২০টি নতুন জাতের ধান আবিষ্কার করেছেন তিনি। সেগুলো উচ্চফলনশীল, চাষ হচ্ছে মাঠে। এ সবই তিনি শিখেছেন নিজে নিজে। শিখেছেন, কীভাবে সংকরায়ণের মাধ্যমে উদ্ভাবন করা যায় নতুন ধান। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত কৃষক-বিজ্ঞানী সম্মেলনে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বরেন্দ্র ভবনে কৃষকদের একটা প্রশিক্ষণ কর্মশালা হয়েছিল। তখন তিনি সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণিতে পড়েন। ওই কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট রাজশাহীর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবদুল মজিদ। সেখানে গিয়ে নূর মোহাম্মদ নতুন জাতের ধান সম্পর্কে ধারণা পান। তাঁরা নতুন জাতের ধানের বীজ দিলেন। নূর মোহাম্মদ দেড় বিঘা জমিতে সেই ধান চাষ করলেন। ভালো ফলন হলো।
এভাবে প্রতি মৌসুমে তিনি ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে যান। প্রতিবার পুরোনো বীজ গ্রামের চাষিদের দিয়ে তিনি ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে নতুন বীজ এনে রোপণ করেন। এভাবে গবেষণাকেন্দ্রের মতো প্রতিটি ধানের জন্য ছোট ছোট করে প্লট তৈরি করেন। প্রতিটি প্লটে সাইনবোর্ড দিয়ে ধানের নম্বর লিখে দেন। গবেষণালব্ধ ধানের বীজ দিয়ে প্লট তৈরি করে তিনি তার নাম দিলেন ‘শস্য মিউজিয়াম’।
ব্রি-৩৯ ধান তখনো জাত হিসেবে বাজারে আসেনি। নূর মোহাম্মদ গবেষণাগার থেকে এনে আমন মৌসুমের জন্য ওই ধানের বীজ রোপণ করেন। র মোহাম্মদ রাজশাহী ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাঠে গিয়ে বসে থাকতেন। দেখতেন, বিজ্ঞানীরা কীভাবে একটি প্রস্তাবিত জাত তৈরি করছেন। একটি মাতৃ গাছের সঙ্গে পিতৃকুলের কীভাবে সংকরায়ণ ঘটান। দেখতে দেখতে তিনি কিছুটা কৌশল আয়ত্ত করেন। যেটুকু বুঝতেন না, বিজ্ঞানীরা তাঁর আগ্রহ দেখে বুঝিয়ে দিতেন। এরপর তাঁর মাটির ঘরটি হয়ে ওঠে গবেষণাগার।
নূর মোহাম্মদের গবেষণা মাঠে তিনি গেছেন। বেসরকারিভাবে তিনি কৌলিক সারি পরিদর্শন করেছেন। কয়েক বছর আগে ধান গবেষণায় পরীক্ষার জন্য তাঁর ধান আনা হয়েছিল। দেখা গেছে, তিনি নিজের মতো করে উদ্ভাবন করেছেন। দীর্ঘদিন সংকরায়ণ ও বাছাইকরণের মাধ্যমে নূর মোহাম্মদ ধানের আউশ, আমন ও বোরো মৌসুমের কৌলিক সারি উদ্ভাবন করেছেন। তাঁর সারিগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গাছ বেশ মজবুত, সহজে হেলে পড়ে না, রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অন্যান্য গাছের তুলনায় অনেক কম, স্বল্প জীবনকাল, উচ্চফলন, সরু, চিকন, সুগন্ধি, খরাসহিষ্ণু, লাল চাল ও কালো চাল।
মালয়েশিয়ায় কৃষক-বিজ্ঞানী সম্মেলনে বিক্রির জন্য ৪টি ও বিজ্ঞানীদের উপহার দেওয়ার জন্য নিজের উদ্ভাবিত ২০ জাতের ধানের চাল নিয়ে গিয়েছিলেন। উপহার পেয়ে তাঁরা ভীষণ খুশি। পাশাপাশি মালয়েশিয়ার সাবাহ রাজ্যের এক কিষানির কাছ থেকে একটি ধানের জাত নিয়ে এসেছেন তিনি। ওখানে খরাপীড়িত পাহাড়ি এলাকায় এই ধান হতে সময় লাগে ছয় মাস।
Own the headlines. Follow now- Zoom Bangla Google News, Twitter(X), Facebook, Telegram and Subscribe to Our Youtube Channel