লাইফস্টাইল ডেস্ক : প্রতিদিন একটু পর পরই স্মার্টফোনের অ্যাপ দিয়ে তাপমাত্রার পরিমাপ করা এখন খানিকটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অনেকেরই হয়তো হয়েছে এমনটা। ‘যদি কমে, যদি কমে’ ঘরানার এক আশায় মন আচ্ছন্ন হয়ে আছে গত ২৭ দিন। কথায় তো আছেই, আশায় বাঁচে চাষা। আর চাষা না হলে কি আর এমন গরম সইতে হয়!
সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, গত শুক্রবারই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলায়, ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ৩১ মার্চ থেকে টানা ২৭ দিন তাপপ্রবাহে পুড়ছে পুরো দেশ। ১৯৪৮ সাল থেকে হিসাব করলে গত ৭৬ বছরে নাকি এপ্রিল মাসে এমন ঘটনা ঘটেনি এতদঅঞ্চলে। এর আগে ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ ২৩ দিন তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছিল দেশ। এবার তা ছাড়িয়ে গেছে প্রবল বিক্রমে। তো এমন অবস্থায় তাপ কমানোর যে কোনো উপায়ই আসলে সাদরে বরণ করে নেওয়ার মতো বিষয়। আমাদের মতো চাষা টাইপের সাধারণ মানুষের জন্য তো এর প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি।
এরই মধ্যে গরম কমানোর উপায় হিসেবে গাছ লাগানোর বিষয়টি বহুল আলোচিত। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এ দেশের নেটিজেনদের ব্যাপক তৎপরতায় হাজারে হাজারে গাছ লাগানোও হয়ে গেছে এরই মধ্যে। তবে ফেসবুকে লাগানো গাছগুলো বড় হতে কিছুটা সময় তো লাগবে। আবার নিয়মিত তাতে জল–হাওয়া দেওয়াও তো ট্রেন্ড টিকে থাকার ওপর নির্ভরশীল। ফলে সেখান থেকে ঠান্ডা বাতাস বা সুফল পাওয়াটা দীর্ঘমেয়াদী একটি কার্যক্রমের ব্যাপার। হুজুগে জাতি হিসেবে আমরা ফেসবুকে গাছ লাগিয়ে ফেলেছি বটে, তবে সেসব গাছের পেছনে কতটা লেগে থাকতে পারব—তা নিয়ে কিছু সংশয় তো থাকেই।
বর্তমানে যে ধরনের গরম অনুভূত হচ্ছে, তাতে শরীরে স্বাভাবিক কাপড়চোপড় থাকলেও ফিল হচ্ছে, বর্ম পরিধান করে যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার মতো! মাথার ক্যাপ হয়ে যাচ্ছে শিরস্ত্রাণ। আঘাত (মতান্তরে রোদ) থেকে বাঁচাবে বুঝেও এটি মাথায় রাখা দায়! ওদিকে ‘বর্ম’ পরে খালি মনে পড়ছে বাহুবলীর কথা। এমন গরমে নিশ্চয়ই বাহুবলীও শুধু আইসক্রিম খেতেই চাইত। ‘কাটাপ্পা নে বাহুবলী কো কিউ মারা’র বদলে প্রশ্ন উঠত—‘বাহুবলী নে আইসক্রিম কিউ খ্যায়া?’
সমস্যা আরও আছে। প্রচণ্ড গরমে এসি’র বাইরে থাকা মানুষের শরীরের সাথে সাথে মাথাও গরম হয়ে যাচ্ছে। পাবলিক বাসে চলাচলকারী যে কোনো যাত্রী তা বুঝতে পারছেন ভালোই। মানুষ পাশাপাশি বসলেও গায়ে গা লাগলেই ব্যাপক বিরক্ত হয়ে পড়ছেন। শোনা যাচ্ছে, কখনো কখনো নাকি এ ধরনের স্পর্শের কারণে স্পর্শকাতর ঝগড়াও শুরু হয়ে যাচ্ছে। তাহলে যারা বাসে দাঁড়িয়ে থাকছেন, তাদের মনের অবস্থা সহজেই অনুমেয়।
অর্থাৎ, শরীরের গরম মনেও প্রভাব ফেলছে। এসি’র বাইরে থাকা মানুষজনদের বেঁচে থাকার স্বার্থেই তাই উল্টো যাত্রা করা প্রয়োজন। সুতরাং এসি ছাড়াই ঠান্ডা খুঁজতে আমাদের সেই মনের মুকুরে হারিয়ে যেতে হবে। কারণ মনের ঠান্ডাই যে আসল ঠান্ডা!
