জুমবাংলা ডেস্ক: বহু পীর সাধকের পুণ্যভূমি রাজশাহী। এক সময় এ জনপদের মানুষ কু-সংস্কার আর অপসংস্কৃতি ও কু-প্রথার নিবিড় অন্ধকারের অতলে নিমজ্জিত ছিল। ওই সময় এই মহানগরে দেব-দেবীর নামে নরবলি দেওয়া হতো। মানুষে-মানুষে ছিল ভেদাভেদ। শাহ মখদুম রূপস (রঃ) চৌদ্দ শতকের একজন মুসলিম দরবেশ, যিনি বরেন্দ্র অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেছিলেন। ‘মখদুম’ অর্থ ধর্মীয় নেতা এবং ‘রূপস’ অর্থ আচ্ছাদিত। শাহ মখদুমের প্রকৃত নাম ছিল আব্দুল কুদ্দুছ জালালুদ্দীন।
তিনি ছিলেন হজরত আব্দুল কাদের জিলানীর (রঃ) পৌত্র আজলা শাহের পুত্র। ৬৮৫ হিজরিতে (১২৮৬ খ্রিস্টাব্দে) তিনি তাঁর বড় ভাই সৈয়দ আহমদ ওরফে মীরন শাহকে নিয়ে বাগদাদ হতে এখানে আসেন।
হযরত শাহ মখদুম (রঃ) এর দরগা রাজশাহী মূল শহরের দরগাহপাড়ায় অবস্থিত। হযরত শাহ মখদুম (রঃ) এর দরগা-কে মাজার অথবা দরগা বলা হয় কেননা এটি হযরত শাহ মখদুম রূপস (রঃ) এর কবরের পাশে অবস্থিত। তিনি রাজশাহী অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেন। বলা হয়ে থাকে যে তিনি রাজশাহীতে এসেছিলেন কুমিরের পিঠের ওপর বসে। শাহ মখদুম (রঃ) এর মাজারের পাশের দীঘিতে অনেক কুমির আছে।
মীরন শাহ লক্ষ্মীপুর জেলার কাঞ্চনপুরে এবং মখদুম শাহ কাঞ্চনপুরের সন্নিকটে শ্যামপুরে স্ব স্ব খানকাহ প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তিনি তাঁর সঙ্গী সৈয়দ শাহ আববাস, সৈয়দ দিলাল বোখারী, শাহ সুলতান এবং শাহ করম আলীকে নিয়ে বাঘায় চলে যান (রাজশাহী জেলার চারঘাট থানায়)। প্রচলিত কাহিনী অনুসারে চিশতিয়া তরিকার একটি উপদলের দরবেশদের মতো তিনি তাঁর মুখমন্ডল একটুকরা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতেন এবং এজন্য তাঁকে রূপস বলা হতো। শীঘ্রই তাঁর আবাসস্থল বাঘার নামকররণ করা হয় মখদুমনগর।
৬৮৭ হিজরিতে (১২৮৮ খ্রিস্টাব্দে) শাহ মখদুম রূপস বাঘা হতে রামপুর বোয়ালিয়ায় চলে আসেন। এখানে তাঁর আগমনের সাথে অনেক অলীক কাহিনী এবং তাঁর কারামত সম্পর্কে অনেক কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। তিনি ওই এলাকার অত্যাচারী তান্ত্রিক রাজাকে পরাজিত ও নিহত করে শাহ তুরকান শহীদ হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ এবং জনগণকে রাজার অত্যাচার হতে রক্ষা করেন।
শাহ মখদুম তাঁর সঙ্গীদেরকে পার্শ্ববর্তী স্থানসমূহে ইসলাম প্রচারের জন্য প্রেরণ করেন। তাঁরা বিভিন্ন স্থানে খানকাহ প্রতিষ্ঠা করেন। রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে তাঁদের মাজার রয়েছে। সৈয়দ শাহ আববাস, সৈয়দ দিলাল বুখারী, শাহ সুলতান এবং শাহ করম আলীর মাজার যথাক্রমে বাঘা, দিলালপুর, সুলতানগঞ্জ ও বিড়ালদহে রয়েছে।
প্রায় সিকি শতাক ধরে শাহ মখদুম বরেন্দ্র অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করে ৭১৩ হিজরির (১৩১৩ খ্রিস্টাব্দ) ২৭ রজব ইন্তেকাল করেন। রাজশাহী সরকারি কলেজের কাছে দরগাহ পাড়ায় তাঁর মাজার রয়েছে। জনৈক আলীকুলী বেগ তাঁর কবরের উপর ১০৫৪ হিজরিতে (১৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ) একটি ক্ষুদ্র একগম্বুজ বিশিষ্ট বর্গাকার সমাধিসৌধ নির্মাণ করেন। সমাধিসৌধের দরজার উপরে লাগানো শিলালিপিতে দরবেশের নাম সৈয়দ সনদ শাহ দরবেশ বলে লিখিত রয়েছে।
প্রতি বছর ১০ মহররম শাহ মখদুমের দরগায় একটি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন তাজিয়া বের করা হয় এবং লাঠি খেলা ও নকল তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধের মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রাবাস এ দরবেশের নামে রাখা হয়েছে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে রাজশাহীর দূরত্ব ২৬১ কিলোমিটার। রাজশাহীতে যোগাযোগ ব্যাবস্থা খুবই উন্নত। এখান থেকে সারা দেশে সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশ পথে যাতায়াত করা যায়। রাজশাহী শহরে চলাচলের জন্য আপনি রিকশা ট্যাক্সি ক্যাব, অটো রিকশা, ও ঘোড়ার গাড়ি পাবেন।
রাজশাহীতে দুটি আন্তঃনগর বাস টার্মিনাল আছে যেখান থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের উদ্দেশে এসি এবং নন এসি বাস চলাচল করে। রাজশাহী থেকে সড়ক পথে ঢাকা পৌছাতে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা সময় লাগবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম জোনের সদর দফতর এই জেলায় অবস্থিত। ঢাকা থেকে রাজশাহীতে “সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস”, “পদ্মা এক্সপ্রেস” ও “ধুমকেতু এক্সপ্রেস” চলাচল করে। এছাড়াও রাজশাহী থেকে খুলনা ও দেশের অন্যান্য প্রান্তে আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল ট্রেন চলাচল করে।
ইসলামী সাধক হযরত শাহ মখদুম (রঃ) এর নামে নামকরন করা বিমানবন্দরটি রাজশাহী শহর থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত। এখানে ঢাকা এবং সৈয়দপুর থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।