দৃষ্টিহীন তাসপি মায়ের মুখে শুনে শুনে পড়াশোনা করে জিপিএ-৫ পেলেন
জুমবাংলা ডেস্ক : নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও শাহনাজ পারভিন দম্পতির দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দুই ছেলে-মেয়ে। মেয়ের সামান্য দৃষ্টিশক্তি থাকলেও ছোট সন্তান রিজওয়ান ইসমাম তাসপি জন্মলগ্ন থেকেই পুরোপুরি দৃষ্টিহীন। মেয়ে রেজমিন ইমরোজ চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন।
বর্তমানে বার কাউন্সিলের সনদের পরীক্ষা দিয়ে ফলাফলের অপেক্ষায় আছেন রেজমিন। আর জন্মলগ্ন থেকেই দৃষ্টিহীন রিজওয়ান ইসমাম তাসপি মায়ের মুখে শুনে শুনে পড়াশোনা করে নোয়াখালীর বসুরহাট সরকারি মুজিব কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন । এর আগে এসএসসিতে তাসপি ফল ছিল জিপিএ-৪.৭২। জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলেন তাসপি। তাসপির বাবা মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া চট্রগ্রাম জিপিওতে চাকরি করেন। মা শাহনাজ পারভীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
বড় বোনের মতো ছোটবেলা থেকেই তাসপির পড়াশোনার প্রতি বেশ আগ্রহ ছিল। শিক্ষক আর মায়ের মুখ থেকে শুনে শুনে সে পড়াশোনা করতেন। তার এই আগ্রহের কারণে তাঁকে চট্রগ্রামের মুরাদপুর সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি করানো হয়। সেখানে আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন তিনি। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৪১ পান তিনি। পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর আবার গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন তাসপি। গ্রামে ফেরার পর তিনি মায়ের কর্মস্থল কোম্পানীগঞ্জের উত্তর চর কাঁকড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (প্রাক-প্রাথমিক থেকে অষ্টম) ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। জেএসসি পাস করার পর কোম্পানীগঞ্জ মডেল হাই স্কুলে ভর্তি হন।
পড়াশোনার ক্ষেত্রে তাসপির একমাত্র সঙ্গী তার মা শাহনাজ পারভিন। তিনি বই পড়ে শোনান, ছেলে তা শুনে মুখস্ত করেন। কখনও কখনও মা বই পড়ে রেকর্ড করে রাখতেন, যা পরবর্তীতে শুনে মুখস্ত করতেন তাসপি।
তাসপির মা শাহনাজ পারভিন বলেন, আমার ছেলের অন্যদের মতো না। তাই তার জন্য অনেক সময় ব্যয় করতে হয়েছে। সে প্রচণ্ড মেধাবী ফলে কোনো পড়া একবার শুনলে তার মুখস্ত হয়ে যেত। সে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছি। এসএসসি পরীক্ষায় গণিতে সঠিকভাবে শ্রæতিলেখক না পাওয়ায় জিপিএ-৫ পায়নি। তবুও এসএসসিতে সে জিপিএ ৪ দশমিক ৭২ পেয়েছে। এবার এইচএসসিতে সরকারি মুজিব কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
শাহনাজ পারভিন আরও বলেন, আমি উত্তর চরকাঁকড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। আমার হাত ধরে তাসপি স্কুলে যাতায়াত করতো। তার বাবা চট্রগ্রামে সরকারি চাকরি করেন। ফলে আমার কাছেই তাসপির বেড়ে ওঠা। তার বন্ধুরা ছিল খুবই আন্তরিক। তারাও অনেক সহযোগিতা করেছে। তাসপির স্বপ্ন পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হওয়া। তিনি তার সন্তানদের জন্য দোয়া কামনা করছেন সবার।
তাসপির বাবা মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমার সন্তানের ফলাফলে আমি খুব খুশী। যারা তার পড়াশোনার পেছনে ভূমিকা রেখেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সে যেন মানুষের মতো মানুষ হতে পারে সেই দোয়া করবেন সবাই।
রিজওয়ান ইসমাম তাসপি জানান, অন্য শিশুদের চাইতে একটু দেরীতে পড়াশুনা করেন তিনি। পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে পড়ালেখায় নানা প্রতিবন্ধকতা ছিল তার। তবে সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে মায়ের কাছ থেকে পড়া শুনে শুনে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছি।
তাসপি বলেন, আমি শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় যুক্ত হতে চাই। আমার মতো কোনো শিক্ষার্থীকে যেন এত কষ্ট না করতে হয় সেজন্য কাজ করতে চাই। আমার পড়াশোনায় সব থেকে বেশি ভূমিকা আমার মায়ের। শিক্ষক-সহপাঠীরাও আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে শ্রæতিলেখকের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি যেন শিক্ষক হতে পারি সেই জন্য সবাই দোয়া করবেন।
তাসপি আরো বলেন, শিক্ষক, পরিবার ছাড়া আমি আমার বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে আমজাদ হোসেন ও মেহেদী হাসান নামে দুইজন বন্ধু সব সময় আমার পাশে ছিল। তারা আমাকে অনেক সহযোগিতা করে গেছে। মেহেদী বই পড়ে পড়ে তা রেকর্ড করে পাঠিয়েছে। এই ঋণ কখনোই শোধ করার নয়।
তাসপির সহপাঠী আসিফুল ইসলাম ইফাত বলেন, সে আমাদের কলেজের গর্ব। নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও সে পড়াশোনা করে জিপিএ-৫ পেয়েছি। আমরা সহপাঠীরা সব সময় তার পাশে ছিলাম।
সরকারি মুজিব কলেজের শিক্ষক নুর মোহাম্মদ বলেন, আমাদের কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে দশজন জিপিএ-৫ পেয়েছে তার মধ্যে তাসপি একজন। তাসপি খুব বুদ্ধিমান ছেলে। আমি ক্লাসে যা পড়াতাম, সেগুলো সে মনোযোগ দিয়ে শুনত, আর রেকর্ড করে নিত। কখনোই সে ক্লাস ফাঁকি দেয়নি।
সরকারি মুজিব কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তাসপি পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিলো। এ কারণেই সে সফল হয়েছেন। করোনাকালে যে কয়জন শিক্ষার্থী নিয়মিত অনলাইনে ক্লাস করেছেন,তাসপি ছিলো তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
আপনার রাতের ঘুম উড়িয়ে দেবে এমএক্স প্লেয়ারের এই ওয়েব সিরিজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।