জুমবাংলা ডেস্ক : শীত মৌসুম এলেই শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার গহিরা উপকূলের বাসিন্দারা। প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ৩৫টি মহালে এক হাজারেরও অধিক লোক শুঁটকি তৈরির কাজ করেন। আর এ শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন যাচ্ছে দুবাই, ওমানসহ বিভিন্ন দেশে। এতে সরকারে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন হয়। চলতি মৌসুমে আনোয়ারা উপকূলে তিন হাজার মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। নভেম্বর থেকে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে শুঁটকি তৈরির এ কাজ।
সরেজমিনে গহিরা উঠান মাঝির ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বালু চরে পলিথিন বিছিয়ে চলছে শুঁটকি শুকানোর কাজ। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যোগ দিয়েছেন এ কাজে। শ্রমিকরা শুকনো শুঁটকি বাতাস দিয়ে বিশেষ কায়দায় উড়িয়ে পরিষ্কার করছেন।
জানা যায়, উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বঙ্গোপসাগর উপকূলের গ্রাম গহিরা। এখানকার বেশির ভাগ মানুষের জীবিকা চলে সমুদ্রের মাছ ধরে। বিগত ১০ বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে চলছে শুঁটকি ব্যবসার কাজ। এ কাজে ৩৫ টি শুঁটকি মহালে হাজারেরও অধিক নারী-পুরুষ কাজ করেন। এ ছাড়া আরও তিন-চার হাজার মানুষ নানাভাবে এ কাজে যুক্ত। শুঁটকি ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই স্থানীয় মৌসুমি ব্যবসায়ী। আবার অনেকে কক্সবাজারের চকরিয়া, মহেশখালী থেকেও আসেন ব্যবসা করতে।
চিংড়ির পাশাপাশি লইট্যা, ছুরি শুঁটকি, বাইলাসহ আরও কয়েক ধরনের শুঁটকি তৈরি হয় এখানে। সাগর থেকে জেলেরা বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি মাছ সংগ্রহ করে উপকূলে নিয়ে আসেন। উপকূলের শুঁটকি ব্যবসায়ীরা এই মাছ প্রতি কেজি ১০০ থেকে দেড়শ টাকা দিয়ে কিনেন। এরপর বালুচরে পলিথিন বিছিয়ে চলে শুঁটকি শুকানোর কাজ। প্রতি মহালে দৈনিক ১০০০ থেকে ১২০০ কেজি শুঁটকি উৎপাদন হয়।
এসব কাজে শুঁটকি মহালগুলোতে ২০ থেকে ২৫ জন পুরুষ এবং ৭ থেকে ১০ জন নারী শ্রমিক কাজ করেন। আর প্রতি কেজি ছোট ইছা শুঁটকি ৩০০-৩৫০ টাকা, বড় ইছা ৫৫০-৬০০ টাকা, জলিঙ্গা ইছা ৭০০-৭৫০ টাকা, মিশালি শুঁটকি ১৫০- ২০০ টাকা ও শুঁটকির গুঁড়া ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে কেমিকেলমুক্ত শুঁটকি হওয়ায় এর চাহিদাও বেশি। এখানকার শুঁটকি ব্যবসায়ীরা হল, রায়পুর ইউনিয়নের এরশাদ, জাহাঙ্গীর আলম, নুর নবী, আবদুল খালেক, নবী হোসেন, কামাল উদ্দিন, চকরিয়া রাজাখালী এলাকার বাসিন্দা মোস্তাক আহমদ, সোলেমান, পেটান আলী, শফিউল্লাহসহ প্রায় ৩৫ জন ব্যবসায়ী কাজ করেন।
ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শুঁটকি তৈরির কাঁচা মাছ প্রতি কেজি ১০০ থেকে দেড় শ টাকায় কেনা হয়। আর প্রতি কেজি শুঁটকি ২০০ থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। প্রতি মহালে প্রতি দিন ১০০০ থেকে ১২০০ কেজি শুঁটকি উৎপাদন হয়। এই শুঁটকি চট্টগ্রামের চাক্তাইসহ বিভিন্ন বড় বড় ব্যবসায়ীরা এসে নিয়ে যান। এই শুঁটকি বিদেশে দুবাই, ওমানের বড় ব্যবসায়ীরা পাইকারী নিয়ে যান। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই কাজ।
শুঁটকি শুকানোর শ্রমিক আমেনা খাতুন বলেন, ‘দৈনিক ৪৫০ টাকা মজুরিতে কাজ করছি। মহিলা মানুষ আর কোনো কাজতো করতে পারব না। তাই এ কাজ করে সংসার চালাচ্ছি।’
শ্রমিক মোহররম আলী বলেন, ‘শীত মৌসুমে তেমন কোনো কাজ পাওয়া যায় না। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুঁটকির মহালে দৈনিক ৭৫০ টাকায় কাজ করি।’
আনোয়ারা উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা রাশিদুল হক বলেন, ‘আমাদের তালিকাভুক্ত ২০ জন শুঁটকি ব্যবসায়ী রয়েছেন। এদেরকে শুঁটকির ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। শীত মৌসুমের তিন থেকে চার মাস উপকূলে শুঁটকির কাজ চলে। শুঁটকির ব্যবসায় বিভিন্নভাবে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়। এই শুঁটকি পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিদেশে নিয়ে যান।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।