জুমবাংলা ডেস্ক: বাংলাদেশে নেয়া ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের অনুমতিপত্রে তিনি অপোর একজন টেকনিশিয়ান, কিন্তু একই ব্যক্তি আবার রিয়েলমি’র এমডিও।
টিম শাও, নামে চাইনিজ এই ব্যক্তি, যার পাসপোর্ট নাম (SHAO, JIAN), প্রায় আড়াই বছর ধরে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণায় রিয়েলমি বাংলাদেশের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা বিডা হতে নেয়া ওয়ার্ক পারমিট অনুযায়ী তিনি এখনও অপো বাংলাদেশের একজন টেকনিশিয়ান, যিনি বেতন-ভাতা পান ৮০ হাজার টাকা।
টেকশহর ডটকম এর নির্বাহী সম্পাদক আল-আমীন দেওয়ানের করা একটি বিশেষ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অপোর টেকনিশিয়ান হিসেবে টিম শাও প্রথম ওয়ার্ক পারমিট নেন ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর। যদিও ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে জাঁকজমক অনুষ্ঠানের স্টেইজে রিয়েলমি বাংলাদেশের সিইও হিসেবে দেখা যায় টিম শাও’কে, আনুষ্ঠানিকভাবে রিয়েলমির যাত্রা শুরুর অনুষ্ঠানে।
তবে কী ৯ মাস পরে ‘রিয়েলমির সিইও’ পদ ছেড়ে তিনি অপোর টেকনিশিয়ান হিসেবে যোগ দিয়েছেন! ২০২০ সালের ৮ নভেম্বরের আগে তার নিয়োগ কী হিসেবে ছিলো, তিনি কোন কোম্পানির ওয়ার্ক পারমিটে ছিলেন বা আদৌ কেনো ওয়ার্ক পারমিটে ছিলেন কিনা জানা যায়নি।
আবার ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর হতে ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ ২০২১ সালের ৮ নভেম্বরে শেষ হওয়ার আগেই তা ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পদ, সেই অপোর টেকনিশিয়ানই। অথচ তিনি কার্যক্রমে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন রিয়েলমির ম্যানেজিং ডিরেক্টর বা এমডি হয়ে
অপোর টেকনিশিয়ান কীভাবে রিয়েলমির এমডি হয়ে আছেন?
সরকারের ওয়ার্ক পারমিট অনুযায়ী শাও জিয়ান (টিম শাও)-কে ‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন ইকুপমেন্ট কোং লি:’ এর টেকনিশিয়ান হিসেবে প্রথম নিয়োগ দেয়া হয় ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর। এক বছর মেয়াদের ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ হয় ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর।
মেয়াদ শেষের আগেই ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর অপোর টেকনিশিয়ান হিসেবে শাও জিয়ান (টিম শাও)-এর ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা হয় বিডাতে।
আর এই আবেদন করেন বাংলাদেশ কমিউনিকেশন ইকুপমেন্ট কোং লি: (বাংলাদেশে অপোর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান) এর এমডি ডেমন ইয়াং। পাসপোর্ট অনুযায়ী তার আসল নাম ইয়াং ঝেন (Yang Zhen). অপোর ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ইনভেস্টর) হিসেবে তার ওয়ার্ক পারমিট রয়েছে।
এরপর বিডা ‘ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ইনভেস্টর), বাংলাদেশ কমিউনিকেশন ইকুপমেন্ট কোং লি:), ১৪৪- পুলিশ প্লাজা কনকর্ড, ৯ম তলা, গুলশান-১, ঢাকার ঠিকানা বরাবরে ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করে। যার মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর।
এখন দেখা যাক ২০২০ সালের ৮ নভেম্বরের পর টিম শাও (জিয়ান শাও) এর আনুষ্ঠানিক পরিচয় কী ছিলো?
