জুমবাংলা ডেস্ক: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির ও হাটহাজারী মাদরাসার শাইখুল হাদিস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী মারা গেছেন। জুনায়েদ বাবুনগরীর খাদেম এইচএম জুনায়েদ ও তার নাতি বরকতুল্লাহ বাবুনগরী দুজনেই এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
এইচএম জুনায়েদ জানান, চট্টগ্রাম নগরীর সিএসসিআর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। এর আগে আজ বেলা ১১টার দিকে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
হাটহাজারী মাদরাসার একটি সূত্র জানায়, গতকাল (বুধবার) সন্ধ্যার পর থেকে বাবুনগরীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। বেলা ১১টার দিকে তার শারীরিক অবস্থা আরও অবনতি হয়। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। জুনায়েদ বাবুনগরী ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এর আগেও তিনি কয়েকবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
গত ৮ আগস্ট দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় গাড়িতে বসে করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন জুনায়েদ বাবুনগরী।
জুনায়েদ বাবুনগরী দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক, ইসলামি বক্তা ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির, দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষা সচিব ও শায়খুল হাদিস, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহসভাপতি, চট্টগ্রাম নূরানি তালিমুল কোরআন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং মাসিক মুঈনুল ইসলামের প্রধান সম্পাদক ছিলেন। তার অনুসারীরা তাকে ‘মজলুম জননেতা’, ‘কায়েদে মিল্লাত’, ‘আপসহীন সিপাহসালার’ ইত্যাদি উপাধিতে ডেকে থাকেন। তিনি পাকিস্তানের বিখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব ইউসুফ বিন্নুরীর শিষ্য। মুসলিম নেতা হিসেবে তিনি দেশব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়।
হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ১৯৫৩ সালের ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার বাবুনগর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আবুল হাসান ও মাতা ফাতেমা খাতুন।
৫ বছর বয়সে তিনি আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগরে ভর্তি হন। এখানে তিনি মক্তব, হেফজ ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। কোরআনের হেফজ শেষ করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসায়। ১৯৭৬ সালে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন।
এরপর উচ্চশিক্ষার উদ্দেশে তিনি পাকিস্তানে যান। ১৯৭৬ সালে করাচিতে অবস্থিত জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় তাখাচ্ছুছাত ফিল উলুমুল হাদিস তথা উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে দুই বছর হাদিস নিয়ে গবেষণা সম্পন্ন করেন।
১৯৭৮ সালের শেষের দিকে দেশে আসেন তিনি। পরে মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। বাংলাদেশের মাদরাসাসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম বাবুনগরী মাদরাসায় তিনি উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগ চালু করেন। ২০০৩ সালে তিনি দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসায় যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি হাটহাজারী মাদরাসার সহকারী পরিচালক নিযুক্ত হন। ২০২০ সালের ১৭ জুন মাদরাসা কমিটি সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়।
পরবর্তীতে ১৪ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদরাসায় ছাত্র আন্দোলনের সূচনা হয়। এই আন্দোলন তীব্র হতে থাকলে ১৭ সেপ্টেম্বর মাদরাসার মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে মাদরাসার দায়িত্ব মজলিসে শুরাকে দিয়ে দেন। ওই দিন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে বাবুনগরীসহ তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি মাদরাসা পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়। তিনি মাদরাসার শায়খুল হাদিস ও শিক্ষা সচিব হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।
২০১০ সালে তাকে মহাসচিব করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সংগঠনটির আমির মৃত্যুবরণের পর ১৫ নভেম্বর সংগঠনের একটি কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে তিনি আমির নির্বাচিত হন।
২০১৯ সালের মে মাসে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, “শিক্ষকতা জীবনে এ পর্যন্ত (২০১৯) আমার ছাত্র সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি। পারিবারিক জীবনে তিনি বিবাহিত, ৫ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক। ছেলের নাম মুহাম্মদ সালমান। পরিবারের সবাই ইসলামি কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



