রাশিদ রিয়াজ : সৌদি আরবের মতো ইসলামী দেশে পশ্চিমা ঢংয়ের সঙ্গীতের কনসার্টে দর্শকের ঢলে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে। এমডিএল বিস্ট ফেস্টিভাল নামে এ সঙ্গীত উৎসব টানা কয়েকদিন চলে এবং তা গত ২১ ডিসেম্বর শেষ হয়। এতে ১৮ জন বিশ্বের সেরা সুপারস্টার সঙ্গীত শিল্পী, ১৮টি আন্তর্জাতিক নৃত্যদল ও ২৪টি স্থানীয় ও আঞ্চলিক শিল্পগোষ্ঠী সঙ্গীত পরিবেশন করেন। প্রথমদিনেই কনসার্টে দর্শক উপচে পড়ায় এ সংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর আগে কনসার্টে দশর্কদের বিশ্ব রেকর্ড ছিল বেলজিয়ামের টুমারোল্যান্ড ও ক্যালিফোর্নিয়ার কোয়াচেলায়। আল-আরাবিয়া
গত বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের এ কনসার্টটি ছিল এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দর্শক উপস্থিতিতে সঙ্গীত উপস্থাপনা। কারণ টুমারোল্যান্ডে এর আগে ৬৬ হাজার ও ক্যালিফোর্নিয়ায় দর্শক সংখ্যা ছিল ৯৯ হাজার। সৌদিতে এ কনসার্টে ইডিএম ও ডিজে তারকা ডেভিড গুয়েট্টা, ম্যার্টিন গ্যারিক্স, স্টিভ আওকি’র মত বরেণ্য শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সৌদি ডিজে দুয়ো, ডিশ ড্যাশও সঙ্গীতে এ উৎসবে উম্মাদনার ঝড় তোলেন। এছাড়া উৎসবে মঞ্চ সজ্জায় অত্যাধুনিক আলোকসজ্জার ব্যবহার ও সর্বশেষ প্রযুক্তির ব্যবহারে সঙ্গীত উপস্থাপনা ছিল বিশ্বমানের। বিশ্বমানের শিল্পকলা, সংস্কৃতি, খাবারের প্রশংসায় উৎসবে আগত দেশবিদেশের দর্শক শ্রোতারা ছিলেন পঞ্চমুখ।
সৌদি ক্রাউন প্রিন্স বিন সালমান তার দেশের অর্থনীতিকে তেল নির্ভরশীল থেকে বহুমুখী শিল্প ও বিনিয়োগে নেয়ার জন্যে যে ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছেন তারই অংশ হিসেবে এধরনের সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে। এর আগে রিয়াদ ও দিরিয়ায় সাংস্কৃত আয়োজন ছিল অনন্য। ছিল আন্তর্জাতিক বক্সিং ও কুস্তি প্রতিযোগিতা। দিরিয়া প্রিক্স-২০১৯ নামে মোটর রেসের আয়োজন করে সৌদি।
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সৌদি আরবে এমন সাংস্কৃতিক আয়োজন সত্ত্বেও সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় বইছে। পবিত্র দুই মসজিদ ও বিশ্ব মুসলিম উম্মার খাদেম হিসেবে পরিচিত সৌদি বাদশাহ তার দেশে যে বিশ্বমানের সাংস্কৃতিক আয়োজন করছেন তা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না এ প্রশ্ন যেমন উঠেছে তেমনি দেশটিতে বাক স্বাধীনতা না থাকায় এবং সৌদি শাসকদের সমালোচনা করলেই কারাদণ্ড, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যে প্রায়ই দেশটিতে ঘটছে সেখানে আন্তর্জাতিক সঙ্গীত তারকাদের এ সঙ্গীত উৎসবে উপস্থিতি দেশটির ভাবমূর্তি উজ¦ল করতে পারবেনা বলেই অধিকাংশ মানুষ মনে করছেন। বিশেষ করে সিনিয়র সাংবাদিক জামাল খাশোগজির হত্যাকাণ্ড ও এ হত্যাকাণ্ডের দায়সারা গোছের বিচার, নারী অধিকার নেত্রী লউজাইন আল-হাতলোউলকে গত বছরের মে মাসে আটক, অনেক ধর্মীয় আলেম যারা সৌদিতে এধরনের সংস্কারের নামে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সিনেমা ও অন্যান্য সংস্কৃতির আমদানি ও আয়োজনের সমালোচনা করায় তাদের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে-এসব কাজের সমালোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
