একটি গ্রহাণু কী পৃথিবী ধ্বংস করে দিতে পারে?
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : ১৬০ মিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীতে আধিপত্য করেছে ডাইনোসর। অবশেষে মহাকাশ থেকে আসা গ্রহানুর আঘাতে তারা ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েছিল। ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে গ্রহানুর আঘাতে ধ্বংস হয়েছিল ডাইনোসরের যুগ। গ্রহানুটি আঘাত আনার পরেই পৃথিবীতে বিধ্বংসী আঘাত, ভূমিকম্প, সুনামি, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং জলবায়ু বিপর্যয় সৃষ্টি করে যা শীঘ্রই সমস্ত জীবন্ত প্রাণীর ৭৫ শতাংশ বিলুপ্ত করে দেয়।
তবুও পৃথিবী এখন পর্যন্ত ঠিকে আছে।
এর মানে কী দাড়ায়?গ্রহানুর আঘাতে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে না? প্রাণীর ক্ষতি হলেও পৃথিবী টিকে থাকবে? তাহলে প্রশ্ন হলো, মহাকাশ থেকে আসা কত বড় গ্রহানু পৃথিবী ধ্বংস করতে পারে? চলুন সেই বিষয়ে জানার চেষ্টা করি।
ছোট করে উত্তর দিতে গেলে বলা যায়, পৃথিবী ধ্বংস করতে পৃথিবীর সমানই গ্রহানুর প্রয়োজন হবে। তাহলে খুব কম সময়েই পৃথিবীর জীবনকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, মঙ্গলের চেয়ে বড় একটি গ্রহানু পৃথিবীতে আঘাত আনার কারণে চাঁদের জন্ম। পৃথিবী থেকে একটি টুকরা আলাদা হয়ে গেলেও আমাদের পৃথিবীর কিছু হয়নি। ব্রায়ান টুন, কলোরাডো বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় এবং মহাসাগরীয় বিজ্ঞানের অধ্যাপক। তিনি গ্রহাণু নিয়ে অধ্যয়ন করেছেন। তিনি অনলাইন পোর্টল লাইভ সায়েন্সকে ইমেলের মাধ্যমে এইসব তথ্য জানিয়েছেন।
ব্রায়ান টুন আরো জানিয়েছেন, মঙ্গলের গ্রহের সমান থিয়া নামক একটি গ্রহের সাথে পৃথিবীর ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে সংঘর্ষ হয়েছিল। এই সংঘর্ষে চাঁদের সৃষ্টি হয়। আমরা আগেই জেনেছি গ্রহটি মঙ্গলের সমান। মঙ্গল গ্রহের আকার প্রায় ৪,২০০ মাইল বা ৬,৭০০কিমি চওড়া এবং ডাইনোসর ধ্বংসকারী গ্রহাণুর প্রস্থের ৫০০ গুণ বেশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের গ্রহকে বিলুপ্ত করার পরিবর্তে থিয়ার মূল অংশ এবং ম্যান্টেলের সেই অংশটি আমাদের পৃথিবীর তলার সাথে মিশে গেছে। প্রথম জীবনের বিকাশের সময় এবং আগামী যুগে পায়ের তলাযেই থাকবে । পৃথিবী ধ্বংস না হলেও, সেই সময়ে পৃথিবীতে কিছু জীবিত থাকলে থিয়া তা মুছে ফেলত এতে কোন সন্দেহ নেই।
ডাইনোসরের বিলুপ্তি থেকে দেখা যায় পৃথিবী রয়ে গেলেও পৃথিবীর জীবনকে ধ্বংস করতে খুব কম সময় লাগে এই ধরনের গ্রহের আঘাত। নাসা মহাকাশে ঘুরে বেড়ানো পাথরগুলোকে একটি সম্ভাব্য বিপদ বলে মনে করে। যদি এটি কমপক্ষে ৪৬০ ফুট (১৪০ মিটার) ব্যাস এবং পৃথিবীর ৪.৬ মিলিয়ন মাইলের (৭.৪মিলিয়ন কিমি) মধ্যে কক্ষপথে ঘুরে বেড়ায়। এই ধরনের একটি পাথর একটি পুরো শহরকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। এবং এর চারপাশের থাকা জমি বা স্থান ধ্বংস করতে পারে। (নাসা অনুসারে)।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোডস কলেজের জ্যোতির্বিজ্ঞানী গেরিট এল ভার্সচুর বলেছেন, অন্তত ০.৬ মাইল প্রশস্ত (১ কিলোমিটার প্রশস্ত) একটি বড় পাথরের সাথে সংঘর্ষ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু বিপর্যয়ের মাধ্যমে সভ্যতার সমাপ্তি ঘটাতে পারে। অথবা ডাইনোসর যুগের সেই গ্রহাণুর সমান গ্রহানু আঘাত আনলে সম্ভবত মানুষ ও অন্যান্য জীব বিলুপ্ত করে দেবে। পৃথিবী থেকে যেতে পারে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী গেরিট এল ভার্সচুর আরো বলেছেন, এমন গ্রহানু আঘাত আনলে সেটা সহজেই দেখা যাবে। বড় বড় আগুনের বলের মতে। এই সংঘর্ষের কারণে ধূলো-বালি আর ধোয়ায় পুরো পৃথিবী ডুবে যাবে। বিষাক্ত গ্যাস এবং ধূলোর কারণে সূর্যের আলো আর পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারবে না। ফলে বিশ্বজুড়ে উদ্ভিদের জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে এবং প্রাণীরাও সেই পথ অনুসরণ করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।