জুমবাংলা ডেস্ক: এক যুগের বেশি সময় ধরে মাছ কাটার কাজ করছেন মন্টু বিশ্বাস। বরিশাল নগরীর ইলিশের মোকাম হিসেবে পরিচিত পোর্ট রোড বাজারে মাছ কাটার কাজ করে সংসার চালান। তবে এ বছর পাঙাশ মাছ কেটে ইতিহাস গড়েছেন বলে দাবি করেছেন মন্টু বিশ্বাস। বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদক সালেহ টিটু-র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বড় আকারের ৪০টির অধিক পাঙাশ মাছ কেটে দিয়েছেন ক্রেতাদের। এর মধ্যে বেশিরভাগ মাছ ছিল পাঁচ-ছয় কেজি ওজনের। পাঁচটি ছিল ১৫-১৮ কেজির। এই পাঙাশগুলো কেটে ভাগ করে নিয়েছেন তিন-চার ক্রেতা। ছোট পাঙাশগুলো ক্রেতারা একাই নিয়েছেন। এদিন পাঙাশ কেটে ১৫ হাজার টাকা আয় করেছেন মন্টু। বড় পাঙাশ কেজি ২০-৩০ টাকা করে কাটছেন। তবে ছোট পাঙাশ কাটছেন ২৫০-৩০০ টাকা দরে।
মন্টু বিশ্বাস বলেন, ‘১৩ বছরের মাছ কাটার জীবনে এত পাঙাশ কখনও কাটিনি। এমনকি এত পাঙাশ জীবনেও দেখিনি। ইলিশের মোকামে বেশি পাঙাশ আসায় দাম ছিল হাতের নাগালে। ৫০০-৫৫০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন ক্রেতারা। পরে সেগুলো আমাকে দিয়ে কাটিয়েছেন তারা।’
মন্টু ছাড়াও গত দুদিন পোর্ট রোড বাজারে মাছ কাটতে বসা ১০-১২ জন শ্রমিক কমবেশি পাঙাশ কাটায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন। সবাইকে মাছ কাটতে দেখা গেছে। প্রত্যেকের বঁটির সামনে পাঁচ-ছয়টি করে পাঙাশ জমা পড়েছিল। যে যত দ্রুত কাটছেন তার কাছে বেশি জমা হচ্ছে। এক ধরনের প্রতিযোগিতা করেই পাঙাশ কেটেছেন এসব শ্রমিক।
এদিকে, পাঙাশ মাছের দাম নাগালে—এমন খবর শুনে রবিবার (৩০ অক্টোবর) সকালেও পোর্ট রোড বাজারে ক্রেতাদের ভিড় ছিল। এদিন ৫০০-৫৫০ টাকা কেজিতে আড়তদারদের কাছ থেকে পাঙাশ কিনেছেন ক্রেতারা। তবে খুচরা বিক্রেতার পাঙাশ তেমন একটা বিক্রি হয়নি।
নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দার কালু খান বাড়ি এলাকার বাসিন্দা রানা আলী নেওয়াজ খান বলেন, ‘দুদিন ধরে ইলিশের জালে বিপুল পরিমাণ পাঙাশ ধরা পড়ছে। বাজারে দামও কম। বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে শনিবার এক আড়তদারকে একটি বড় পাঙাশ কিনে রেখে দিতে বলেছিলাম। রবিবার সকালে বাজারে যাই। আড়তদার ১৩ কেজি ওজনের একটি পাঙাশ বের করে দেন। পরে সেটি চার ভাগ করে চার জনে নিয়েছি। প্রতি জনের এক হাজার ৬০০ টাকা করে দাম পড়েছে। প্রতি ভাগে মাছ পড়েছে তিন কেজি। হিসাবে কেজি পড়েছে ৫৩০ টাকা। মাছটি কাটতে শ্রমিককে দিতে হয়েছে ৩০০ টাকা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মতো অনেকে বড় একটি পাঙাশ কিনে ভাগ করে নিয়েছেন। আবার পাঁচ-আট কেজি ওজনের পাঙাশ অনেকে একাই নিয়েছেন। আসলে নদীর পাঙাশ অনেক সুস্বাদু। এজন্য চাহিদা বেশি।’
পোর্ট বাজারের ইলিশ মাছের আড়তদার জহির সিকদার বলেন, ‘শীতের শুরু এবং শেষে প্রতি বছর ইলিশের জালে ধরা পড়ে বড় বড় পাঙাশ। তবে এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি পাঙাশ ধরা পড়ছে। শনিবার আড়তে ৩০০ মণের বেশি পাঙাশ এসেছে। এর বেশিরভাগ মাদারীপুর, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছে। আজও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। তবে শনিবারের চেয়ে রবিবার কম এসেছে। রবিবার ২০০ মণের মতো পাঙাশ এসেছে। এসব পাঙাশের সাইজ দেখলে মনটা জুড়িয়ে যায়।’
স্থানীয় জেলে আছমত আলী বলেন, ‘পাঙাশ সাধারণত ঝাঁকবেঁধে গভীর পানিতে বাস করে। বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিভিন্ন স্থানে ঝাঁকবেঁধে থাকা পাঙাশ গভীর পানি থেকে ওপরে উঠতে শুরু করেছে। গত ২২ দিন নদীতে জাল না ফেলায় পাঙাশের অবাধ বিচরণ শুরু হয়। এজন্য জাল ফেললেই বড় বড় পাঙাশ ধরা পড়ছে। প্রতি টানে কমপক্ষে ২০-২৫টি করে পাঙাশ উঠছে। তবে এটি বেশিদিন স্থায়ী হবে না। জাল ফেলা শুরু হওয়ায় দু’একদিনের মধ্যে গভীর পানিতে চলে যাবে পাঙাশ। তখন তেমন ধরা পড়বে না। মৌসুমের অন্যান্য সময় পাঙাশের কেজি ৭৫০-৮০০ টাকা থাকে। এখন বেশি ধরা পড়ায় ৫০০-৫৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।’
স্থানীয় আরেক জেলে ইসহাক মাঝি বলেন, ‘এই মৌসুমে পাঙাশ ধরা পড়ে। তবে এবার পাঙাশের পরিমাণ বেশি। আগে এত পাঙাশ ধরা পড়েনি। বেশি ধরা পড়ায় কম দামে পাচ্ছেন ক্রেতারা। আমরাও লাভবান হচ্ছি।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে নদীতে পাঙাশের অবাধ বিচরণ বেড়েছে। একইসঙ্গে সাইজ বড় হয়েছে, পরিমাণও বেড়েছে। এর কারণ হলো মা ইলিশ রক্ষায় মাছ ধরা বন্ধ থাকায় ইলিশের ডিম পাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যতগুলোর জলজপ্রাণী আছে তারাও এর সঙ্গে বড় হতে থাকে। ইলিশের সুফলের সঙ্গে সঙ্গে আমরা বড় পাঙাশ কম দামে খেতে পারছি। এখানে অন্য কোনও কারণ নেই। এই মৌসুমে জেলেদের জালে স্বাভাবিকভাবেই ধরা পড়ে পাঙাশ।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।