২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর রিয়েলমির অফিসিয়াল (ভেরিফাইড) ফেইসবুকে শেয়ার করা একটি পোস্টে টিম শাওকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় রিয়েলমি বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে। ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর ‘রিয়েলমি নারজো ২০’ মডেলের হ্যান্ডসেটের উম্মোচনে প্রতিষ্ঠানটির অফিসিয়াল স্টেটমেন্টে টিম শাও’কে রিয়েলমি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়েছে। ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নিজেদের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দারাজের এক ক্যাম্পেইন নিয়ে অফিসিয়াল স্টেটমেন্টে রিয়েলমি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার টিম শাও। ২০২১ সালের ৭ জুলাই, ‘ফাইভজি ফর অল’ শীর্ষক এক ওয়েবিনার করে ডেইলি স্টার এবং রিয়েলমি। সেখানে টিম শাও’কে রিয়েলমি বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে পরিচিত করা হয়।
এমন অনেক প্রমাণ রয়েছে যেখানে টিম শাও (জিয়ান শাও) কখনও রিয়েলমির কান্ট্রি ম্যানেজার কখনও ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে কার্যক্রম করছেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বরের পর ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত যে সময় টিম শাও (জিয়ান শাও) ওয়ার্ক পারমিট অনুযায়ী অপোর টেকনিশিয়ান পদে সে সময় তিনি অফিসিয়ালি কখনও কান্ট্রি ম্যানেজার কখনও ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে রিয়েলমির পদে পরিচয় দিচ্ছেন।আর অপোর টেকনিশিয়ান হিসেবে ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ বৃদ্ধি করে নিয়ে বর্তমান পর্যন্ত তিনি রিয়েলমির ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে আছেন।
২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর রিয়েলমির অফিসিয়াল (ভেরিফাইড) ফেইসবুকে শেয়ার করা একটি পোস্টে রিয়েলমি বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে পরিচয় দেয়া ‘টিম শাও’।
‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন ইকুপমেন্ট কোং লি:’-কী বাংলাদেশে অপোর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান?
অপোর শুরুতে ট্রেড লাইসেন্স ছিলো ‘অপপো বাংলাদেশ কমিউনিকেশন ইকুপমেন্ট কোং লিং:’ নামে। পরিশোধিত মূলধন ছিলো ৫ লাখ টাকা। এরপর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে নাম বদলে ফেলে তারা। সংশোধনী দিয়ে ট্রেড লাইসেন্সে বাংলাদেশে কোম্পানিটির নতুন নাম ‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন ইকুপমেন্ট কোং লি:’, ঠিকানা রয়েছে প্লট-২, রোড-১৪৪, পুলিশ প্লাজা কনকর্ড, ফ্লোর-বি (৯ম তলা), গুলশান-১, ঢাকা।
এছাড়া সংশোধনীতে পরিশোধিত মূলধন বাড়িয়ে করা হয় ৩ কোটি ৪২ লাখ ২২ হাজার ৮৪০ টাকা। যথারীতি এর আগে কোম্পানির টিন সার্টিফিকেটেও আগের নাম বদলে নতুন ‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন ইকুপমেন্ট কোং লি:’ করা হয়। ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর ইস্যু হওয়া ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটও নতুন নামে বদল হয়। এই নামে ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, আইএফআইসি, ডাচ-বাংলা ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলে তারা, যেখানে দুটি ব্যাংকে একাধিক অ্যাকাউন্টও রয়েছে।
নথিপত্রের এসব তথ্য বলছে ‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন ইকুপমেন্ট কোং লি:’ বাংলাদেশে অপো ব্র্যান্ডের ব্যসায়িক প্রতিষ্ঠান।
দেশে রিয়েলমি’র ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নাম ‘ডাওসেং( Daosheng) এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট কোং লিমিটেড। এই কোম্পানির বিপরীতে রিয়েলমির বর্তমান এমডি শাও জিয়ান (টিম শাও) ওয়ার্ক পারমিট নিয়েছেন কিনা তা জানা যায়নি।
তবে বিডা বলছে, দুটি স্বতন্ত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত-পরিচালিত কোম্পানির ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা দুটি ওয়ার্ক পারমিট ইস্যুর সুযোগ নেই। আর শাও জিয়ান (টিম শাও)-কে অপোর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে দেয়া ওয়ার্ক পারমিটে রিয়েলমি বা রিয়েলমির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত কোনো সংশ্লিষ্টতার তথ্য দেয়া নেই।
শাও জিয়ানই কী টিম শাও?
রিয়েলমির বর্তমান ‘এমডি’ ‘টিম শাও’য়ের’ পাসপোর্ট নাম শাও জিয়ান (SHAO, JIAN)। শাও জিয়ান নামে অপোর টেকনিশিয়ান হিসেবে নেয়া ওয়ার্ক পারমিটের সঙ্গে পাসপোর্ট নাম ও নাম্বার মিল রয়েছে। ছবিতে শাও জিয়ান এবং টিম শাও এক ব্যক্তি ছাড়াও কর্মস্থলের অপো’র সাবেক ও বর্তমান একাধিক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) নিশ্চিত করেছেন ‘টিম’ নাম নিয়েছেন তিনিই।
রিয়েলমি বাংলাদেশের কাছে তাদের পিআর এজেন্সি ব্লাকবোর্ড স্ট্র্যাটেজিস এশিয়াটিক এর মাধ্যমে টেকশহরের পক্ষ হতে জানতে চাওয়া হয়, পাসপোর্ট অনুযায়ী ‘রিয়েলমি এমডির’ নাম শাও জিয়ান, কিন্তু প্রচার-প্রচারণায়, বিবৃতিতে ‘টিম শাও’ হিসেবে পরিবর্তনের কারণ কী?
