জুমবাংলা ডেস্ক : প্রথমবার ছবিটার দিকে মনোযোগ দেইনি। ভেবেছি- ঐতিহাসিক কোনো ঘটনার ছবি হবে হয়তো, কিংবা বিশ্বের কোনো দেশের ক্ষুব্দ মানুষের আন্দোলনের ছবি। কিন্তু শিরোনামটা দেখে চমকে ওঠি। খবরটা ভালো করে একাধিকবার পড়ি, জায়গার নামগুলোর পড়ে নিশ্চিত হ্ওয়ার চেষ্টা করি। না, ভুল নয়, এটি বাংলাদেশেরই ঘটনা।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন- ‘পীরের পানি পড়া নিতে মানুষের ঢল নেমেছিল কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায়। সুখিয়া ইউনিয়নের চর পলাশ গ্রামের মাঠে গতকাল এ ঘটনা ঘটে।’
খবরটা পড়তে পড়তে আমি ভাবনায় আচ্ছন্ন হতে থাকি, এটা তা হলে বাংলাদেশেরই ঘটনা! আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের! পরমুহূর্তেই প্রশ্ন জাগে- দেশ হিসেবে, সমাজ হিসেবে আমরা তা হলে কোথায় দাঁড়িয়ে আছি? বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন টেলিভিশন দেখা যায়, বিশ্বের কোথায় কি ঘটছে- সবই খবরই তো প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষগুলো দেখে। গ্রামের চায়ের দোকানেও এখন চায়ের কাপে রাজনীতি নিয়ে ঝড় ওঠে, টক শো দেখতে দেখতে নিজেরাও তর্ক বিতর্কে মেতে ওঠে। সেই সময়ে ‘পীরের পানি পড়া’ নেয়ার জন্য এতো মানুষের ভীড় জমবে- সেটা কি কল্পনা করা যায়!
বাংলাদেশ প্রতিদিনের কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধির খবরটায় আতঙ্কিত হ্ওয়ার মতো বেশ কিছু তথ্য আছে।’ এক এক করে বোতলে ফুঁক দেওয়া সম্ভব নয়, তাই মাইকে ফুঁক দিয়ে দেন। মাইকের আওয়াজ যতদূর পর্যন্ত যায়, ততদূরের মানুষকে ফুঁক দেওয়া পানি সংগ্রহ করতে বলেন পীর। এই পানি ও তেল বিভিন্ন রোগে কাজে লাগবে উল্লেখ করে পীর বলেন, ‘প্যারালাইসিস রোগীর শরীরে এই তেল মালিশ করলে ভালো হয়ে যাবে।’ আমার ভাবনা থেমে যায়।
মানুষের মনের ভেতরকার কুসংস্কার, অন্ধকার দূর করতে না পারলে কোনো উন্নয়নই কি টেকসই হতে পারে! জানি না। মানুষ, মানুষের মনকে উপেক্ষা করে কোন উন্নয়নের পথে ছুটি আমরা! জানা নেই। এই যে দেশে এতো এতো টেলিভিশন- তারা কি সত্যিকার অর্থে মানুষের মানস গঠনে বিন্দুমাত্র ভূমিকা রাখে? কিশোরগঞ্জের ঘটনা কিন্তু তার পক্ষে সাক্ষ্য দেয় না। তা হলে! ডিজিটাল বাংলাদেশে, উন্নয়নের বাংলাদেশে, পীরের পানি পড়ার জন্য এতো মানুষের ছুটে যা্ওয়া- না কিছুতেই মেলানো যাচ্ছে না!
লেখক: প্রকাশ ও সম্পাদক, নতুন দেশ ডটকম
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।