এভাবে মনের ঠান্ডাকে বডিতে নিয়ে আসার জন্য প্রথমেই মনের ঘরে এসি লাগাতে হবে। ঘর যেহেতু মনের, সুতরাং এসির ব্র্যান্ড নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তার প্রয়োজন নেই। কত টনের কিনবেন, তা নিয়েও নো টেনশন। প্রয়োজনে ৫ টনের এসিই লাগাবেন। বাজারের ১ নম্বর এসিই নেবেন। আগে মনটাকে তো ঠান্ডা করতে হবে!
মনের ঘর ঠিকঠাক ঠান্ডা হওয়ার পর নিজেকে প্রণোদনা দেওয়া শুরু করুন। বার বার বলতে থাকুন, ‘বি কুল, বি কুল’। এভাবে ১০০ থেকে ১৫০ বার বললেই দেখবেন গলা শুকিয়ে গেছে। তারপর একটু পানি খেয়ে আবার আবৃত্তি শুরু করুন। দেখবেন ৩০০ বারের আগেই শরীরে একটা ঝটকা লাগবে। ফ্যানের গরম বাতাস শরীর জুড়ানো শুরু করে দেবে।
দিনের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রাতে ঘুমানোর সময়ে এই কাজ নিয়মিত করতেই হবে। দেখবেন, শরীর ধীরে ধীরে ছেড়ে দিচ্ছে। শীত শীত লাগাও শুরু হতে পারে। তবে বাসস্থান ভবনের টপ ফ্লোরে হলে সময় একটু বেশি লাগতে পারে। তাই ধৈর্য্য হারালে চলবে না।
একই কাজ করতে হবে গোসল করার সময়ও। কল খুলে গরম পানি পেলেই মেজাজ তিরিক্ষি করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, গেল শীতে আপনি নিশ্চয়ই গিজার লাগানোর কথা ঘুণাক্ষরেও কখনো ভেবেছিলেন। সেই গিজার প্রকৃতি আপনার ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে। আসতে আসতে পথে একটু দেরি হয়েছে, এই আর কি! শীতের জিনিস গ্রীষ্মে এলেও, এসেছে তো! এক্ষেত্রে অসহ্য বোধ না করে কল থেকে পড়া পানি একটু ফুঁ দিয়ে জুড়িয়ে নিয়ে ব্যবহারের পরামর্শ রইল। না শুনলে আপনারই জ্বলবে, অন্যের আর কি।
যেহেতু পাগলেও নিজের ভালো বোঝে, সুতরাং আশা করা যেতেই পারে যে, আমরাও কিছুটা বুঝতে পারি। এমতাবস্থায় নিজের ভালোর জন্যই গরমা গরম হাওয়া আপনাকে গলিয়ে দেওয়ার হাজার চেষ্টা করলেও, সেই লু হাওয়াকে দখিনা শীতল বাতাস মনে করার চেষ্টা করে যেতে হবে। মাঝে মাঝেই বলে উঠতে হবে, ‘আহ্, কী ঠান্ডা!’ ঘামে ভিজে শরীর জবজবে হয়ে গেলে মনে করতে হবে যে, প্রবল ঝড়–বৃষ্টিতে রাস্তায় ছাতা ছাড়া বের হয়েছিলেন বলেই এই অবস্থা!
একটি কথা মনে রাখতে হবে, মনের ঘরে একবার ৫ টনের এসি লাগিয়ে ফেলার পর এমনটি ভাবা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। তাই ব্যাগে থাকা বোতলের পানি ঠোঁটে উষ্ণ ছোঁয়া দিলে, সেটিকে চা–কফি ভেবে নিতেই হবে। বুঝতে হবে যে, এই গরম থুড়ি ‘ঠান্ডা’ আবহাওয়ায় চা–কফি তো খেতেই হবে একটু!
এভাবে কয়েকদিন চলার অভ্যাস করলেই দেখবেন, আপনার মনের ঠান্ডা চলে এসেছে ফুল বডিতে। একেবারে ডাইরেক্ট কানেকশন যাকে বলে। তখন আর তাপমাত্রা কতটা বাড়ল, তা নিয়ে আপনার কোনো দুশ্চিন্তাই হবে না। শীতল বাতাস তখন মন থেকে ছড়িয়ে পড়বে পুরো শরীরে। এই প্রক্রিয়ায় দুবাইয়ের স্টাইলে পেয়ে যাবেন এন্টার্কটিকার ফ্লেভার। থেকে থেকে কেবলই বোধ হবে, ‘উহু, কী ঠান্ডা! ইশ্, কী ঠান্ডা!’ তখনই প্রমাণ হয়ে যাবে যে, মনের ঠান্ডাই আসল ঠান্ডা। তবে এই প্রক্রিয়ায় একটু সাবধানে থাকার পরামর্শ রইল। এত ঠান্ডায় দাঁতকপাটি লেগে গেলে কি করবেন, তা ভেবে আগে থেকেই সতর্ক থাকবেন প্লিজ!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।