ব্লাকবোর্ড স্ট্র্যাটেজিস এশিয়াটিক এর মাধ্যমে রিয়েলমি জানায়, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশে চীনের যেসব নাগরিক কাজ করেন, ওই সব দেশে তাদের নামের প্রথমে ইংরেজি নাম দিয়েই তাদের সম্বোধন করা হয়। এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার – চীনের বাইরে এভাবেই সম্বোধনে অভ্যস্ত তারা। এটা করা হয়, কারণ চীনা নাম চীনের নাগরিক ছাড়া অন্যান্য ভাষাভাষীদের উচ্চারণ করা কঠিন; পাশাপাশি, চীনের ভাষার নির্দিষ্ট টোন রয়েছে, যে কারণে নাম ভুলভাবে উচ্চারিত হলে শব্দের অর্থই পরিবর্তিত হয়ে যায়।’
বক্তব্যে রিয়েলমি বলে, ‘তাই, বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও তাই এভাবেই চীনের নাগরিকদের সম্বোধন করা হয়। চীনের যেসব নাগরিক এখানে কর্মরত তাদের বেশিরভাগেরই নামের শুরুতে ইংরেজি নাম রয়েছে। এ কারণে বেশিরভাগ যোগাযোগের ক্ষেত্রে শাও জিয়ানকে টিম শাও হিসেবে সম্বোধন করা হয়।’
বেতন ৮০ হাজার টাকা
ওয়ার্ক পারমিট অনুযায়ী শাও জিয়ানের (টিম শাও) অপোর টেকনিশিয়ান হিসেবে ‘পেইবল অ্যামাউন্ট’ বা বেতন-ভাতা হলো, প্রতি মাসে বেসিক স্যালারি-৬০ হাজার টাকা, হাউজ রেন্ট-১৫ হাজার টাকা, কনভেন্স- ২ হাজার টাকা এবং মেডিক্যাল অ্যালাউন্স ৩ হাজার টাকা।
যেহেতু দুটি স্বতন্ত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত-পরিচালিত কোম্পানির ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা দুটি ওয়ার্ক পারমিট ইস্যুর সুযোগ নেই তাহলে এই আয়ের বাইরে তিনি কীভাবে রিয়েলমির এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বেতন-ভাতা নেন বা নেন কিনা, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
রিয়েলমির আরও যা বক্তব্য?
টেকশহরের পক্ষ হতে রিয়েলমি বাংলাদেশকে জিজ্ঞাসা ছিলো, রিয়েলমি এমডি বাংলাদেশ সরকারের কাছে তার ওয়ার্ক পারমিটে তার কার্যক্রম ও অবস্থান বিষয়ে তথ্য গোপন করেছেন, প্রমাণসাপেক্ষে এমন অভিযোগ উঠেছে।
রিয়েলমি তাদের বাংলাদেশ পিআর এজেন্সি মাধ্যমে জানায়, ‘বিগত দুই বছর যাবত রিয়েলমি বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং আমরা এই দেশের কর্তৃপক্ষ দ্বারা নির্ধারিত সকল নিয়ম-কানুন ও বিধিবিধান সম্মানের সহিত মেনে চলি। আমরা এটি নিশ্চিত করছি এবং আবারও দৃঢ়ভাবে বলতে চাই যে, আমরা আমাদের কর্মী সংক্রান্ত সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিয়েছি এবং দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত সকল আইনি প্রক্রিয়া ও শর্ত মেনে আইনানুগভাবে প্রাসঙ্গিক সমস্ত তথ্য শেয়ার করেছি।’টেকশহরের পক্ষ হতে আরও জানতে চাওয়া হয়,
বাংলাদেশে রিয়েলমি একদম স্বতন্ত্র কোম্পানি কিনা?
রিয়েলমির অপারেশন কী অপোর ‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন কোম্পানি লি:’ এর অধীনে চলে? এই কোম্পানির কোনো ব্র্যান্ড কিনা রিয়েলমি?রিয়েলমি জানায়, ‘রিয়েলমি অপোর কার্যক্রম আলাদা হেডকোয়ার্টায়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়’।
জানতে চাওয়া হয়েছিলো, ডাওসেং এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের’ বিপরীতে সরকারের রাজস্ব (ভ্যাট-ট্যাক্স) আইনানুযায়ী পরিশোধ করা হয় কিনা? রিয়েলমি এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি।
অপোর বক্তব্য:
অপোর কাছে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসার মধ্যে জানতে চাওয়া হয়েছিলো, অপোর কোনো কর্মকর্তাদের বিরদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের কাছে তথ্য গোপন বা মিথ্য তথ্য দিয়ে বাংলাদেশে অবস্থানের অভিযোগ বিষয়ে।
অপো বাংলাদেশের পিআর এজেন্সিও ব্লাকবোর্ড স্ট্র্যাটেজিস এশিয়াটিক। এজেন্সির মাধ্যমে অপো জানায়, ‘একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যে দেশেই অপো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে সেখানকার দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা বিডা যা বলছে?
