জুমবাংলা ডেস্ক : ভিপি নূর ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে ডাকসু ভবনের ফুটেজ গায়েবের অভিযোগ আনেন হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত ডাকসুর এজিএস ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন অভিযোগ করেন।
এদিকে ভিপি নুরুল হক নূর ও তার সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর নজিরবিহীন হামলায় আহতদের শারীরিক অবস্থার তথ্য নিয়ে লুকোচুরির অভিযোগ এনেছেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
একইদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে হামলা ও তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে।
হামলায় আহত এপিএম সুহেলসহ কয়েকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা।
ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক ও পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আখতার হোসেন, মশিউর রহমানসহ সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে বিন ইয়ামিন মোল্লা প্রশ্ন রাখেন- চিকিৎসকরা কেন আমাদের কাছে এবং দেশবাসীর সামনে তাদের শরীরিক সমস্যা ও চিকিৎসার বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরছেন না?
আহতদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করা হচ্ছে মন্তব্য করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আহতদের বাস্তব শারীরিক অবস্থার সঙ্গে মেডিকেল ডিরেক্টরের বক্তব্যের আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে।
বিন ইয়ামিন মোল্লা অভিযোগ করেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একে এম নাসির উদ্দীন আহতদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে লুকোচুরি করছেন। তিনি প্রথম দিকে বলেছেন, ‘আহত যারা ভর্তি রয়েছেন, তাদের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন নয়, আশঙ্কাজনক নয়, দুতিন দিনের মধ্যে তারা আস্তে আস্তে রিলিজ পেয়ে যাবেন।’
তিনি বলেন, কিন্তু এরপর আমরা দেখেছি, আহত সুহেলকে হঠাৎ একদিন সিটি স্ক্যানের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় এবং এরপরে তার মাথায় জমাট বাঁধা রক্ত সরানোর জন্য সার্জারি করা হয়। সার্জারির পর এখন তার কোমরের হাড় ভেঙে গেছে বলে গতকাল ডাক্তার আমাদের জানিয়েছেন। তাকে এভাবে আরও ২ মাস বেডে শুয়ে থাকতে হবে। এরপর মাথার চিকিৎসা হয়ে গেলে তার হাড়ের চিকিৎসা করা হবে।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে পরিষদের এই নেতা আরও বলেন, এপিএম সুহেলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এভাবে আহত আরিফ সম্পর্কে জানানো হয়েছে, তিনি কিছুদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবেন। কিন্তু গতকাল ডাক্তার আমাদের জানিয়েছেন, আরিফের কিডনির ৭০ শতাংশ অকেজো হয়ে গেছে। তার কিডনি ডায়ালাইসিস করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় যদি কিডনি ভালো না হয়, তাহলে তাকেও কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়ও আহত মেহেদি হাসানেরও ২৫ শতাংশ কিডনি অকেজো হয়ে গেছে। তাকেও ডায়ালাইসিস করা হচ্ছে।
এদিকে ভিপি নুরুল হক নুরের ছোট ভাই আমিনুলও কিছুক্ষণ পরপর আবোল-তাবোল বলছেন। তিনিও আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন।
মামলার বিষয়ে বিন ইয়ামিন বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা আমাদের বলেন, তোমরা যারা নিরাপত্তাহীনতায় আছো, তোমরা তোমাদের ইনফরমেশন দাও আমরা তোমাদের সাহায্য করব। সে কথা বলে গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা আমাদের কাছ থেকে সব ইনফরমেশন নিয়ে নিয়েছে। পরবর্তীতে আমরা দেখতে পাই, ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে আমাদের গ্রেফতার করা হয়। ঠিক একই কায়দায় আমরা দেখেছি গত কদিন আগে আমাদের ২৯ জনের নামে ভিত্তিহীন মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ মামলা থেকে সুস্পষ্টভাবে আমরা আপনাদেরকে জানিয়ে দিতে চাই, গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা