জুমবাংলা ডেস্ক: দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে রাউজানের উষা-ধনরঞ্জন দম্পতির সংসার চলছে মুড়ি বিক্রি করে। স্বাধীনতার পর ধনরঞ্জনের সংসারের বউ হয়ে আসেন ঊষা রানি। শাশুড়ির হাত থেকে মুড়ি তৈরির হাতে খড়ি তার। তখন থেকেই চলছে মুড়ি ভাজার এই কাজ। স্বামী-স্ত্রী মুড়ি বিক্রি করে এ পর্যন্ত বিয়ে দিয়েছেন চার কন্যাকে। এখন বয়সের ভারে অনেকটা নুয়ে পড়েছেন এই দম্পতি। ছেলে না থাকায় মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার পর থেকে তারা এখন একা। তবু তারা জীবন সংগ্রামে আছেন মুড়ি নিয়ে। ধান সিদ্ধ করে চাল, সেই চাল থেকে মুড়ি। এই মুড়ি ভাজতে তারা দুজন একে অপরকে সাহায্য করেন। মুড়ি হাট-বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন দুজনেই।
চুলার পাশে বসে মুড়ি ভাজতে ভাজতে নিজেদের জীবন সংগ্রামের কথা বলেন তারা। বলেন, মা-বাবা মারা গেছে। মেয়েরা শ্বশুর বাড়িতে চলে গেছে। এখন দুজনের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন এই মুড়ি। মা-বাবার শেখানো এই পেশা তারা শেষপর্যন্ত আঁকড়ে থাকবে। এই তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন।
হতাশার কণ্ঠে তারা বলেন, ‘সনাতন পদ্ধতিতে তৈরি মুড়িতে আলাদা একটি স্বাদ আছে। যা যান্ত্রিক এই যুগে তৈরি করা মুড়িতে পাওয়া যায় না। এখন যন্ত্রে কৃত্রিমভাবে তৈরি মুড়িতে হাট-বাজার সয়লাব। ঘরে তৈরি মুড়ি চাইলেও মানুষ সহজেই হাট-বাজরে পায় না।’
রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কানু ডাক্তার বাড়ির এই দম্পতি নিজেদের জীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘এখন মুড়ির ধান, চুলার জ্বালানি সবকিছুর দাম বেশি। এলাকার মানুষের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে এখনো এ কাজে আছি। কোনো রকমে সংসার চালিয়ে যাচ্ছি। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত চেষ্টা করে যাব গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য ফিরোজ উদ্দিন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে এই পরিবারের ভাজা মুড়ি আমাদের প্রিয়। রমজান মাসে ইফতার সামগ্রী হিসাবে এলাকার মানুষ হাতে ভাজা মুড়ি এই পরিবার থেকে সংগ্রহ করে থাকে।’
এলাকার চিকিৎসক বিজয় দাশ বলেন, ‘গ্রামের হাতে ভাজা মুড়ি গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। এখন যান্ত্রিক যুগে আমরা সবকিছু হারিয়ে ফেলছি। সবকিছুতে কৃত্রিমতা। এখন বাজারের রাসায়নিক সারযুক্ত মুড়ি খাওয়ার প্রবণতায় শরীরে লিভার, কিডনি ধীরে ধীরে অকেজো হওয়ার সম্ভবনা থাকে।’ তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ জনপদে যারা সনাতন পদ্ধতিতে মুড়ি তৈরি করে সরকারিভাবে তাদের সহায়তা দেওয়া দরকার।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।