বিডার জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার মন্ডল বলছেন, এক কোম্পানি হতে আরেক কোম্পানিতে গেলে বিডাকে অবহিত করে যেতে হবে। এক পদের বিপরীতে যদি কেউ আসে তাহলে সে বিডাকে অবহিত না করলে সেই পদে থাকতে হবে। যদি একই কোম্পানিতে এক পদে এসে পরে প্রমোশন নেন সেটাও জানাতে হবে। সেটা জানাতে তারা বাধ্য।
এনবিআর যা বলছে
এনবিআরের সেকেন্ড সেক্রেটারি নিয়াজ মোর্শেদ (ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিমেন্ট অ্যান্ড ওপিনিয়ন, ট্যাক্স ) জানান, বিদেশী কোম্পানি এখানে অফিস করলে তাদের অডিট রিপোর্ট সাবমিট করতে হয়। তখন প্রতিষ্ঠানগুলো কোন কর্মীকে কতো বেতন দিচ্ছে, কতো এমপ্লয়ি সবই জানাতে হয়।এনবিআরে ছয় মাস পর তাদের একটি রিপোর্ট দাখিল করতে হয় যে, তারা কতো বেতন দিচ্ছে, উৎসে কর কতো। তাদের যেহেতু টিন নিতে হচ্ছে, একটি সার্কেলের অধীনের নিবন্ধিত হচ্ছে সেই সার্কেলের ডিসি ছয় মাস পরপর মনিটর করেন।তারপরও আরও একটা এনফোর্সমেন্টের জায়গা রয়েই যায় যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা ফিজিক্যালি গিয়ে দেখার বিষয় থাকে কে কতো এমপ্লয়ি রেখেছেসহ আরও বিষয়গুলোতে।
বেতন দেখাচ্ছে এক আর নিচ্ছে আরেক, এমন বিষয় ধরতে কী করা হয় এই জিজ্ঞাসায় তিনি বলেন, এইসব ক্ষেত্রে অভিযান আরও জোরদার করা, কম্পিউটার সিজ করে আনা। যেমন ভ্যাট গোয়ান্দা, মূসক গোয়েন্দাদের প্রায়ই অভিযানে যাচ্ছেন।গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পর্যাপ্ত তথ্য পেলে এসব ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার কথাও বলেন এনবিআরের এই কর্মকর্তা।
কেনো এই লুকোচুরি, ফাঁকি?
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন ক্ষেত্রে কর ফাঁকি, মানি লন্ডারিংসহ বিভিন্ন বেআইনি কার্যক্রমের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। ইতোমধ্যে অপোর বিরুদ্ধে কর ফাঁকিসহ মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে।
দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) তথ্যে বাংলাদেশে বৈধ ও অবৈধভাবে কর্মরত আড়াই লাখ বিদেশি বছরে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে বলে হিসাব রয়েছে।
টিআইবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কর অঞ্চল-১১-তে আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন সাড়ে ৯ হাজার বিদেশি, যাদের বার্ষিক আয় ৬০৩ কোটি টাকা। যাতে মোট কর পাওয়া গেছে ১৮১ কোটি টাকা। তৈরি পোশাকখাতে কর্মরত বিদেশিদের আয়ের হিসাব তুলে ধরে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ খাতের একটি প্রতিষ্ঠানের বিদেশি প্রধান নির্বাহীর মাসিক বেতন ১০ থেকে ১২ হাজার মার্কিন ডলার। কিন্তু দেখানো হয়েছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার ডলার। আর একজন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারের মাসিক বেতন ৩-৬ হাজার ডলার হলেও দেখানো হয় ১-২ হাজার ডলার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর্মরত বিদেশী কর্মীরা আইন মানছে কিনা সেখানে আরও নজরদারী প্রয়োজন।
বিষয়টি নিয়ে চোখ দুদকেরও। ২০২০ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎকালনীল চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ প্রকাশ্যেই বাংলাদেশে কর্মরত অনেক বিদেশি কর ফাঁকি দিচ্ছেন এ অভিযোগ করে বলেছিলেন, উন্নয়ন প্রকল্পসহ বেসরকারিখাতের বিভিন্ন পর্যায়ে বিদেশিরা কাজ করছেন। কিন্তু তারা যথাযথভাবে কর দিচ্ছেন না। তারা আমার দেশের জনগণের টাকা ফাঁকি দিয়ে তার দেশে নিয়ে যাচ্ছে। এটি বন্ধ করতে হবে। তখন এর জন্য তিনি বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), ইমিগ্রেশন বিভাগ ও রাজস্ব কর্তৃপক্ষকে সমন্বিতভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।