আমাদের ঢাকা মেডিকেলে গিয়েছেন এবং সেখানে গিয়ে আমাদেরকে বলেছেন তোমাদের কারা কারা এখানে আহত হয়েছে, তোমাদের ইনফরমেশন দাও। তখন তারা সেখান থেকে আমাদের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে। তার পরপরেই আমরা দেখতে পেয়েছি সেই তথ্য দিয়ে আমাদের ২৯ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। সেই ২৯ জনের ভেতর আইসিইউতে থাকা মৃত্যুর সঙ্গে লড়া ফারাবীও রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের এই যুগ্ম আহ্বায়ক আরও করেন, আমরা দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বারবার মিডিয়ার সামনে কথা বলে যাচ্ছি। যার ফলে এদেশের মানুষের সঙ্গে আমাদেরকে আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এদেশের মানুষ এদেশের ছাত্রসমাজ তারা আমাদেরকে বিশ্বাস করে আমাদের ভালোবাসে। আমাদের নেতৃত্বে তাদের আস্থার জায়গা রয়েছে। এই কারণে আমাদের আওয়াজকে চিরতরে ধ্বংস করার জন্য ডাকসু ভিপি নুরুলহক নুরসহ তার সহযোদ্ধাদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যই এসব নৃশংস হামলা চালানো হয়। এ হত্যার উদ্দেশ্যটি যখন ব্যাহত হয়, তখন তাদের কণ্ঠকে আবার রোধ করার জন্য আমাদের ওপর এই মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।
হামলকারীদের বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এই হামলায় আল মামুনসহ যারা প্রত্যক্ষভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে; তাদের যদি চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় না আনা হয় এবং আমাদের কোনো নেতাকর্মীদের যদি এই মিথ্যা মামলায় আটকে রাখা হয়; তাহলে আমরা দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানাব, আপনারা এই সন্ত্রাসী দখলদার শক্তির বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে আন্দোলন এর প্রতিবাদ করবেন।
এদিকে ডাকসু ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডাকসুর এজিএস ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন দাবি করেন, আহত নুরসহ তার অনুসারীরাই ডাকসু ভবনের ফুটেজ গায়েব করেছে। রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় ডাকসু ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ অভিযোগ করেন।
সাদ্দামের অভিযোগ, সেদিন ভিপি নুরুল হকের সংগঠনের নেতাকর্মীরা আগে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। সে ঘটনাকে লুকাতে এই সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করা হয়।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, গত ২২ ডিসেম্বর ডাকসু ভবনে হামলার যে ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি ভিপি নুর ও তার সংগঠন দ্বারা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ (বুলবুল-মামুন অংশ) নামক একটি সংগঠনের ওপর গত ১৭ ডিসেম্বর হামলার জের ধরে ঘটে। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ বেশ কিছুদিন যাবত বিবদমান। পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, কর্মসূচি ও সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে সংগঠন দুটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির কাজে লিপ্ত।
উভয় সংগঠন নিজেদের সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধি ও অস্তিত্ব জানান দেয়ার নাম করে মিডিয়াবাজির মাধ্যমে পরিচিতি লাভের অভিপ্রায় থেকে এমন হীন কর্মে নিয়োজিত। তিনি আরও জানান, ওইদিনের সংঘর্ষে উপস্থিত না থেকেও ডাকসুর কয়েকজন প্রতিনিধির নামে মামলার অভিযোগ দায়ের করা হয়। তারা এসব মিথ্যা মামলার অভিযোগ প্রত্যাহারের দাবি জানান।
ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ২২ ডিসেম্বরের ঘটনায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মনোনীত কোন ডাকসু প্রতিনিধির বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। উল্লেখিত সংঘর্ষ, হামলা-প্রতি হামলার সঙ্গে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কেউ কোনোভাবেই জড়িত নয়।