অনেকে বলছেন যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করা হচ্ছে পশ্চিমাদের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসে বিভিন্ন আয়োজনে তা শিক্ষা, কারিগরি প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির বিকাশে ব্যবহার করলে সৌদি সরকার তার নাগরিকদের কাছ থেকে অনেক বেশি কার্যকর ও স্থিতিশীল ফায়দা পেতেন। এমনকি সৌদিতে আমন্ত্রিত অতিথি বা আন্তর্জাতিক সঙ্গীত তারকারা ইনস্ট্রগ্রামে, ফেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশটিতে নানা ধরনের অবিচারের অবসান দাবি করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন হলিউডের চলচ্চিত্র তারকা, মডেল সহ অনেক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। আরমাই হ্যামার, ইডি ওয়েস্টউইক, রিয়ান ফিলিপ, উইলমার ভালডেরামা, আলেসসান্দ্রা আমব্রোসিও, হালিমা এডেন, জোয়ান স্মলস সহ অনেকেরই সৌদিতে বিস্ট ফেস্টিভালে অংশ নেয়ারও সমালোচনা করেন অনেকে বলে জানিয়েছে দি গার্ডিয়ান। সমালোচকরা প্রশ্ন তুলেছেন এসব সেলেব্রেটিরা কি সৌদি বাদশাহর ভাবমূর্তি গড়তে ভাড়া খাটছেন। সমালোচকরা বলেন, যতই পর্যটক বান্ধব দেশ হিসেবে সৌদির প্রচার করা হোক বাস্তব পরিস্থিতি জঘন্য।
তবে যারা সৌদিতে এধরনের সঙ্গীত উৎসবের পক্ষে তাদের মধ্যে আমন্ত্রিত সেলেব্রেটি আরমাই হ্যামার বলছেন, অবশ্যই এ সৌদি আয়োজন বিশেষ কিছু। অনেক সৌদি নারী পুরুষ তাদের দেশে সঙ্গীত কনসার্টে একসঙ্গে আসবেন, বিনোদনে মজবেন হয়ত তারা তাদের জীবদ্দশায় ভাবতেও পারতেন না। এটা নিঃসন্দেহে সৌদির সংস্কৃতিতে ভিন্ন ধারার পরিবর্তন। ‘টিন ভোগ’এর সাবেক সাবেক ডিজিটাল এডিটরিয়াল ডিরেক্টর ফিলিপ পিকার্ডি বলেন, সৌদিতে এমন সব সেলেব্রেটিদের অংশ নেয়া দেখে অনেকে হতাশ হয়েছে একারণে যে বিষয়টিকে তারা দেখছেন সৌদি সরকারের ভাবমূর্তি পুনর্বাসন প্রচারণার অংশ হিসেবে। ইনস্টাগ্রাম সমালোচক ডায়েট প্রাডা তার দীর্ঘ বক্তব্যে যা বলেছেন তার সারমর্ম হচ্ছে এধরনের আয়োজন লজ্জাজনক ও যারা প্রভাবিত করার কাজ করছে সৌদি সরকারের হয়ে তাদের পকেটে মোটা খামে অর্থের পরিমান ছিল ৬ অঙ্কের , এদের বেশিরভাগই পশ্চিমা শেতাঙ্গ গোষ্ঠীর এবং তারা এও জানে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানবাধিকার পরিস্থিতি বিরাজ করছে দেশটিতে। মডেল এমিলি রাতাজকোভস্কি অবশ্য সৌদি আরবের এ আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন কারণ তিনি দেশটির মানবাধিকার বিষয়গুলোর সঙ্গে যুক্ত। এমিলি ডায়েট প্রাদার কাছে বলেন, সৌদির নারীদের অধিকার আদায়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো খুবই জরুরি। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্যে যাদের বাক স্বাধীনতা নেই, মিডিয়াও মুক্ত নয়। সেদিকেই বেশি নজর দেয়া উচিত সবার এবং সৌদি শাসকদেরও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।