরবাসের অনুভূতি কেমন, কি তার হৃদয়ের ভাষা তা যে কখনো প্রবাসের কঠোর শৃঙ্খল দেখেনি তার পক্ষে অনুধাবন করা অসম্ভব।
দেশে বসে প্রবাসের অনুভূতি নেওয়া যায় না। প্রত্যেক প্রবাসীর রয়েছে নীল কষ্ট। তাদের জীবনযুদ্ধের উপাখ্যান চাপা পড়ে যায় নানা কারণে। পরিবারের সুখের জন্য, ভবিষ্যৎ জীবন উজ্জ্বল করার আশায় নিজের জীবনের সোনালী সময় তারা শ্রম দিতে দিতে শেষ করে দেন। তারা কষ্টগুলো হৃদয়ে পুঁতে রাখেন। আর ছোট ছোট সুখগুলো পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করেন।
চেইন অব কমান্ডের দেশ কোরিয়া। আজব এক ঈদানুভূতি রয়েছে আমার ও কোরিয়া প্রবাসীদের। আরব দেশগুলোতে ঈদের ছুটি থাকে কিন্তু কোরিয়ায় কোম্পানি থেকে ছুটি নেয়া দুস্কর। যদিও ইদানিংকালে কিছু পরিবর্তন এসেছে।
গত বছরের শেষের দিকে কোরিয়া প্রবাস জীবনের ইতি টানি। একটি উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য জার্মানিতে চলে আসি।জার্মানিতে কয়েকমাস অবস্থান করে এবার ঈদ করতে দেশে চলে এসেছি। তবে জার্মানিতে ঈদের স্মৃতি না থাকলেও কোরিয়ার আছে ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আজহা মিলে ২১টি ঈদের দিনলিপি।
ঈদের জন্য কোরিয়া বলুন আর অন্যান্য দেশ বলুন-প্রবাসীরা ঈদের ছুটি পায় না। ছুটির ক্ষেত্রে শুধু ব্যতিক্রম মধ্যপ্রাচ্য।বলাবাহুল্য, ঈদের নামাজের জন্য অনেকেই কোম্পানি থেকে ছুটি পায়না করর্মীরা। অনেকেই সকালে ডিউটির আগে ঈদের নামাজ পড়ে। তবে করোনাকালে তাও সম্ভব নয়। দুই বছর ধরে সম্মীলিতভাবে ইফতার করতে পারেনি। পরিবারের অনুভূতিই যেন তাদের অনুভূতি।
এত কিছুর পরেও, চলতি বছর প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণে রেকর্ড গড়েছে। যেন ঠিক সময়ে পরিবারে ঈদের টাকা পাঠাতে পারলেই প্রবাসীদের হৃদয় আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে। ঈদে পরিবারের মুখে হাসি দেখলে এরা আনন্দে বিভোর হয়ে যান। ঈদের সারাটাদিন প্রবাসীর মনটা পড়ে থাকে পরিবারের কাছে। প্রবাসে প্রত্যক প্রবাসীর কর্মব্যস্ততার মাঝেও মনটা থাকে দেশে। সবকিছুর পরেই প্রবাসীদের জীবন চলে নিরন্তর। লক্ষ্যের পেছনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে এ যোদ্ধারা। এ জীবনে যখন তারা ব্যর্থতার তিক্ত স্বাদ পায় তখন চোখ বুজে সয়ে যায়। ঝিনুক যেমন নীরবে সহে এবং হাসিতে মুক্তা ফলায় তেমনি প্রবাসীরা নিজেরা কষ্ট করে পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটায় এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।