জুমবাংলা ডেস্ক : লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের দীর্ঘ মেয়াদে লক্ষ্য সিএমএসএমই ঋণ কার্যক্রম পুরোপুরি ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে নির্বাহ করা। এক সাক্ষাৎকারে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ও পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সিএমএসএমই প্রধান মো. কামরুজ্জামান খান
সিএমএসএমই কার্যক্রমে আপনাদের অবস্থান কী, সফলতা কেমন?
লংকাবাংলা ফাইন্যান্স পিএলসি ২০১৪ সাল থেকে সিএমএসএমই (অতীতে যা এসএমই ফাইন্যান্স নামে পরিচিত) খাতে ঋণ বিতরণ করে আসছে। লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের মোট ঋণের ৩৮.০২ শতাংশ সিএমএসএমই খাতে বিতরণ করা আছে। বর্তমানে সিএমএসএমই খাতে আমাদের দুই হাজার ৩৫৪ কোটি টাকার ঋণস্থিতি রয়েছে। এ ছাড়া আমরা অদ্যাবধি প্রায় ৩০ হাজার উদ্যোক্তার মাঝে সিএমএসএমই ঋণ বিতরণ করেছি।
আমাদের সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রশংসিত হয়ে আসছি।
আপনাদের কী কী সিএমএসএমই পণ্য ও সেবা আছে?
গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে আমরা জামানতসহ ও জামানতবিহীন—উভয় ধরনের ঋণের ব্যবস্থা রেখেছি। আমাদের রয়েছে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ বা সম্প্রসারণের জন্য ‘আবাস’, বাণিজ্যিক যানবাহন ক্রয়ের জন্য ‘দুর্বার’, বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ‘ইজারা’, কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য ‘স্বর্ণালী’ ঋণ। এ ছাড়া স্থায়ী আমানতের বিপরীতে ‘সরল’ এবং সম্পূর্ণ জামানতের বিপরীতে ‘আস্থা’-এর মাধ্যমে আমরা ঋণ দিয়ে থাকি।
এ ছাড়া জামানতবিহীন ঋণগুলোর মধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণ বা স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয়ের জন্য ‘অহনা’, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ‘শিখা-অনন্যা’ এবং নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ‘সম্পর্ক’-এর মাধ্যমে ঋণ দিয়ে থাকি। আমরা ঋণ বিতরণ ও আদায় সহজতর করতে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের সহায়তা নিচ্ছি। সম্প্রতি ডানা ফিনটেক, দ্রুত লোন, ই-কুরিয়ার, ডেলিভারি টাইগারসহ বেশ কয়েকটি ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করছি। এগুলোর মাধ্যমে গ্রাহকরা সহজেই ঋণ আবেদন থেকে শুরু করে কিস্তি পরিশোধ পর্যন্ত সব কার্যক্রম সুন্দরভাবে করতে পারেন।
আপনাদের বিনিয়োগ ফেরত আসার হার কেমন?
২০২০ সালের তুলনায় ২০২২ সালে আমাদের ঋণস্থিতির পরিমাণ ৩৩.৭১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আমাদের বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৯২.২২ শতাংশ ফেরত আসে। এ ছাড়া ২০২২ সালে আমাদের ঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার ১০৭.৬৩ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।
নতুনদের জন্য কী করছেন? নারী উদ্যোক্তারা কতটা সহায়তা পাচ্ছেন?
উৎপাদনমুখী খাতে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে ঋণ বিতরণসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন উদ্যোক্তা উন্নয়ন ফান্ডের সহযোগিতায় নতুন উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ও জামানতবিহীন ঋণ বিতরণ করে আসছি আমরা। এ ছাড়া উদ্যোক্তাদের পেশাগত মান উন্নয়নের উদ্দেশ্যে একক, এসএমই ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতায় যৌথভাবে নিয়মিত বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে আসছি। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আমরা সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী একটি প্ল্যাটফরম সাজিয়েছি, যা ‘শিখা-অনন্যা’ নামে পরিচিত।
এই প্ল্যাটফরমের অধীনে সব নারীকে বিশেষ ছাড় মূল্যে ঋণ, ক্রেডিট কার্ড ও অন্যান্য সেবা প্রদান করছি। লংকাবাংলা ফাইন্যান্স পিএলসি নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে বার্ষিক মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করে আসছে।
তৃণমূলে সিএমএসএমই অর্থায়ন ছড়িয়ে দিতে আপনারা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
তৃণমূল মানুষের মধ্যে সিএমএসএমই অর্থায়ন ছড়িয়ে দিতে আমরা আমাদের ২৭টি শাখা ছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছায়নি, সেখানে ৪২ জন মোবাইল ল্যান্ডিং অফিসার (এমএলও) নিয়োগ করেছি। এ ছাড়া যেসব অঞ্চলে আমাদের শাখা বা এমএলও নেই, সেখানে সিএমএসএমই অর্থায়ন সেবা পৌঁছে দিতে ডিজিটাল চ্যানেল ব্যবহার করছি।
ক্ষুদ্র অর্থায়নে চ্যালেঞ্জ কী? কী ধরনের সহায়তা সরকারের কাছ থেকে আশা করেন?
দেশি পণ্যের ট্রেডিংয়ের সঙ্গে যারা সম্পর্কিত তাদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। কারণ একটি উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য একাধিক ট্রেডিং ব্যবসার প্রয়োজন হয়। তাই সব ধরনের ট্রেডিং ব্যবসায় পুনরর্থায়নের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করার সীমাটুকু সব সময়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার অনুরোধ করব।
এ ছাড়া দেশে সিএমএসএমইদের তথ্যসংবলিত কোনো ডাটা ব্যাংক নেই। ডাটাবেইস একটি সেক্টরের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক, এসএমই ফাউন্ডেশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে একটি সুসংবদ্ধ ডাটাবেইস প্রস্তুতের আবেদন থাকবে। এ ছাড়া উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠান গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা, পুনরর্থায়নের মাধ্যমে তহবিল প্রদান এবং তাদের উন্নয়নের জন্য যথাযথ পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।
অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়ন বাড়াতে আপনার প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আমরা আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রম সম্প্রসারণে দুইভাবে পরিকল্পনা নিয়েছি। যেখানে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে প্রযুক্তির প্রয়োগ সহজ হচ্ছে, সেখানে ডিজিটাল ল্যান্ডিং প্ল্যাটফরম ব্যবহার করছি। যেখানে প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাচ্ছে না, সেখানে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে আমরা মোবাইল ল্যান্ডিং অফিসারদের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হচ্ছে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের ঋণ বিতরণ কার্যক্রম পুরোপুরি ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে নির্বাহ করা এবং আমরা এই লক্ষ্য সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।