জুমবাংলা ডেস্ক : এই দেশে’র বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া প্রায় সবাই এখন বিসিএস ক্যাডার হতে চায়। এর মাঝে ৭০ ভাগ চায় পুলিশ হতে। বাদ বাকী ৩০ ভাগ চায় ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা সচিব-টচিব হতে। রবিবার একজন ডিআইজি (প্রিজনের) বাসা থেকে নগদ ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। আচ্ছা, ৮০ লাখ টাকা এক সঙ্গে দেখতে কেমন?
আমার আসলে অন্যায় হয়েছে এই প্রশ্ন করে। ছোট বেলা থেকে এই বড় বেলা, আজ অবদি জীবনে এতো টাকার কথা শুনিনি, দেখিনি; দেখবোও না বোধকরি। জীবনের মাঝ পথে তো চলেই এসছি। ও আচ্ছা! আমি তো ভুলতে’ই বসেছি- আমি তো আর বিসিএস ক্যাডার না! ওই ভদ্রলোক কই থেকে এতো টাকা পেলেন সেই প্রশ্নে এক্ষুনি যাচ্ছি না। আমি বরং ভাবছি অন্য বিষয়।
যার বাসাতে’ই ৮০ লাখ নগদ টাকা থাকে; তার না জানি কতো টাকা আর সম্পদ আছে নামে-বেনামে! তার ব্যাংকে বউ-শালী’র নামে কতো টাকা আছে; সেটা নিয়ে আমি মহা চিন্তায় আছি!
এই যেমন ধরুন- আমার ব্যাংকে যদি ১০ লাখ টাকা থাকে, আমি হয়ত বাসায় ৫০ হাজার টাকা রাখবো। তো, এই ভদ্রলোক যেহেতু বাসাতেই ৮০ লাখ টাকা রেখেছেন, তাহলে কতো শত কোটি টাকা’র মালিক উনি এর মাঝে’ই হয়ে গিয়েছেন; কে জানে!
ভদ্রলোক এবং তার স্ত্রী’কে দেখে মনে হলো না বয়স খুব একটা বেশি হয়েছে। এর মানে দাঁড়াচ্ছে তিনি আরও অনেক দিন হয়ত চাকরি করতেন কিংবা করবেনও! তো, তিনি যখন অবসরে যাবেন, তখন না জানি কতো টাকার মালিক তিনি হবেন!
গতকাল কিংবা আজ’ই না পড়লাম এক স্কুল পড়ুয়া ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে মাঝপথে? পথের মাঝে তাকে মরতে হলো কেন? কারণ এক সচিবের ওই পথ দিয়েই যাবার কথা ছিল। তিনি ফেরি পার হবেন, এই জন্য ফেরি ছাড়ছিল না! তার জন্য ফেরি তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেছে।
এ দিকে অসুস্থ ওই স্কুল ছাত্র এ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে না ফেরার দেশে’ই চলে গিয়েছে!
আজ আবার এই মুহূর্তে পত্রিকার শিরোনামে দেখতে পাচ্ছি, ওই ডিআইজি বলেছেন- বাসার ওই টাকা নাকি তার বেতন-ভাতার টাকা! অথচ আমি কাল পুরো ভিডিওটা’ই দেখেছি।
দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক ইউসুফ ভাই আমার দীর্ঘদিনের ফেইসবুক বন্ধু। ভিডিও’তে তাকে দেখেই আগ্রহী হয়ে পুরো ভিডিওটা দেখেছি। সেখানে পরিষ্কার দেখলাম, ওই লোকের বউ টাকার দুটো ব্যাগ পাশের বাসার ছাদে ফেলে দিয়েছিলেন। এরপর তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল
কেন ফেলেছেন? ভয়ে। ভয়ে কেন? কোন উত্তর দিতে পারেনি এই নারী। অথচ এক রাত পার না হতে’ই এখন ওই ডিআইজি মশাই বলছেন- এইসব তার বেতন-ভাতার টাকা। আচ্ছা, কতো বছর চাকরী করলে পরে ৮০ লাখ টাকা জমানো যায়, আপনাদের কারো কি জানা আছে? এই হচ্ছে আমাদের অবস্থা। অন্যায় মানুষ করে, ভুলও মানুষ’ই করে। এটা একদম অস্বাভাবিক কিছু না। তবে আমাদের দেশের সমস্যা’টা অন্য খানে।
এই দেশে মানুষজন অন্যায় করে, উল্টো অন্যায়ের সাফাই গায়। এই যেমন এখন এই ডিআইজি মশাই বীরের মতো বলছেন- এইসব তার বেতনের টাকা! কাল শুনবেন ওই সচিব বলবে- ওই স্কুল ছাত্র এমনিতেই মারা যেত, এখন সব দোষ হয়েছে আমার! ও, আপনাদের জানিয়ে রাখি- যেই পরিস্থিতির বর্ণনা দিলাম, এটাই আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ।
কারণ, এখনকার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেপেলেরা কিন্তু পুলিশ কিংবা সচিব’ই হতে চায়! মানে বিসিএস ক্যাডার আরকি! আপনি কী ভাবছেন- তারা দেশ সেবা করার জন্য ক্যাডার হতে চায়? তাহলে উপরের যে পরিস্থিতির বর্ণনা করলাম, সে গুলো কি মিথ্যা? জেনে রাখুন- যা ঘটে, তার খুব কম’ই আমরা জানতে পারি।
এই দেশে এখন সবাই ভিআইপি হতে চায়। খুব অবাক হবো না আর কয়েক দিন পর যদি দেশটা পৃথিবীর কাছে পরিচিতি পায় – “এ ল্যান্ড অফ ভিআইপি” হিসেবে!
যেই দেশে লেখাপড়া জানা, শিক্ষিত ছেলেপেলেরা আর কিছু না, শুধু’ই ভিআইপি হতে চায়!
লেখক : আমিনুল ইসলাম (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।