জুমবাংলা ডেস্ক : মা ইলিশ সংরক্ষণে সরকারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সুফল পাবেন জেলেরা। কারণ, অন্য বছরের চেয়ে এবার গভীর সমুদ্র থেকে ডিম ছাড়তে মা ইলিশ নদীর মিঠাপানিতে ছুটে আসার সুযোগ পেয়েছে। এতে প্রজননের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ পাওয়ায় নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়ার পরিবেশ ছিল উল্লেখ করার মতো। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের একদল মৎস্যবিজ্ঞানি মা ইলিশ বিচরণের ছয়টি অভয়াশ্রমে সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র পেয়েছেন।
এদিকে, গত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে শুক্রবার মধ্যরাতে জেলেদের জাল পড়বে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনার জলে। শুধু তাই নয়, একই সময় দেশের অন্য অভয়াশ্রমগুলোতেও সরকারের দেওয়া এই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাত সদস্যের একদল মৎস্য বিজ্ঞানি গত তিন সপ্তাহ ধরে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনাসহ দেশের ছয়টি অভয়াশ্রমে ইলিশ প্রজননের ক্ষেত্রগুলো সরেজমিন ঘুরে দেখেন। গবেষণাতরী নামে একটি জাহাজে করে ঘুরে ঘুরে ইলিশের পেটে ডিমের আধিক্য এবং তা ছাড়ার হার পর্যবেক্ষণ করেন বিজ্ঞানিরা। এসময় তারা লক্ষ্য করেন, বিগত বছরের চেয়ে এবার আকারে বড় মা ইলিশের সংখ্যা ছিল উল্লেখ করার মতো। তাতে প্রতিটি মা ইলিশে ১০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২২ লাখ পরিমাণ ডিম পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদীকেন্দ্র চাঁদপুরে কর্মরত ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবুল বাশার এবং আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে সাত সদস্যের মৎস্য বিজ্ঞানিরা এই গবেষণা চালান। মৎস্য বিজ্ঞানি আবুল বাশার জানান, ছয়টি অভয়াশ্রমের পানির গুণগতমান পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে- মা ইলিশ নিজের মতো করে ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। শুধু তাই নয়, ডিম ছাড়ার পর আবার নিরাপদে সাগরের নোনা জলে ফিরে গেছে। গবেষণায় এমনও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে পেয়েছেন।
দেশের শীর্ষ মৎস্য বিজ্ঞানি, ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান জানান, পরিভ্রমণশীল স্বভাবের মাছ হচ্ছে ইলিশ। তাই এবছর আবহাওয়া অনুকূলে পেয়ে এই ইলিশের ঝাঁক সব বাধা পেরিয়ে সাগর ছেয়ে নদীতে ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। এসময় মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তা বেশ সফল হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি আরো জানান, চলতি বছর ইলিশের উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে ডিম ছাড়ার পর আগামী জাটকা সংরক্ষণ মৌসুমে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করা গেলে এই উৎপাদনের হার ৬ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে।
এদিকে, চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনায় ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করেন। এমন জেলেরা এখন অপেক্ষায় আছেন, কখন জাল ও নৌকা নিয়ে নদীতে নেমে পড়বেন। কারণ, গত ২২ দিনের বেকারত্বের কারণে তাদের পরিবারে অভাব অনটনের কমতি ছিল না। তাছাড়া অনেক জেলেই মহাজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে জাল ও নৌকা গড়েছেন। আবার কেউ কেউ এনজিও এবং সমিতি থেকেও ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু সেই ঋণের কিস্তি পরিশোধের তাড়া তো আছেই।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার দিনভর চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনার বিভিন্নস্থান ঘুরে দেখেন নৌ পুলিশ প্রধান, অতিরিক্ত আইজিপি শফিকুল ইসলাম। পরে কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নৌ পুলিশের দুই হাজার সদস্য রাতদিন টহলের মধ্য দিয়ে মা ইলিশ সংরক্ষণে দায়িত্ব পালন করেছে। এসময় ইলিশ বিচরণের পরিবেশ নির্বিঘ্ন করতে সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেছে। তবে অভিযান চলাকালে নদীতে আটক হওয়া অবৈধভাবে ইলিশ নিধনকারী কোনো জেলেকে নৌ পুলিশ ছাড় দেয়নি বলেও জানান তিনি। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত ডিআইজি মিজানুর রহমান, চাঁদপুর অঞ্চল নৌ পুলিশের সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই ২২ দিনে মা ইলিশ সংরক্ষণে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরার দায়ে দুই শ ৫০ জেলেকে আটক করে মৎস্য সংরক্ষণ আইনে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জব্দ করা হয়েছে এক কোটি মিটার জাল, আড়াই মেট্রিক টন ইলিশ এবং শতাধিক মাছ ধরার নৌকা। তবে নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের অভিযানে এক হাজার দুই শ জেলে, সাত মেট্রিক টন ইলিশ, চারটি স্পিডবোটসহ ৫ শ মাছ ধরার নৌকা এবং ৩৭ কোটি মিটার জাল জব্দ করা হয়েছে। যা অন্য বছরের অভিযানকে ছাড়িয়ে গেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।