দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছে এমপিও নীতিমালা ২০২৫ এর সংশোধনের মধ্য দিয়ে। শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা, নীতিগত অস্পষ্টতা এবং প্রশাসনিক জটিলতার অবসান ঘটাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এই নীতিমালায় গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী এনেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শাখা সংখ্যা, শিফট, শিক্ষার্থী সংখ্যা, শিক্ষক নিয়োগের ধরন ও যোগ্যতা প্রভৃতি বিষয়ে এখন অধিকতর স্বচ্ছতা এবং কার্যকারিতা দেখা যাবে।
এমপিও নীতিমালা ২০২৫ এ নতুন করে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫৫ জন হবে, যেখানে আগে এই সংখ্যা ছিল ৪০। এই নতুন নীতিমালায় বিশেষ করে “শাখা সংখ্যা”, “অতিরিক্ত শিফট”, এবং “উদ্বৃত্ত পদ” এর বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে যা আগের নীতিমালায় সুস্পষ্ট ছিল না। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আরও কাঠামোবদ্ধভাবে পরিচালিত হবে, এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশাসনিক সমন্বয় বৃদ্ধি পাবে।
Table of Contents
এমপিও নীতিমালা ২০২৫ এর মূল পরিবর্তনসমূহ
এমপিও নীতিমালা ২০২৫ এ আনা সংশোধনগুলো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এক গঠনমূলক পরিবর্তনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। নিচে এই নীতিমালার প্রধান কিছু পরিবর্তন আলোচনা করা হলো:
🔸 শ্রেণি ও শাখা বিষয়ক নতুন নির্দেশনা
প্রতিটি শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ৩টি শাখা অনুমোদিত হবে। এর মধ্যে থাকবে একটি মূল শাখা ও দুটি অতিরিক্ত শাখা। প্রতিটি শাখায় শিক্ষক নিয়োগও সীমিত থাকবে শুধুমাত্র অনুমোদিত শাখাগুলোর জন্য। এর ফলে অতিরিক্ত বা অননুমোদিত শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ হবে এবং বাজেটের অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব হবে।
🔸 শিক্ষার্থী সংখ্যার সংশোধন
প্রত্যেক একক শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা এখন সাধারণত ৫৫ জন নির্ধারিত হয়েছে। পূর্বে এই সংখ্যা ছিল ৪০। অর্থাৎ একটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিক কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করবে।
🔸 শিফট খোলার শর্তাবলি
নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, মাধ্যমিক পর্যায়ে শিফট খোলার জন্য সর্বনিম্ন ১৩৭৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে, যার মধ্যে ৮২৫ জন মূল শাখায় এবং বাকি ৫৫০ জন অতিরিক্ত শাখায় থাকবে। শিফট খোলার শর্ত কঠোর করায় কেবল প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানগুলোই এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।
🔸 নিয়োগের নতুন ব্যাখ্যা
নীতিমালার ৯-এর ৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যদি কোনো পদ জনবল কাঠামোর প্যাটার্নে না থাকে, তবুও সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান অনুসরণ করে সেই পদে নিয়োগ দেওয়া যাবে। এই নির্দেশনার ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন নতুনভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবে অননুমোদিত হলেও প্রয়োজনীয় পদগুলোতে নিয়োগ।
প্যাটার্নভুক্ত ও উদ্বৃত্ত পদ নিয়ে পরিষ্কার নির্দেশনা
প্যাটার্নভুক্ত পদ মানে হলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবল কাঠামো অনুযায়ী শূন্যপদে নিয়োগপ্রাপ্ত পদ। যদি কোনো পদ নতুন নীতিমালা অনুযায়ী বিলুপ্ত হয়, তবে সেটি উদ্বৃত্ত পদ হিসেবে গণ্য হবে। এই পদের ক্ষেত্রে কর্মরত ব্যক্তির চাকরি সমাপ্ত হলে পদটি চূড়ান্তভাবে বিলুপ্ত হবে।
এছাড়া, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে নন-এমপিও পদে নিয়োগপ্রাপ্তদেরও এই ‘উদ্বৃত্ত’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে, তবে শর্ত হচ্ছে, এই তথ্য ব্যানবেইস ডাটাবেসে যাচাইকৃত হতে হবে।
মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক সমন্বয়
একাডেমিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠান যদি কেবল নিম্ন-মাধ্যমিক স্তরে এমপিওভুক্ত হয়, তবে মাধ্যমিক স্তরে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সমন্বয় করা যাবে নিম্ন-মাধ্যমিক স্তরের খালি পদে। তবে এমন সমন্বয়ের পর মধ্যম স্তর এমপিওভুক্ত হলে পুনরায় সেই বিষয়ের জন্য নতুন শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ পদ খালি না হয়।
শিক্ষাগত যোগ্যতার নতুন ধারা
নতুন নীতিমালায় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা, অ্যাডভান্সড সার্টিফিকেট কোর্স ইন কম্পিউটার টেকনোলজি এবং ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার অপারেশন কোর্স যুক্ত করে নিয়োগের যোগ্যতা উন্নত করা হয়েছে। এর ফলে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বও বিবেচনায় আনা হয়েছে।
আবেদন ও পদোন্নতির নির্দেশনা
প্রধান শিক্ষক থেকে অধ্যক্ষ পদে আবেদন করতে হলে প্রার্থীর ইনডেক্সধারী অভিজ্ঞতা এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। যেমন, ইনডেক্সধারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কমপক্ষে ২ বছরের অভিজ্ঞতা এবং মোট ১৩ বছরের শিক্ষকতা অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সহকারী প্রধান শিক্ষক হলে এই সময় হবে ১৫ বছর।
এমপিও নীতিমালা ২০২৫ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি সুসংগঠিত ও স্বচ্ছ কাঠামো গঠনের অন্যতম মাইলফলক। এই নীতিমালা শিক্ষকদের মর্যাদা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে, যা শিক্ষার মানোন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস: বজ্রসহ বৃষ্টির শঙ্কা, তাপপ্রবাহে জেরবার উত্তরাঞ্চল
❓ FAQs: এমপিও নীতিমালা ২০২৫ সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্ন
১. এমপিও নীতিমালা ২০২৫ কবে থেকে কার্যকর?
২০২৫ সালের এপ্রিল মাস থেকে নতুন নীতিমালাটি কার্যকর হয়েছে।
২. প্রতি শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা কত হতে হবে?
প্রত্যেক শ্রেণিতে গড় শিক্ষার্থী সংখ্যা হবে ৫৫ জন।
৩. কয়টি শাখা অনুমোদিত?
প্রতিটি শ্রেণিতে সর্বোচ্চ তিনটি শাখা থাকবে—একটি মূল ও দুটি অতিরিক্ত।
৪. নতুন নিয়োগে কোন যোগ্যতা লাগবে?
নতুন নীতিমালায় স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রির পাশাপাশি আইটি বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
৫. উদ্বৃত্ত পদ কী?
যেসব পদ বিলুপ্ত হয়েছে কিন্তু এখনো কোনো শিক্ষক সেখানে কর্মরত, সেগুলো উদ্বৃত্ত পদ হিসেবে বিবেচিত।
৬. মাধ্যমিক শিক্ষক কীভাবে নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে সমন্বিত হবেন?
যদি কোনো মাধ্যমিক স্তর এমপিওভুক্ত না হয়, তবে শিক্ষককে একই বিষয়ে নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে সমন্বয় করা যাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।