বিনোদন ডেস্ক: বাংলার মহানায়িকা তিনি। তাকে বলা হয় বাংলার গ্রেটা গর্ব। ১৯৭৮ সালের আগে পর্যন্ত টলিউডের (Tollywood) পর্দাতে নিয়মিত দেখা যেত তাকে। কিন্তু ওই সালের পর থেকে আর কেউ কখনও প্রকাশ্যে দেখতে পায়নি সুচিত্রা সেনকে (Suchitra Sen)। অবশ্য ১৯৭৮ সালের আগেও তিনি যেমন মহানায়িকা ছিলেন, আজ এত বছর পরেও তার সেই একই ইমেজ রয়ে গিয়েছে বাঙালির মনে। কিন্তু কেন যৌবন থাকতেই নিজেকে স্বেচ্ছাবন্দি করে নেন সুচিত্রা সেন?
সুচিত্রা সেন কেন সময়ের আগেই টলিউড ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন সেই প্রশ্নটা আজও ভাবায় বাঙালিকে। কেউ দায়ী করেন উত্তম কুমারের আকস্মিক মৃত্যুকে, কেউ বলেন সুচিত্রা সেন চাননি তার চেহারায় বয়সের ছাপ ভক্তদের নজরে পড়ুক। আবার কেউ কেউ দায়ী করেন তার অসুখী দাম্পত্যকে। কিন্তু তার স্বামী দিবানাথ সেনই তো সুচিত্রাকে তুলে দেন বিমল রায়ের হাতে।
স্ত্রীকে অভিনেত্রী হিসেবে গড়ে তোলায় দিবানাথের অবদান কিছু কম ছিল না। খুব অল্প সময়েই সুচিত্রা সেন টলিউডে ছাপ ফেলে দেন। বাঙালির মনে সর্বদা গেঁথে থেকে যাবে উত্তম-সুচিত্রার জুটি। উত্তম কুমার এবং সুচিত্রা সেন হিন্দি এবং বাংলাতে অন্যান্য নায়ক-নায়িকার সঙ্গে অভিনয় করলেও তাদের জুটিটাই যেন যে কোনও সিনেমাকে সম্পূর্ণ করত। উত্তম কুমারের অকাল প্রয়াণের সুচিত্রাও নিজেকে গুটিয়ে নিলেন।
অবশ্য উত্তম কুমারের মৃত্যুর পরেও সুচিত্রা সেন অভিনয় করছিলেন। মুম্বাইতে তখন তার বেশ নামডাক হয়েছিল। কিন্তু ‘ফরিয়াদ’ ছবি মুক্তির পর সুচিত্রার বয়স এবং তার চেহারা নিয়ে প্রবল সমালোচনা করেন একদল সমালোচক। এদিকে আবার বাংলাতেও তৎকালীন সময়ের প্রযোজক ও পরিচালকদের একাংশের মনে হয়েছিল উত্তম কুমার ছাড়া একা সুচিত্রা মূল্যহীন। তার উপর আবার তার শেষ ছবি ‘প্রণয়পাশা’ বক্স অফিসে ফ্লপ হয়।
সব মিলিয়ে বেশ মানসিক আঘাত পেয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। তিনি দারুণ ভেঙে পড়েন এবং কলকাতার বাইরে বেলুড় মঠ রামকৃষ্ণ মিশনে যান শান্তির খোঁজে। সেখানে তৎকালীন পবিত্র ধর্মগুরু ভারত মহারাজের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন সুচিত্রা। মহানায়িকা নাকি মহারাজের পায়ের কাছে বসে অনেক কেঁদেছিলেন। সুচিত্রা সেনকে নিয়ে লেখালেখি করা সাংবাদিক গোপালকৃষ্ণ রায়ের বইতে মিলেছিল এই তথ্য।
ভারত মহারাজ মহানায়িকাকে বলেন, “মা অর্থলিপ্সু, লোভী হয়ো না।” ভারত মহারাজের সঙ্গে এই সাক্ষাৎ সুচিত্রাকে স্বেচ্ছাবন্দী হওয়ার পথে নিয়ে যায়। তাই বলে এই নয় যে তিনি প্রকাশ্যে একদমই বেরোতেন না। অন্তরালে চলে যাওয়ার পরেও তিনি তার দুই নাতনি রিয়া এবং রাইমাকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতার ভিক্টোরিয়াতে ঘুরতে যেতেন। কিন্তু কালের নিয়মে বয়সের ছাপ পড়েছিল তার চেহারায়। আর তাতেই নাকি বাঙালি চিনতে পারত না তাদের মহানায়িকাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।