বিনোদন ডেস্ক : গানে গানে দেশ, সমাজ ও মানুষের কথা বলেন হায়দার হোসেন। তাঁর বেশ কিছু গান মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। এখন অবশ্য শারীরিকভাবে অসুস্থ তিনি। নতুন গান আর করতে পারছেন না।
তবে তাঁর পুরনো একাধিক গান ফের জোয়ার তুলেছে অন্তর্জালে। শিল্পীর সঙ্গে কথা বলেছেন কামরুল ইসলাম।
শরীর মহাশয়
হৃদরোগে আক্রান্ত হায়দার হোসেন। মাস খানেক আগেও ভর্তি করাতে হয়েছিল হাসপাতালে। তখন তাঁর হার্টে রিং পরানো হয়েছে। এখন কেমন আছেন শিল্পী? বলেন, ‘বেশ দুর্বল হয়ে গেছি। হাঁটতেও অসুবিধা হয়। চিকিৎসা চলছে। আর বয়সও তো হয়েছে। তবু আল্লাহ ভরসা।’
যদি ইচ্ছা থাকে অটুট
শরীর সায় দেয় না, তবু মনের ভেতরে গানের শক্তিটা রয়েছে এখনো। সুস্থ হলে ফের গান করতে চান। বর্তমান সময়টা কাটছে গানহীন।
হায়দার হোসেন বলেন, ‘এখন আর গিটার বাজাতে পারি না। আমার একটা হাত হাফ-প্যারালাইজড হয়ে গেছে। নতুন গানও বাঁধা হয় না। কেন বাঁধব? কোথায় দেব গান? আমাদের গান তো প্রচার হয় না। গান করে বসে বসে শুনতে হবে নিজেকেই। আমার কাজ গান করা, মার্কেটিং নয়। তবু ইচ্ছা আছে, যদি আল্লাহ সুস্থ করেন, গান করব।’
পুরনো গানে নতুন জোয়ার
দেশে চলমান অস্থির সময়ে অন্তর্জালে হায়দার হোসেনের ‘আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া’ গানটি পুনরায় ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ভিডিওতে ব্যবহার করা হচ্ছে এই গান। এ বিষয়ে শিল্পীর মন্তব্য, ‘চিৎকার করে কাঁদা ছাড়া তো কিছু করারও নেই। গানটা নতুন করে প্রচুর মানুষ শুনছে, কারণ এ ছাড়া গতি নেই। আমরা তো বন্দুক নিয়ে রাস্তায় নামতে পারব না। এটা তো স্বাধীনতার যুদ্ধ না। আমি আমার পুলিশ ভাইকে কিংবা ছাত্র ভাইকে গুলি করে মারব, এটা কি সম্ভব?’
পরিস্থিতি পর্যালোচনা
সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে ভীষণ সচেতন মানুষ হায়দার হোসেন। তাই চলমান সময়টা নিয়ে তাঁর পর্যালোচনা জানার কৌতূহল হলো। ‘মানুষ যখন শোকে পাথর হয়ে যায়, তখন কান্নাও ভুলে যায়। আমার অবস্থাও এখন সে রকম। যতটুকু দেখেছি-শুনেছি, কলম চলা তো দূরের কথা, মাথাই ঠিক থাকে না। কিভাবে আমাদের দেশে এটা সম্ভব! এতগুলো বাচ্চা মারা গেল। এই শোক কাটাতেই আমার অনেক সময় চলে যাবে। প্রতিবাদ মানুষ করবেই, এটাকে সহজভাবে নিতে হবে। এই প্রতিবাদের সমাধানও আছে। যারা উঁচু মহলে আছেন, জানি না তারা কী ভাবছেন’—বললেন হায়দার হোসেন।
সংগীতাঙ্গন ও আক্ষেপ
চার দশকের বেশি সময় ধরে গান করছেন, কত কিছুর সাক্ষী তিনি। সংগীতের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আক্ষেপ জমেছে তাঁর মনে। বলেন, ‘সব সময় চেষ্টা করেছি নতুন শিল্পী তুলে আনতে। টিভি অনুষ্ঠানে গেলে নতুনদেরও সঙ্গে রাখতাম। কারণ আমাদের জায়গাটা একদিন ছেড়ে দিতে হবে, নতুন কাউকে নিতে হবে। কিন্তু নেওয়ার লোকের বড় অভাব। লাকী আখন্দ, আলাউদ্দিন আলী কিংবা আলম খানের মতো সুরকার আর আসবেন? আইয়ুব বাচ্চু মারা গেছেন, তাঁর মতো আরেকজন গিটারিস্ট খুঁজে পাওয়া যায় না। আরেকটা অবাক করার বিষয়, দেশে এখন রেকর্ডিং স্টুডিও নেই! ঘরে ঘরে স্টুডিও। অ্যাকুস্টিক সাউন্ড কি এতে পাওয়া যাবে? সবাই এখন সংগীত পরিচালক! গীতিকার, সুরকার, গায়ক, মিউজিক ডিরেক্টর, মিউজিশিয়ানসহ ২৫-৩০ জন মানুষ মিলে একটি গান করত। ইটস আ টিম ওয়ার্ক। একা একা তো কিছু হয় না। একনায়কতন্ত্র ইজ নট গুড, সেটা দেশের জন্য বলেন আর গানের জন্যই বলেন। আগে একটা সিনেমার গান রেকর্ডিংয়ে উৎসবের মতো হতো। কত আনন্দ হতো। একা একা দুঃখ করা যায়, আনন্দ না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।