জুমবাংলা ডেস্ক : অর্থবছরের মাঝপথে এসে ৫০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি খাতে। শুরুতে এ খাতে ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও এখন ভর্তুকির অঙ্ক বেড়ে ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকায় উঠছে। ঋণের শর্ত হিসাবে আইএমএফের পক্ষ থেকে ভর্তুকি কমিয়ে আনার চাপ থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকার সেটি আমলে নেয়নি। সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে সরকার জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। যুগান্তরের প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
সূত্রমতে, এলএনজি খাতে বরাদ্দ ভর্তুকি ছয় হাজার কোটি টাকার বাইরে অতিরিক্ত আরও ১০ হাজার কোটি টাকা চেয়েছিল জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। সে প্রস্তাব পর্যালোচনা করে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়। যা সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা অনুমোদন দিয়েছেন।
এর আগে গত অর্থবছরে এলএনজি আমদানিতে ভর্তুকি দেওয়া হয় তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিগত ৬ বছরে সরকার ৩১ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে এ খাতে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় কমছে। ফলে সার্বিক ভর্তুকির চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে অর্থ বিভাগ। এই ভর্তুকি বাড়াতে গিয়ে দুটি বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে অর্থ বিভাগ। অর্থ উপদেষ্টার কাছে অনুমোদন চেয়ে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়েছে ভর্তুকিতে নতুন অর্থ বরাদ্দ চলতি বাজেটের ঘাটতি বৃদ্ধি এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি (খাদ্য সংগ্রহ এবং ওএমএস) কার্যক্রমে আঘাত আনতে পারে।
এ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি জানান, জ্বালানি সংকট নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জে আছি। গ্যাস উত্তোলনও খুবই কম। বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেল, গ্যাস ও কয়লা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। যে কারণে ভর্তুকি কিছুটা বাড়ানো হচ্ছে। অর্থ উপদেষ্টার এ চ্যালেঞ্জের কথা উঠে আসছে এলএনজি আমদানিসংক্রান্ত জ্বালানি ও খনিজ বিভাগের প্রতিবেদন থেকেও। সম্প্রতি এ প্রতিবেদনটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয় জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে গ্যাসের চাহিদা মেটাতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ৫৬টি এবং স্পট মার্কেট থেকে ৫৯টিসহ মোট ১১৫টি এলএনজি কার্গো আমদানি করা হবে। এর মধ্যে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩০টি এবং স্পট মার্কেট থেকে ১৪টিসহ মোট ৪৪টি এলএনজির কার্গো আমদানি হয়েছে। এছাড়া জুনের মধ্যে আরও ৫৭টি এলএনজি কার্গো আমদানি করা হবে। এরপরও চলতি অর্থবছরে এলএনজির কার্গো আমদানিতে আর্থিক ঘাটতি দাঁড়াবে ১৬ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণে ১০ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে জ্বালানি ও খনিজ বিভাগ।
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বিদ্যমান আর্থিক সংকট মোকাবিলায় সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ সাধন কর্মসূচি পালন করছে। কম গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রকল্প ইতোমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে। অর্থ ব্যয়েও বড় ধরনের কাটছাঁট করা হচ্ছে। যে কারণে সীমিত পরিসরে ভর্তুকি বাড়াচ্ছে অর্থ বিভাগ।
এদিকে ভর্তুকি বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের এই ইস্যুতে দূরত্ব তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার দেওয়া ঋণের বিপরীতে আইএমএফ ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ দিয়ে আসছে। সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশে বাজেটের আকারের তুলনায় ভর্তুকির পরিমাণ বেশি। তারা মনে করছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও সারে ভর্তুকি কমানোর সুযোগ রয়েছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ করা হয় ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। আইএমএফ চায়, এ ভর্তুকি কমিয়ে ভবিষ্যতে একটা যৌক্তিক জায়গায় নিয়ে আসুক সরকার। সেজন্য কৌশল প্রণয়নের পাশাপাশি নীতি-পদক্ষেপ হাতে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
কিন্তু জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ পর্যালোচনা করে দেখেছে এলএনজি খাতে আইএমএফের এ শর্ত মানতে গেলে দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ চলতি বছর থেকে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলোর উত্তোলন কমবে। বিপরীতে দেশের ভেতর গ্যাস উৎপাদনে খনন কাজ শেষ করে যদি সাফল্য আসে তবেই গ্যাসের পরিমাণ বাড়বে। অন্যথায় বাড়বে না। সূত্রমতে, দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে গ্যাসের চাহিদা ঠিক রাখতেই শর্ত ভেঙে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
শুধু জ্বালানির ক্ষেত্রেই নয় ইতোমধ্যে বিদ্যুতেও ভর্তুকি বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকদের সব বকেয়া পরিশোধের পরিকল্পনা থেকে চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি প্রায় ৮৩ শতাংশ বাড়তে পারে। যা চূড়ান্ত হবে মার্চে। অপরদিকে আইএমএফ ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু সরকার দাম বাড়াতে রাজি হয়নি এবং উৎপাদন খরচ কমানোর বিষয়ে কমিটি করে দিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুসারে, বকেয়া পরিশোধের জন্য সংশোধিত বাজেটে অতিরিক্ত প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। এতে করে চলতি অর্থবছরের শেষে বিদ্যুতে মোট ভর্তুকি দাঁড়াবে ৬৬ হাজার কোটি টাকা। প্রাথমিকভাবে বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার কোটি টাকা।
প্রবাসীদের জন্য বড় সুখবর! রেমিট্যান্স প্রবাহ ধরে রাখতে নীতিমালায় ছাড়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।