জুমবাংলা ডেস্ক : মাত্র এক ঘণ্টায় ভিসা এবং আধা ঘণ্টায় টিকিট। তাও আবার অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ জিল্যান্ডের মতো উন্নত দেশে। রাজধানীর কাকরাইলের রূপায়ণ-করিম টাওয়ারে অবস্থিত ডলফিন এভিয়েশন লি. এর এজেন্টদের কাছ থেকে এমন খবরে অনেকটাই হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন দেশের বিভিন্ন এলাকার অনেক সহজ-সরল মানুষ। সহায় সম্বল বিক্রি করে কিংবা চড়া সুদের ওপর টাকা নিয়ে তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। প্রতারণার বিষয়টি টের পাওয়ার পর টাকা ফেরত চাইলে তাদের ওপর নেমে আসছে নানা হয়রানি এমনকি অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন।
গা শিউরে ওঠা প্রতারণার বিষয়টি অবহিত হয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। ভুক্তভোগীদের একজন জামালপুরের সরিষাবাড়ির ধোবধরা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আবদুর রাজ্জাক। এক পরিচিত জনের মাধ্যমে খবর পান রাজধানীর কাকরাইলের করিম টাওয়ারের ডলফিন এভিয়েশন লিমিটেড নামের এক এজেন্সির। জীবনকে কিছুটা সচ্ছল করতে নিউ জিল্যান্ডে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। চড়া সুদের ওপর টাকা নিয়ে গত আট মাস আগে ৮ লাখ টাকা দিয়েছিলেন ডলফিনের ওমর ফারুকের কাছে।
উন্নত স্বপ্নে বিভোর থাকা রাজ্জাককে দেওয়া হয়েছিল নিউ জিল্যান্ডের জাল ভিসা আর টিকিট। সুদের টাকা ফেরত দিতে এরই মধ্যে বিক্রি করে দিয়েছেন নিজের বসত ভিটা। পরবর্তীতে গত আট মাস ধরে ডলফিন কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় টাকা ফেরত দেওয়ার তারিখ দিয়েছেন। এখন টাকা ফেরত চাইলে দিচ্ছেন প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি। জানা গেছে, পাবনার বাসিন্দা মো. সোহাগ মাহমুদকে সচ্ছল জীবনের স্বপ্ন দেখিয়েছিল ডলফিন এভিয়েশনের এজেন্ট মঞ্জু। দ্রুত ভিসা হয়ে যাচ্ছে এমন আশ্বাসে সোহাগও নিজের বাড়ির জায়গা বিক্রি করে টাকা দিয়েছিলেন মঞ্জু নামের এক ব্যক্তিকে।
তাকে জানানো হয়েছিল, ১৫ দিন পর ফ্লাইট। তার হাতে তুলে দিয়েছিলেন ১০ লাখ টাকা। নিউ জিল্যান্ডের ই-ভিসায় নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নাম ছিল জেএলজি ইন্ডাস্ট্রিজ। ভিসা ইস্যুর তারিখ ছিল ২২ মার্চ ২০২৩। মঞ্জু নিজেও বসেন কাকরাইলের রূপায়ণ টাওয়ারের ডলফিন এভিয়েশন অফিসে। তবে ফ্লাইটের দুই দিন আগে ডলফিন অফিস থেকে জানানো হয় কিছু সমস্যা হয়েছে। ফ্লাইটের তারিখ পরিবর্তন হয়েছে।
এরপর থেকে শুরু হয় তাদের টালবাহানা। ডলফিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক আর অর্থ পরিচালক পারভেজের মিষ্টি কথার ফাঁদে পড়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা তুলে দেন ফেনীর দাগনভ্্্ঞূার জামাল। ব্যস, তারপর থেকেই সহজসরল জামালের সঙ্গে শুরু হয় ফারুক, পারভেজ গংদের একের পর এক প্রতারণার গল্প। তবে কিছুদিনের মধ্যেই জামাল টের পেয়েছিলেন ডলফিনের প্রতারণা আর জাল ভিসার কারবারের বিষয়টি। তবে ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন এই ভুক্তভোগী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাকে। পরবর্তীতে রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। তবুও পাননি প্রতিকার! গতকাল বলছিলেন, আমার মতো আরও অন্তত ৭০ জন ডলফিনকে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। টাকা চাইতে গিয়ে ডলফিনের অফিসেই নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
সরেজমিন গত রবিবার রূপায়ণ করিম টাওয়ারে লিফটের ১৭তলায় ডলফিন এভিয়েশনের অফিসে যান এক গণমাধ্যম কর্মী । নানা অভিযোগের বিষয়টি জানানো হয় রিসিপশনে বসে থাকা শাহরিন নামের এক মহিলাকে। প্রথমে সবকিছু অস্বীকার করলেও, বিস্তারিত তুলে ধরলে তিনি মাঠ পর্যায়ের এজেন্টদের ঘাড়ে জালিয়াতির দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন। তারপর এক রুম থেকে অন্য রুম। নানান পাঁয়তারা শেষে জানালেন ওমর ফারুক কিংবা পারভেজ নামের কেউই বর্তমানে অফিসে নেই। তবে ফোনে আলাপ করিয়ে দিলেন ওমর ফারুকের সঙ্গে, যিনি পরের দিন আসতে বললেন আবার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক করিম টাওয়ারেরই বিভিন্ন অফিসের একাধিক ব্যক্তি গণমাধ্যমকে বলছিলেন, প্রায় প্রতিদিনই অনেক ভুক্তভোগী আসেন এই অফিসে। তাদের অনেককেই আটকে রেখে নির্যাতন করে ডলফিন কর্তৃপক্ষ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার সঞ্জিত কুমার রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা বিষয়টি সম্পর্কে কিছু সময় আগে অবহিত হয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।