চট্টগ্রাম অফিস: ঘূর্ণিঝড় ফণী’র তান্ডবের মধ্যেই চট্টগ্রামের একমাত্র দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতার স্পীড বোট যোগে সন্দ্বীপ যাত্রার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামের সীতাকূন্ড উপজেলার কুমিরা থেকে স্পীডবোট যোগে উত্তাল চ্যানেল অতিক্রম করে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া পৌছান সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, স্পীড বোটে বসে আছেন তিনি। এই ছবিতে তার সাথে আরও কয়েকজন যাত্রীকেও দেখা যাচ্ছে যারা লাইফ জ্যাকেট পড়া ছিলেন। তবে, প্রকাশিত ছবিতে সংসদ সদস্যের গায়ে কোনও লাইফ জ্যাকেট ছিল না।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে ‘দু:সাহসিক যাত্রা’য় ফেসবুকে ব্যাপক প্রশংসা যেমন পেয়েছেন তেমনি কেউ কেউ এভাবে ঝূঁকিপূর্ণ যাতায়াত নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন।
ফিরোজ খান পাবেল সংসদ সদস্যের পারাপারের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, “দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে সন্দ্বীপ আসলেন প্রিয় নেতা।”
পাবেলের এই পোস্টে অনেকে সংসদ সদস্যকে ধন্যবাদ জানিয়ে মন্তব্য করেছেন। আবদুর রহমান রুহি লিখেছেন, “ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচার জন্য কেউ গ্রাম থেকে শহরে যায়, আবার কেউ ঘূর্ণিঝড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমনটা জেনেও শহর ছেড়ে গ্রামে আসে! ভালোবাসা নিবেন মাতৃপ্রেমি প্রিয় মিতা সাহেব।”
শামসুল আরেফিন শাকিল নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, “সর্বোচ্চ জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তার এভাবে ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার আমাদের ভাবায়!”
বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় ফণী’র কারণে চট্টগ্রামে ৬নং বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছিল গত বৃহস্পতিবার। সমুদ্র উত্তাল থাকায় বন্ধ হয়ে যায় উপকূলীয় এলাকায় নৌ-যাতায়ত। এরমধ্যে শুক্রবার সকালে একটি স্পীড বোট যোগে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল সন্দ্বীপ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে সীতাকূন্ডের কুমিরা ঘাট থেকে দুর্গম দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে যান মাহফুজুর রহমান মিতা ও তার সাথে থাকা আরও কয়েকজন।
মিতা সন্দ্বীপ আসনের সরকারি দলের সংসদ সদস্য।তিনি যখন স্পীডবোট যোগে ১২ কিলোমিটার উত্তাল সন্দ্বীপ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন বঙ্গোপসাগরের অপর প্রান্তে ভারতের উড়িষ্যাতে ২০০কিরোমিটার গতিতে আঘাত হেনেছিলো সুপার সাইক্লোন ফণী।
মাহফুজুর রহমান মিতা জুমবাংলাকে বলেন, “দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি ও অনান্য কর্মকান্ড তদারকি করতে উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে নিজের নির্বাচনী এলাকায় আসতে বাধ্য হয়েছি। নিজের এলাকার জনগনের পাশে থাকার জন্য এই ঝুঁকি নেয়া ছাড়া আমার অন্য কোন উপায় ছিল না।”
“এভাবে আমিসহ সন্দ্বীপের মানুষদের যাতায়ত করতে হয়, কয়েক বছর আগে আমি সন্দ্বীপ চ্যানেলে দূর্ঘটনার শিকার হয়ে তলিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রাণে রক্ষা পেয়েছি,” উল্লেখ করেন তিনি।
নিরাপদ নৌযান না থাকায় সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠলে সন্দ্বীপ রুটে নৌ যাতায়ত বন্ধ হয়ে যায়। স্বাভাবিক সময়ে স্পীডবোট ও কাঠের তৈরী নৌ-যানে সন্দ্বীপের মানুষদের যাতায়ত করতে হয়।
“ঘূর্ণিঝড় ফণী’র কারণে গত বৃহস্পতিবার থেকে সন্দ্বীপ রুটের প্রধান ঘাট কুমিরা-গুপ্তছড়ায় নৌ যাতায়ত বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান এই ঘাটের পরিচালক আনোয়ার হোসেন।
তিনি জানান, শুক্রবার সকালের দিকে সমুদ্রের ঢেউ এর আকার কিছুটা ছোট থাকায় এমপি সাহেব ও ইউএনও সাহেবকে নিয়ে সন্দ্বীপের দিকে একটি বোট ছেড়ে যায়।এরপর আমাদের ঘাট দিয়ে আর কোন নৌযান চলাচল করেনি।”
সাধারনতঃ তিন নম্বর সতর্ক সংকেত জারি হলে এই রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গত দুইদিন যাতায়ত বন্ধ থাকায় দুইদিকে কয়েক হাজার মানুষ আটকা পড়েছে।
এক দশকেরও বেশি আগে সন্দ্বীপ চ্যানেলে নৌদুর্ঘটনায় মারা যান সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতার দুই নিকটাত্মীয়। ওই সময় মিতার বাবা মরহুম মুস্তাফিজুর রহমান সন্দ্বীপের সংসদ সদস্য ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।