সবজির অস্বাভাবিক দাম কমে রাজধানীর বাজারে যখন খানিকটা স্বস্তির হাওয়া বইছিল, ঠিক তখনই হঠাৎ আগুন ধরেছে পেঁয়াজের দামে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এখন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।
এতে ভোক্তার মুখে ফেরা স্বস্তির হাসি আবার মিলিয়ে যাচ্ছে।
রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, মহাখালী, জোয়ারসাহারা—বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতকালীন আগাম সবজির সরবরাহ বাড়ায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ডিম, মুরগিসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দামও এখন নিম্নমুখী।
এক মাস আগে যেখানে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হতো ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। বেগুন, করলা, ঢেঁড়স, পটোল, লাউ, বরবটি, কাঁচা মরিচসহ প্রায় সব মৌসুমি সবজির দামও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। কৃষকরা বলছেন, অনুকূল আবহাওয়া ও উৎপাদন বৃদ্ধি সরবরাহ বাড়িয়েছে, ফলে দাম কমতে শুরু করেছে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সবজির এই স্বস্তির মধ্যেই পেঁয়াজের বাজারে শুরু হয়েছে বড় ধরনের কারসাজি। সরবরাহে কোনো ঘাটতি না থাকলেও একটি চক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। তারা বলছেন, সরকারকে দ্রুত বাজার তদারকি জোরদার করতে হবে, না হলে এই অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে।
উপাত্ত বলছে, এক মাসের ব্যবধানে খুচরা বাজারে সবজির দাম ৭ থেকে সর্বোচ্চ ২৩৩ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এর মধ্যেই শুধু পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে নতুন বিপত্তি ডেকে এনেছে বাজারে।
করলা ৪৩ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দাম কমে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। প্রতি কেজিতে ঝিঙার দাম কমেছে ৪৩ থেকে ৫০ শতাংশ। কাঁচা মরিচের দামও ১০০ থেকে ১৩৩ শতাংশ কমে খুচরায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা।
ব্রয়লার মুরগির দাম ১২ থেকে ১৩ শতাংশ এবং সোনালি মুরগির দাম ৭ থেকে ৮ শতাংশ কমেছে। ব্রয়লার মুরগি এখন ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা আর সোনালি মুরগি ২৬০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি। ফার্মের মুরগির ডিমের দাম প্রতি ডজন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা।
বাড্ডা কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. মাহাদী হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় সব ধরনের সবজির দাম কমে এসেছে।’
রামপুরা কাঁচাবাজারের ক্রেতা লিজা আক্তার ও মো. ফিরোজ কালের কণ্ঠকে বলেন, অনেক দিন পর সাধারণ মানুষ ব্যাগ ভরে সবজি কিনতে পারছে। এখন বেশির ভাগ সবজি ক্রেতার নাগালের মধ্যে। তবে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সবজিতে বেঁচে যাওয়া টাকাটা আবার ওখানে চলে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভলান্টারি কনজ্যুমারস ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়্যারনেস সোসাইটির (ভোক্তা) নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সজল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক নয়। পেঁয়াজের সরবরাহ সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে সিন্ডিকেট মুনাফা লুটে নিচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাজার তদারকির মাধ্যমে পেঁয়াজের এই মূল্যবৃদ্ধির প্রকৃত কারণ ভোক্তাদের জানাতে হবে। এই চক্রে জড়িতদের আইনের আওতায় আনারও ব্যবস্থা নিতে হবে।’
৫০% বাড়ল পেঁয়াজের দাম : সরবরাহ সংকটের অজুুহাতে দেশের বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৪৭ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের কিছুটা সংকট তৈরি হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমদানি শুরু হলে দাম নেমে যাবে।
তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের সংকট নেই, পুরনো সিন্ডিকেট আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। স্বস্তির বাজারকে নষ্ট করতে কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আড়তদার মো. জালাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ সংকট দেখিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে। আড়তে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।’ পেঁয়াজ আমদানিকারক ও শ্যামবাজার পেঁয়াজ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল মাজেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন পেঁয়াজের সংকট চলছে। কৃষকের হাতে আর পেঁয়াজ নেই। এতে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। ভারতে এখন পেঁয়াজ এখন মাত্র ১৫ টাকা কেজি। তাই দেশে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দ্রুত আমদানির বিকল্প নেই।’
উৎপাদন এলাকায়ও চড়া পেঁয়াজের দাম। পাবনা আঞ্চলিক প্রতিনিধি জানান, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দর ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এখন দাম বেড়ে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় অংশ উৎপাদন হয় পাবনায়।
রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, রাজবাড়ীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে হঠাৎ বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। গতকাল সকালে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি মণ পেঁয়াজ তিন হাজার ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ চার হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে খুচরা বাজারেও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



