জুমবাংলা ডেস্ক : ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য (এমপি) মো. আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা হয় ঢাকার দুটি ফ্ল্যাটে। এ ফ্ল্যাট দুটির মালিক হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড ও আনারের বাল্যবন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীন। ঘটনার দুই থেকে তিন মাস আগে ঢাকার গুলশান ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় দুটি ফ্ল্যাটে সহযোগীদের নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করেন আক্তারুজ্জামান শাহীন। ওই বৈঠক থেকেই হত্যার মূল দায়িত্ব দেওয়া হয় আক্তারুজ্জামান শাহীনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক নেতা শিমুল ভুঁইয়াকে।
একাধিক হত্যা মামলার আসামি শিমুল পুলিশের খাতায় একজন সন্ত্রাসী। নিজের অপরাধ গোপন রাখতে ইতোমধ্যে তিনি তার নাম পালটে ফেলেছেন। সৈয়দ আমানুল্লাহ নামে তৈরি করেছেন পাসপোর্টও। এখন তিনি আমানুল্লাহ নামেই পরিচিত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে কলকাতার দমদম বিমানবন্দর লাগোয়া নিউটাউনে রহস্যজনকভাবে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। স্নায়ুরোগের চিকিৎসা নিতে তিনি ১২ মে দর্শনা-গেদে সীমান্ত দিয়ে কলকাতা যান। কিন্তু পরদিন থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন। মূলত সেদিনই (১৩ মে) তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনা প্রকাশ্যে আসে বুধবার। ওইদিনই রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন (২৪) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় ভারতের একটি তদন্তদল ঢাকায় পৌঁছে।
এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার প্রধান হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, হত্যাকারীদের পরিকল্পনা ছিল লাশটি এমনভাবে গুম করা হবে যাতে কেউ কোনোদিন খুঁজে না পায়। যে কারণে তারা ভিকটিমের শরীরকে বিভিন্ন পার্টে ভাগ করে ফেলে। হাড়ের সঙ্গে মাংস আলাদা করে ফেলে এবং মাংস সুটকেসে করে মূল হত্যাকারী আমানুল্লাহ ও জাহিদ বা জিহাদ দুজন দুটি ব্রিফকেসে করে পাবলিক টয়লেটের কাছে নিয়ে যান। সেখানে একটি গাড়ি নিয়ে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন সিয়াম। সেখান থকে সিয়াম ও জাহিদ বা জিহাদ লাশের খণ্ডিত অংশ নিয়ে চলে যান। এরপর মূল হত্যাকারী আমানুল্লাহ বাসায় চলে আসেন।
পরদিন আমানুল্লাহ ও আরও দুজন বাকি মাংসগুলোকে পলিথিনে করে সরিয়ে ফেলেন। মাংসগুলো যদি পথে কেউ ধরে, এ ভয়ে হলুদের গুঁড়া মেশায়, যাতে তারা বলতে পারে বাজার থেকে কিনে এনেছে। অর্থাৎ তাদের উদ্দেশ্য ছিল এমনভাবে লাশ গুম করা হবে যেন কেউ কোনোদিন তার অস্তিত্ব না পায়। হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে অপরাধীরা একে একে বাংলাদেশে চলে আসেন।
১৫ মে মূল হত্যাকারী আমানুল্লাহ ও আক্তারুজ্জামান শাহীনের বান্ধবী বাংলাদেশে চলে আসেন। ১৬ মে বাংলাদেশে আসেন মুস্তাফিজ। এভাবে একে একে হত্যাকারীরা যখন বাংলাদেশে চলে আসেন, তখন মূল মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন বাংলাদেশ থেকে ভিস্তা এয়ারলাইন্সের প্রথমে দিল্লি এবং সেখানে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে দিল্লি থেকে কাঠমান্ডু যান। সেখান থেকে দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর তারা ভিকটিমের মোবাইল ফোন থেকে বিভিন্ন লোকের কাছে মেসেজ পাঠিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন ভিকটিম এখনো ঠিক আছেন। সর্বশেষ ১৮ মে পাঠানো মেসেজে বলা হয়, ‘আমি দিল্লি যাচ্ছি। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হবে, সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যাবে। মন্ত্রিত্ব পাওয়ার বিষয়ে কথা হবে।’
অপরাধীরা অপরাধ করে ডিভাইসের মাধ্যমে অপরাধ তদন্তকারী সংস্থাকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ কারণে ভিকটিমের মোবাইল ফোনকে বেনাপল, মোজাফফরাবাদসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কী কারণে হত্যাকাণ্ড, সেটি আমরা পরে বের করব। কারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের সবকিছুই আমরা পেয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।