সাইয়েদা আক্তার, বিবিসি নিউজ বাংলা : পরনে কেবল মাত্র একটি কালো শর্টস, খালি গা, লাল রঙয়ের একটি স্কার্ফ বা পট্টি দিয়ে পা বাঁধা অবস্থায় বাঁ কাত হয়ে মেঝেতে পড়ে আছেন একজন ব্যক্তি, হাত আর পিঠে রক্ত জমে কালো হয়ে গেছে – ফেসবুকে ঘুরে বেড়ানো একটি ছবি এটি।
এই ছবিতেই একজনকে দেখা যাচ্ছে মোটা একটা লাঠি হাতে ঝুঁকে আছেন ওই ব্যক্তির দিকে।
পরের ছবিতে প্রায় একই অবস্থায় হাঁটু ভাজ করা লোকটি চিৎ হয়ে পড়ে আছেন মেঝেতে, দুই পায়েই হাঁটু পর্যন্ত চামড়া ছড়ে যাওয়ার একাধিক গভীর ক্ষত।
আরেকটি ছবিতে খালি গায়ে গলায় একাধিক তাবিজ আর মালা পড়া লোকটির সামনে থালা ভর্তি ভাত, সবজি, মাছ, মুরগি আর একটা বড় বোলে ডাল।
লোকটির কবজির সামনে ডান হাতের পাতায় সাদা মত কিছু, মলমের মত দেখতে।
এতক্ষণে বাংলাদেশের মানুষ জেনে গেছেন, মেঝেতে পড়ে থাকা লোকটির নাম তোফাজ্জল হোসেন।
ফেসবুকে আজ বাংলাদেশের টপ ট্রেন্ড এই ব্যক্তি।
গত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের গেস্টরুমে তোফাজ্জল হোসেনকে চোর সন্দেহে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে দফায় দফায় পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছে পুলিশ।
সেই কয়েক ঘণ্টার ঘটনাক্রম এখন সবাই জানেন।
সকাল থেকে ফেসবুকে এ নিয়ে নেটিজেনদের তীব্র ক্ষোভ, হতাশা, আক্ষেপ আর শ্লেষাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে দিনভরই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এমন কাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এবং বর্তমান বহু শিক্ষার্থীকে নিন্দা এবং ক্ষোভ জানাতে দেখা গেছে।
সাথে ছিল বিস্ময় আর প্রশ্নের বাণ – যে প্রশ্নের জবাব দেয়নি কেউ।
সুলতানা মাহজাবীন চৈতী নামে একজন শিক্ষার্থী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ‘দ্য লাস্ট সাপার’ চিত্রকর্মের আদলে একটি চিত্রকর্ম পোষ্ট করেছেন – ‘দ্য লাস্ট সাপার অ্যাট ডিইউ’ নামে।
ছয় ঘণ্টায় সেটি ৩০ হাজারের বেশিবার শেয়ার হয়েছে ফেসবুকে।
চিত্রকর্মে তোফাজ্জল হোসেনকে টেবিলে বলে খেতে দেখা যাচ্ছে, পেছনের দেয়ালে লেখা ‘আগে চান্স পেয়ে দেখান’, যেখানে ‘চান্স পেয়ে’ শব্দ দুটি কেটে ওপরে লাল কালিতে ‘মানুষ হয়ে’ লেখা রয়েছে।
কেউ কেউ ২০১৯ সালের অক্টোবরে বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড, যাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পিটিয়ে মেরে ফেলেছিল, তার সঙ্গে এ ঘটনাটির সাদৃশ্য দেখছেন।
এ ঘটনায় ‘দুঃখপ্রকাশ’ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
ঘটনার প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
বিকেল নাগাদ ঘটনায় জড়িত তিনজন ছাত্রকে পুলিশে সোপর্দ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, আলোচনা আর প্রতিক্রিয়া যাই হোক – এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত মানে তোফাজ্জলকে মৃত ঘোষণার পরের ১৭ ঘণ্টায় এখনো মর্গ থেকে তার লাশ নিতে আসেননি কোন স্বজন।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে ‘চোর সন্দেহে’ শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তোফাজ্জল হোসেন (৩২)। তিনি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নের তালুকের চরদুয়ানী গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তার বাবার নাম (মৃত) আবদুর রহমান। অল্প সময়ের ব্যবধানে তোফাজ্জলের মা, বাবা ও একমাত্র বড় ভাই মারা যান। তোফাজ্জল পরিবার ও অভিভাবক শূন্য হয়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে গত ৩/৪ বছর ধরে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।