তিনি বলেন, সিনেট সদস্য সনজিত চন্দ্র দাস, এজিএস সাদ্দাম হোসেন, সদস্য রাকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, সদস্য মুহা. মাহমুদুল হাসান সর্বাত্মকভাবে সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা করার পরও ভিপি নুর পুলিশের কাছে এদের নামে মামলার আবেদন করেন। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকার পরও মামলার আবেদনে তার নাম যুক্ত করা হয়েছে। সাদ্দাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভিপি নুরের টেন্ডারবাজি, তদবির বাণিজ্য, পার্সেন্টেজ আদায় ইত্যাদি অনৈতিক কর্মকাণ্ড সবার সামনে উন্মোচিত হওয়ার বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে পরিকল্পিতভাবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানো হয়েছে কি না; তা অনুসন্ধানের দাবি রাখে।
সংবাদ সম্মেলনে ডাকসুর এজিএস বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করেন। সেগুলো হচ্ছে- ডাকসু নেতৃবৃন্দ, সিনেট সদস্য, হল সংসদের নেতৃবৃন্দ, ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা মামলার অভিযোগ প্রত্যাহার করতে হবে; ডাকসু ভবনের ভেতরে অবস্থান নেয়া নুরের সহযোগী বহিরাগতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; ডাকসু ভবন ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত উভয়পক্ষের সদস্যদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; ডাকসু ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে; ডাকসু ভিপিকে পদত্যাগ করতে হবে; নুরের দুর্নীতি তদন্তে কমিটি গঠন করতে হবে; সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ায় নুরকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে, অন্যথায় তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন তারা।
সাদ্দামের অভিযোগের বিষয়ে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন এজিএসকে ‘হামলার নির্দেশদাতা’ অ্যাখ্যা দিয়ে বলেন, সেদিন ডাকসু ভিপি নুরুল হক ও তার সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার নির্দেশদাতা ছিল সাদ্দাম হোসেন এবং ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। তাদের এধরনের বক্তব্য ভিত্তিহীন। কেউ হামলায় আহত হলে তার প্রমাণ থাকে। তাদের কোনও নেতাকর্মী হাসপাতালে ভর্তি হয়নি, আইসিইউতে থাকতে হয়নি।
তিনি বলেন, বরং আমাদের যারা আহত হয়েছে, তারা এখনও হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছেন। কেউ কেউ আইসিইউতে রয়েছেন। সেদিন হামলার পর পরই প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা তাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়েছেন। যারা গুরুতর আহত ছিলেন; তারা কীভাবে সিসিটিভির ফুটেজ গায়েব করলো, এটা বোধগম্য নয়। মূলত হামলাকারীরাই সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করেছে। আমরা শুরু থেকেই এই ফুটেজ উদ্ধারের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু এখনও সেটি উদ্ধার করতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে।
হামলার ঘটনা তদন্তে তথ্য-প্রমাণ আহ্বানঃ এদিকে ডাকসু ভবন এবং মধুর ক্যান্টিন এলাকায় সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য উপাচার্য কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি হামলাকারীদের বিষয়ে তথ্য প্রমাণ চেয়েছে। রোববার তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন এ বিষয়ে তথ্য চান।
আজ সোমবার বেলা দুইটার মধ্যে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং ঘটনা সম্পর্কে তথ্য দিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিকট থেকে ঘটনার বিবরণসহ (প্রমাণ যদি থাকে) লিখিতভাবে জমা দিতে বলা হয়েছে।
এক্ষেত্রে তথ্য প্রদানকারীর নাম, ঠিকানা এবং টেলিফোন নম্বরসহ কলা অনুষদের ডিনের দফতরে সংরক্ষিত বক্সে জমা দিতে বলা হয়। তদন্তের স্বার্থে তথ্য প্রদানকারীর নাম ঠিকানা গোপন রাখা হবে বলে জানান কমিটির প্রধান।সূত্র : যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।